পুতুল বাড়ির মেয়ে তারা

খুলনা, জাতীয়

অনিক চক্রবর্তী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 20:58:41

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার নিভৃত পল্লী আঠারখাদা গ্রামের আবদুর রশীদের বাড়িটি পুতুলবাড়ি নামেই পরিচিত। রশীদের দুই পুতুলকন্যার কারণেই তাদের বাড়িটি এলাকায় পুতুলবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাবার প্রিয় দুই মেয়ে রুপা ও মিম। ২৯ বছরের রূপার উচ্চতা ৩৪ ইঞ্চি, আর ২০ বছরের মিমের উচ্চতা ৩৩ ইঞ্চি। খর্বকায় আকৃতির দু’বোনকে এলাকার লোকজন পুতুলকন্যা বলেই ডাকে।

বয়সে যুবতী হলেও স্বভাব-আচরণে তারা শিশু। দিনভর পাড়ার শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করেই তাদের সময় কাটে। রাতে ঘুমায় মায়ের গলা ধরে। পুতুল মেয়ে রূপা আর মিম কথা বলে তোতা পাখির মতো। কৌতূহলী মানুষ প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের দেখতে আসে। রুপা ও মিম খুবই লাজুক। অচেনা মানুষ দেখে খুব লজ্জা পায় ওরা।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আঠারখাদা গ্রামে পুতুল রূপা ও মিমের বাড়ি। বাবা আবদুর রশিদ একজন ক্ষুদ্র কৃষক। মা ফাতেমা খাতুন গৃহিণী। তাদের সংসারে তিন সন্তান। রূপা বড়, মিম ছোট।

প্রতিবেশীরা জানায়, রূপাকে ১০ থেকে ১৫ বছর আগে স্কুলে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে স্কুলে গেলেই অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে দেখাত চিড়িয়াখানার পশু দেখানোর মতো করে। শিক্ষকদের তা সামলাতে কষ্ট হতো। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার চেয়ে রূপাকে দেখার জন্যই মনোযোগী বেশি হতো। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় রূপাকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেয়া হয়। মিমের বেলায়ও তাই হয়েছে। তাছাড়া ওরা বুদ্ধিতে ৫ থেকে ৭ বছরের শিশুর মতো। পড়াশোনা ওদের ভালো লাগে না।

এদিকে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা বাজারঘাট কোথাও যেতে পারে না রূপা ও মিম। কৌতূহলী মানুষ ওদের দেখার জন্য ঘিরে ধরে।

আবদুর রশিদ জানান, জন্মের সময় তার মেয়েরা খুবই ছোট আকৃতির ছিল। বেঁচে থাকবে এ বিশ্বাস কারোরই ছিল না। দেশে বিদেশে অনেক নামীদামি ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ব্যাপারে সবাই নিরাশ করেছেন।

অনেকটা অভিমান নিয়েই বাবা রশীদ আরও বলেন, ওদের অস্বাভাবিক গঠনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর একযুগ আগে থেকেই মানুষ তাদের দেখতে আসে। আশা ছিল সরকারি উদ্যোগে তাদের জন্য কিছু করা যাবে। তবে তেমন কিছু হয়নি।

মা ফাতেমা খাতুন জানান, রূপা খুব অভিমানী। কেউ কিছু বললে ওর সহ্য হয় না। রেগে গেলে ঘরের এটা-ওটা আছাড় মারে। যা বায়না ধরে তাই দিতে হয়। দিনভর খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। গানের তালে তালে নাচে ওরা। অন্যদিকে ছোট মেয়ে মিমের রাগ-অভিমান কম। বাড়িতে এই আছে, এই নেই। খেলতে চলে যায় অন্যপাড়ায়। অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলায় মাতে সে। সেসব খেলনা সাজানো গোছানোতে তাদের সময় কাটে। খিদে পেলে দৌড়ে ছুটে যায় মায়ের কাছে।

কষ্ট নিয়ে মা ফাতেমা জানান, অন্য শিশুরা স্কুলে গেলেও রূপা আর মিমের ভাগ্যে তা জোটেনি। ফলে তাদের লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। শুধু অস্বাভাবিক শারীরিক গঠনের কারণেই দু’বোন রূপা ও মিমের লেখাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডিতেই থেমে গেছে।

জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদ জানান, এ বিষয়ে জানা নেই তার। তবে খর্বকায় আকৃতির রূপা ও মিমের জন্য সরকারি ভাবে কিছু করার চেষ্টা করবেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর