বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেনাপোল চেকপোস্টে দুই দেশের বৈঠক

, জাতীয়

আজিজুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2023-08-27 19:19:56

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে দুই দেশের বন্দরের কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার(২২ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট শূন্য রেখায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় দুই দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৭০০ ট্রাক পণ্য আমদানির চাহিদা থাকলে ভারত থেকে ঢুকছে মাত্র সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক।  রফতানিও ব্যাহত হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে ভারতীয় ট্রাক থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাস করে নেওয়ার কথা থাকলেও দিনের পর দিন ট্রাক আটকে থাকছে।

এছাড়া সীমান্তরক্ষী বিএসএফের বাধায় সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ সদস্যরা দুই পাশের বন্দরের কার্গো শাখায় প্রবেশ করতে না পেরে দ্রুত বাণিজ্য সম্প্রসারণ মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।  নিরাপত্তার নামে পণ্য পরিবহনের ট্রাকে সীমান্তরক্ষী বিএসএফের তল্লাশিতে হয়রানি বাড়ছে। অচিরে এসব চলমান সমস্যা সমাধান করতে না পারলে বাণিজ্যে আরো স্থাবিরতা নেমে আসবে। ফলে ব্যবসায়ীদের যেমন লোকশান বাড়বে তেমনি সরকারও হারাবে আরো বেশি রাজস্ব।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, দুই দেশের বন্দরের কর্মকর্তারা বাণিজ্য সহজিকরণে সংশিষ্টদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া দ্রুত সময়ে পণ্য খালাসে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের পক্ষে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার, সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম, বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমানসহ বাণিজ্যিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

ভারতের পক্ষে ছিলেন, পেট্রাপোল ল্যান্ডপোর্টের ম্যানেজার শুভজিত মন্ডল, রফতানি বিভাগের পরিচালক রাজস্ব কর্মকর্তা মিশ্র, পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চন্দ্র, বনগা গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি অরুণ সাহা প্রমুখ।

জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের প্রথম থেকে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। দেশে স্থলপথে যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হয় তার ৬০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি এবং রফতানি হয় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য। আমদানি পণ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসে। তবে সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য পরিচালনা স্বার্থে বেনাপোল বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পেট্রাপোল বন্দরেও রয়েছে নানান অভিযোগ। ফলে আমদানি কমে যাওয়ায় গত ৫ বছর ধরে এ পথে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আসছে না। এতে যেমন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব তেমনি ব্যবসায়ীরাও নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গত তিন বছর আগে ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি শেষে পরীক্ষামূলক একটি চালান এ পথে আমদানি হলেও কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যার কারণে এ পথে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হচ্ছে না।

চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বেনাপোল বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। চলতি বছরের  ৫ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র এক হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর