ঘুরে আসুন চুয়াডাঙ্গার ফারুকের চায়না কমলার বাগানে

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 10:54:46

মন ভালো রাখতে ঘুরে আসতে পারেন চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চল নিধিকুন্ড গ্রামের ফারুকের চায়না কমলার বাগান থেকে। সবুজ পাতার ফাঁকে পাকা লাল আর গাঢ় হলুদ মিশ্রনে রংয়ের আভায় আপনার মনটাকে উদ্বলিত করে তুলবে। যে কেউই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠবে এই বাগান পরিদর্শনে। প্রায় প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে গোটা বাগান চত্বর।

সবুজ পাতার ফাঁকে পাকা লাল আর গাঢ় হলুদ মিশ্রনে রংয়ের আভায় কমলা। ছবি: বার্তা২৪.কম

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জীবননগর উপজেলার নিধিকুন্ড গ্রামের একসময়ে সবজির আবাদ করেতেন কৃষক ওমর ফারুক। বছর আটেক আগে সবজি চাষের পাশাপাশি অনাবাদি জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে তোলেন নার্সারি। যেখানে আলাদাভাবে করেছেন চায়না কমলার বাগানও। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বাগানের আকার ও পরিধি। বর্তমানে এই কমলার বাগানের কারণে বেশ পরিচিতিও লাভ করেছে ওমর ফারুকের খান নার্সারি। তবে এ চায়না কমলার গল্প শুনতেই অবাক করে দেয় আমাদের। তিনি বলেন, সাড়ে চার বছর আগে আমি খুলনায় এক বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে টবে চায়না কমলার চাষ দেখে সেগুলোর কলম করে আমার নার্সারিতে নিয়ে আসি। এক বিঘা জমিতে ১০০টি কমলা লেবুর চারা দিয়ে বাগান গড়ে তুলি। বাগানে কাজ করছে ১০-১৫ জন শ্রমিক। ভালো পরিচর্যার কারণে ফলনও ভালো হয়েছে। তবে বাগান থেকে বিনামূল্যে মানুষকে এই কমলা খাওয়ানো হয়। তাই এই কমলা লেবু বিক্রি করি না। তবে আমি চাই সারাদেশে এই কমলার গাছ ছড়িয়ে দেবো। তাই এখান থেকে কমলার চারা বিক্রি করে থাকি।

একসময়ে সবজির আবাদ করেতেন কৃষক ওমর ফারুক। ছবি: বার্তা২৪.কম

বাগান ঘুরে দেখা গেছে, হলুদ রঙে থোকায় থোকায় কমলা লেবুতে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান। যা দেখে যে কারোরই মন ভরে উঠবে। আর কমলা বাগানের জন্য বিখ্যাত ওমর ফারুকের খান নার্সারি দেখতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে দর্শনার্থীরা।

কুষ্টিয়া থেকে বাগান দেখতে আসা বিপুল হোসেন জানান, ‘বাগানে প্রতিটি গাছে কমলার ফলন দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। মিডিয়া দেখে আমি এই বাগানে এসেছি। বাগানের কমলা দেখে আমি মুগ্ধ৷ আমাদের দেশেও সম্ভব? এতো সুন্দর, মিষ্টি ও সুস্বাদু কমলা উৎপাদন। তাই নিজেও ছোট একটা কমলা বাগান করবো বলে বেশ কিছু চারা কিনলাম।’

মিরপুর থেকে আসা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমি বৃক্ষপ্রেমী। বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে আমার বাগানে। এখানকার কমলা বাগানের কথা শুনে দেখতে এসেছি। কয়েকটা চারাও কিনে নিলাম।’

ওমর ফারুকের বাগানে কাজ করা গোলাম নবী খান জানান, তাদের বাগানের যে কমলা উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারের যে কমলা পাওয়া যায় তার চেয়ে কিছুটা বড়। এই কমলা বাগানের খবর পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা কমলা ছুঁয়ে ছবি তুলতে আসছেন। আর প্রতিদিন দর্শনার্থী কিংবা চাষিরা এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

দর্শনার্থীরা কমলা ছুঁয়ে ছবি তুলতে আসছেন। ছবি: বার্তা২৪.কম

ফারুকের ছেলে আকাশ জানান, তাদের বাগানে প্রায় ৭ লাখ টাকার কমলা আছে। আমরা এবার এ কমলাগুলো বিক্রি করিনি। দর্শনার্থীরা আসছে তাদের অনেকের বাগান থেকে ছিড়ে কমলা খাওয়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা কমলা বাগান করতে আগ্রহী তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

কৃষক ফারুক খান জানান, এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত কমলা বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভাবে কমলা লেবুর উৎপাদন বাড়বে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত লেবু বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে। তাই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে দেশের বাইরে না গিয়ে তরুণ, বেকার এবং শিক্ষিত যুবকদের চায়না কমলার বাগান করার পরামর্শ দেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী হাসান জানান, কৃষক ওমর ফারুকের কমলার বাগানে তিনি একাধিকবার গিয়েছি। যেভাবে কমলা ধরে আছে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে বাগান দেখতে। ওই মাঠে গেলে মনে হচ্ছে একটা ছোট খাটো পর্যটন কেন্দ্র। তিনি বলেন, যে কমলা দেশে বর্তমানে চাষ হচ্ছে সেগুলোর চেয়ে এ কমলা স্বাদে অনেক ভালো। আর আমদানিকৃত কমলার চেয়ে এ কমলার রঙটাও আকর্ষণীয়। কৃষি অফিস তাকে সাধ্যমতো সাহযোগিতা করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর