বদলে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামীণ জীবন

রংপুর, জাতীয়

নাহিদ রেজা, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 09:29:30

ঠাকুরগাঁও: প্রযুক্তি সম্পর্কে গ্রামের মানুষগুলো কয়েক বছর আগেও জানত না কিছুই। আজ তারাও এগিয়ে গেছে এই প্রযুক্তির হাত ধরে।

বলছিলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কথা। এখানে প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল সেন্টার। গ্রামীণ জনপদে শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, হাট-বাজার, আইনি পরামর্শ, বিদ্যুৎ বিল প্রদান, ছেলেমেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর সন্ধানসহ সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যাচ্ছে তৃণমূলের এই ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে।

বর্তমানে ওই উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে প্রায় সব কার্যক্রমই হয়ে উঠেছে অনলাইন কেন্দ্রিক। এতে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে তথ্যসেবা। যার কারণে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার ধরন। এক কথায় ঠাকুরগাঁওয়ের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গ্রামীণ জনপদে হয়ে উঠেছে প্রযুক্তির বাতিঘর।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া ভিশন ২১-এর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র নামে এই স্বপ্নবীজ বপন করা হয়। সম্প্রতি এটিকে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার নামকরণ করা হয়।

২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সকল ইউনিয়নে এই ডিজিটাল সেন্টারগুলোর উদ্বোধন করা হয়। এতে শুরুতে ১৩ ধরনের সেবা দেয়া হলেও এখন সেই পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ে ৫২টি ইউনিয়নেই রয়েছে এই ডিজিটাল সেন্টারের সেবা।

সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, দেশের অন্যান্য সেন্টারের মতো এখানে ভূমি সংক্রান্ত সকল প্রকার নথির নকল প্রাপ্তির আবেদন, নতুন-পুরনো বিদ্যুৎ বিল প্রদান, বিদ্যুৎ সংযোগ বা বৈদ্যুতিক মিটারের আবেদন, মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার কম্পোজ, ফটোকপি, লেমিনেটিং, ফ্লেক্সিলোড, কৃষি তথ্য সেবা, জন্ম নিবন্ধন বা মৃত্যু সনদ, ই-মেইল, ইন্টারনেট, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন পূরণ কিংবা চাকরির আবেদন, সরকারি-বেসরকারি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের খবর সংগ্রহ, পাসপোর্টের ফরম পূরণ, বিদেশ যাওয়ার জন্য নিবন্ধন, বিদেশের ভিসা আবেদন এবং ভিসা যাচাই, ছবি তোলা, ভিডিও কল করা, স্ক্যান করা, যাবতীয় প্রিন্টিংয়ের কাজ ও বিভিন্ন ডিজাইনের কাজসহ যাবতীয় কাজ করা যায়।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামের সহজ-সরল সাধারণ মানুষদের মধ্যে নিরন্তর তথ্যপ্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা। এতে গ্রামীণ জনপদের সহজ-সরল মানুষ যেমন উপকৃত হচ্ছেন তেমনি বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। লাভবান হচ্ছে উদ্যোক্তারাও।

কথা হয় সালন্দর ইউনিয়নের উদ্যোক্তা ফরহাদ হোসেন রতন ও ফজুলাতুন নেছার সঙ্গে। তারা বলেন,‘এই ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি আমরা। আগে বেকার বসে থাকতাম। এখন এখানে কাজ করি। এখানে কাজ করে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের এখানে সকল ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। কেউ নিরাশ হয়ে ফিরে যায় না। প্রতিটি ইউনিয়নেই একজন পুরুষ এবং একজন নারী উদ্যোক্তা সেন্টার পরিচালনা করেন।’

জামালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন,‘একটা সময় ছিল যে সময় জন্মনিবন্ধনসহ অনেক কাগজই পাওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু ডিজিটাল সেন্টার হওয়ার কারণে সহজেই সব কিছু নিতে পাচ্ছি। আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও সালন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম মুকুল জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামের সহজ সরল মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে। সরকারের এমন মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বর্তমান সরকার প্রযুক্তি বান্ধব সরকার। সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে সেবা প্রদানের জন্যই প্রতিটি ইউনিয়নে এই ডিজিটাল সেবা প্রদান চালু করা হয়েছে। যার ফলে উপকৃত হচ্ছে গ্রাম পর্যায়ের মানুষ ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর