‘কিছু লাগবে দাদা, একটু খেয়ে যান’

বরিশাল, জাতীয়

সিদ্দিকুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 10:31:26

‘কিছু লাগবে দাদা, একটু খেয়ে যান। ভালো মিষ্টি আছে, টক দধিও খেয়ে দেখতে পারেন। সন্দেশ আছে খুব কম দাম। এইয়া সব আমাগো নিজেগো হাতের তৈরি।’

বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বরিশালের স্বরুপকাঠী উপজেলার আটঘর বাজারের পুরনো একটি মিষ্টির দোকানে ঢুকতেই কথাগুলো বলছিলেন দোকানি কানাই লাল সাহা (৬০)।

বর্তমান আধুনিক পরিপাটি মিষ্টির দোকানের সামনে আটঘর বাজারের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কানাইয়ের মিষ্টির দোকান কিছুই না। তারপরেও তিন পুরুষের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আজও সদাব্যস্ত তিনি। অনেক ক্রেতা অতীত ঐতিহ্যের কারণে এখনও এখানে মিষ্টি কিনতে আসেন।

সরজমিনে দেখা যায়, পূর্বের সেই চিরাচরিত নিয়মে চারদিক খোলা আর উপরে টিনের ছাউনি দেয়া আটঘর বাজারের পুরানো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকানটি। দোকানে একটি ঘরে, ছোট ছোট টিনের বাস্কের উপরে নানা ধরনের মিষ্টির পসরা সাজিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ীরা।

সন্দেশ, ছানা, রসমালাই, নকুল দানা, বাতাসা, রসগোল্লা, তালমিছরি, দানাদার, টকদধি, মিষ্টি দধি, জিলাপীসহ আরো কত কি! শহুরে মিষ্টির দোকানের থেকে কোন অংশের কমতি নেই এই দোকানে। আর সব কিছুই তাদের নিজেদের হাতে তৈরি। তাছাড়া দাম অনুসারে প্রতিটি মিষ্টিজাত দ্রব্যের গুণগত মান ভালো।

কানাই লাল সাহার মতো তাদের বংশের অনেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত।  তার দোকানের সকল মিষ্টিজাত দ্রব্য তৈরি হয় ঝালকাঠির বাউকাঠি গ্রামের তাদের নিজ বাড়িতে। তার দোকানের পাশেই মিষ্টি বিক্রি করে চাচাতো ভাই সাম সাহা (৬৫) ও লিটন সাহা (৪৫)। তাদের প্রত্যেকেরই সুন্দর বাচনভঙ্গি, মিষ্টি কিনতে আসা সকল ক্রেতাদের মুগ্ধ করে।

এদিকে আধুনিক দোকানের তুলনায়, আটঘর বাজারের এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও কম নেই। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সী সকলেরই আনাগোনা থাকে এই মিষ্টির দোকানগুলো। তাছাড়া এই দোকান থেকে মিষ্টি ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, দোকানের পাশেই রাখা বেঞ্চিতে বসে যে কেউ মিষ্টির স্বাদও  গ্রহণ করতে পারবেন।

এসময় মিষ্টি ব্যবসায়ী সাম সাহা (৬৫) বার্তা২৪.কমকে জানান, বাপ-দাদারা এই বাজারে বেচাবিক্রি করতো। তাদের সেই ব্যবসায়, আগের মত করেই ধরে রাখছি। আর বেচাবিক্রিও ভালো হয় । তাছাড়া আটঘর এলাকায় এই দোকানের মিষ্টির খুব কদর রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, প্রতি গ্লাস টক দধি ২০ টাকা, রসগোল্লা প্রতি পিচ ১০ থেকে ১৫ টাকা, ছানা প্রতি পিচ ২০ টাকা, রসমালাই প্রতি পিচ ১৫ থেকে ২০ টাকা, সন্দেশ প্রতি কেজি ১০০ টাকা এবং প্রতি পিচ ৫ টাকা, নকুলদানা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, জিলাপী প্রতি কেজি ৬০ টাকা, শুকনা মিষ্টি প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৬০ টাকা, তালমিছরি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা ষার্টোধ্ব ছত্তার মিয়া জানান, আটঘর বাজারের এই মিষ্টির দোকানটি অনেক পুরানো। আশে পাশের এলাকায় এই দোকানের অনেক সুনাম রয়েছে। তাছাড়া এই এলাকায় নতুন কোন অতিথি আসলে এই দোকানেরই মিষ্টি নিয়েই তাদের আপ্যায়িত করানো হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর