করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর থেকে বিজ্ঞানীরা দিশাহারা হয়ে পড়েন এই ভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি চিকিৎসার নানা দিক নিয়ে। বিশ্বব্যাপী শুরু হয় টিকা ও ওষুধ নিয়ে নানা গবেষণা। এরইমধ্যে করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব দেখছে একের পর এক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাফল্য। পৃথিবীর ইতিহাসে খুব অল্প সময়ই ওষুধ প্রস্তুতকারী কয়েকটি কোম্পানি করোনার প্রতিষেধক টিকাও আবিষ্কার করেছে। তার প্রয়োগও শুরু হয়েছে কয়েকটি দেশে।
করোনার প্রার্দুভাবের পর থেকেই বাংলাদেশের চিকিৎসারাও এর চিকিৎসায় নানা গবেষণা চালাতে থাকেন। একদল চিকিৎসক কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় অ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল ওষুধ আইভারমেকটিন প্রয়োগে সাফল্যও দাবি করেছিলেন। এরপর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চলে আরও গবেষণা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইইসিডিডিআর,বি) আইভারমেকটিনের কার্যকারিতার ‘আশাব্যঞ্জক’বলে জানিয়েছে। করোনায় মৃদু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন একসঙ্গে প্রয়োগের তুলনায় শুধু আইভারমেকটিনের বড় ডোজ পাঁচ দিনব্যাপী প্রয়োগে অধিক কার্যকর ফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি।
আইভারমেকটিনের পরীক্ষামূলক এই গবেষণায় নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. তারেক আলম। তার সঙ্গে রয়েছেন সম্মান ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডাক্তার রবিউল মোর্শেদ। সম্প্রতি তারা আইভারমেকটিন নিয়ে আবার আলোচনায় এসেছেন। এবার বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের মধ্যে একটি সমীক্ষায় মাসে একবার শুধু আইভারমেকটিন (১২ এমজি) গ্রহণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের উপায় পেয়েছেন তারা। তাদের দাবি, এই ওষুধ করোনার ক্ষেত্রে অনেকটা প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করছে।
ছোট পরিসরের এই সমীক্ষার প্রতিবেদন গত ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশ পেয়েছে ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সে।’ জার্নালটিতে সমীক্ষার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
সমীক্ষার বিষয়ে অধ্যাপক তারেক আলম বলেন, আমরা হাসপাতালে চিকিৎসকদের দুটি ভাগে ভাগ করি। এক গ্রুপে ৬০ জন ডাক্তারকে আলাদা করে রেখেছিলাম কন্ট্রোল হিসেবে, যারা আইভারমেকটিন গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে আরেকটি গ্রুপের ৫৮ জনকে মাসে একবার করে ১২ এমজি ডোজের আইভারমেকটিন দিয়েছি চার মাস। পরে আমরা দেখতে পেয়েছি, প্রথম গ্রুপের (আইভারমেকটিন যাঁরা গ্রহণ করেননি) ৬০ জনের মধ্যে ৪৪ জন বা ৭৩.৩ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে যাঁরা আইভারমেকটিন গ্রহণ করেছেন সেই ৫৮ জনের মধ্যে মাত্র চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাও মৃদু লক্ষণযুক্ত। বাকি কেউ এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হননি।
তবে এটি ছোট একটি সমীক্ষা। এখন পরিকল্পনা আছে বড় আকারে গবেষণা করার। এর আগে চূড়ান্ত কোনো মতামতে পৌঁছানো যাবে না নীতিগতভাবে- বলে তিনি আরও যোগ করেন।