গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে অনিয়ম!

, জাতীয়

সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2023-09-01 04:00:53

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ফকিরের বিরুদ্ধে। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ঘর নির্মাণ ও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।

প্রাথমিকভাবে উপকরণের যাতায়াত খরচ নেওয়া হয়েছিল বলে স্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল বলে দাবি করেন অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ফকির। তবে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করার বিষয়টি তিনি নাকোচ করে দেন।

অন্যদিকে অভিযোগ উঠার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কোনো সত্যতা মেলেনি বলে জানান গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

সুবিধাভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলাতে মোট ৪৩০টি সরকারি ঘর নির্মাণ হবে। আর উজানচর ইউনিয়ন ৬০টি ঘরের বরাদ্দ পেয়েছে। এরমধ্যে প্রত্যন্ত দুর্গম চর মহিদাপুর এলাকায় গৃহহীন ২৬টি পরিবার রয়েছে।

এসব গৃহ নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরাতন ইটের নিম্নমানের খোয়া, পুরাতন রড, কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ঘর তৈরির কথা থাকলেও ইট, বালু, কাঠসহ নির্মাণ সামগ্রী বাড়িতে নিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাও দিতে হচ্ছে তাদের।

১০ জানুয়ারির মধ্যে ঘর নির্মাণ সম্পূর্ণ করে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অনেক বাড়িতেই পৌঁছায়নি গৃহ নির্মাণ সামগ্রী। ফলে অনিশ্চিত নির্দিষ্ট সময়ে গৃহনির্মাণ।

নিম্নমানের ইটের খোয়া

একাধিক সুবিধাভোগী অভিযোগ করেন, ঘরের নির্মাণ সামগ্রী চর মহিদাপুর এলাকায় নিতে তাদেরকে পরিবহন খরচ বাবদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দিতে হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকা। যারা টাকা দিয়েছেন তাদের ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বাকিদের মালামাল এখনো পৌঁছানো হয়নি। মালামাল পরিবহনের টাকা পরিশোধ না করলে তাদের ঘর বাতিল হয়ে যাবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ফকির বহু বছরের পুরাতন কয়েকটি স্কুল ঘর নিলামে কিনে সেই ঘরের অতি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে গৃহহীনদের নতুন ঘর নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত করছেন।

চেয়ারম্যানের বাড়িতেই পুরনো ইট ও ইটের খোয়া এবং পুরনো রড দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গৃহহীনদের ঘরের ভিম ও অন্যান্য গৃহ নির্মাণ সামগ্রী। স্তুপ করে রাখা হয়েছে বহু পুরাতন ও নিম্নমানের ইট এবং রড।

অভিযুক্ত উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ফকির বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ঘর নির্মাণের জন্য উপকরণ সামগ্রীবহনকৃত যানবাহন যে পর্যন্ত যেতে পারবে সেখানেই উপকরণ নামানো হবে। তারপর সেখান থেকে সুবিধাভোগীদেরকে নিজ খরচে ঘর নির্মাণের কাছে মালামাল নিয়ে যেতে হবে। অনেকেই নিয়েছেন। তবে বিষয়টি মানবিক বলে পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে উপকরণগুলো আমরাই নিজ খরচে পৌঁছে দিব। আর যারা এরমধ্যে নিজের খরচে নিয়ে গিয়েছেন আমি তাদের টাকা দিয়ে দিব।

তবে ঘর নির্মাণে নিম্নমানের কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করে বলেন, নিলামে যে পুরাতন স্কুল কেনা হয়েছে সেই স্কুলের মালামাল আমি আমার অন্য ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করবো। এগুলো দিয়ে ঘর নির্মাণ করছি না।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, যারা ঘর পেয়েছেন তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের টাকা গ্রহণ করা যাবে না। অভিযোগ উঠার পর রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করেছি। এ ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়া পুরাতন কোনো মালামাল ব্যবহার না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর