মেহেরপুর: নিয়োগ পাচ্ছে না বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শূন্য পদের সঠিক তালিকা না পাঠানোর কারণে ঝুলে আছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। দ্রুত সঠিক তালিকা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এন.টি.আর.সি.এ) কাছে পাঠানোর দাবিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিচ্ছে মেহেরপুর জেলার চাকরি প্রত্যাশীরা।
জানা গেছে, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ এখন সরকারের হাতে। এর আগে ম্যানেজিং কমিটির হাতে ছিল। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এন.টি.আর.সি.এ) বিশেষ পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদে এখন এই তালিকাধারী বা নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ দিচ্ছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবৎ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষকদের শূন্য পদের তালিকা এন.টি.আর.সিতে না পাঠানোর কারণে নিয়োগ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে চাকরি প্রত্যাশীরা।
এন.টি.আর.সির নিবন্ধনপ্রাপ্ত মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের আব্দুল জব্বার ও গোপালপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালে জেলায় মাধ্যমিকে ৪১টি ও কলেজে ১২টি শূন্য পদ ছিল বলে প্রতিষ্ঠান থেকে এন.টি.আর.সিতে তথ্য দেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত আর কোনো তালিকা পাঠায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। গত ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তালিকা পাঠানোর জন্য সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় বেঁধে দেয় এন.টি.আর.সি। কিন্তু তালিকা পেতে বিলম্ব হওয়ায় সময় বৃদ্ধি করে চলতি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত পুনরায় সময় নির্ধারণ করে। কিন্তু তারা জানতে পারেন সঠিক তালিকা দেয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ও কলেজ গভর্নিং বডির হাতে শিক্ষক নিয়োগ ক্ষমতা ফিরে আসতে পারে বলে শিক্ষা বিভাগে গুঞ্জন রয়েছে। এ কারণে অনেক শিক্ষক তালিকা দিতে বিলম্ব করছে। অপরদিকে শূন্য পদের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করে মিথ্যা তথ্যও পাঠানো হচ্ছে। এতে শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা নিয়োগ বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তালিকা পাঠানোর জন্য নিবন্ধনধারীরা জেলা প্রশাসক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। নির্ধারিত সময় যেন পার না হয় সে বিষয়ে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন তারা।
নিবন্ধনধারী পিরোজপুর গ্রামের ওয়াহেদ্দুজ্জামান ও টুঙ্গি গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি নির্দেশও দিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সহযোগিতা না করার কারণে এবারো কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না।’
নিবন্ধনধারী কয়েকজন জানান, এন.টি.আর.সির অধীন নিবন্ধন নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অবশ্যই যুগান্তকারী পদপক্ষেপ। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই কেবল শিক্ষকতা করার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। কবে নিয়োগ হবে সে আশায় বসে থেকে অন্য চাকরির সুযোগও হাতছাড়া হচ্ছে। তাছাড়া নিয়োগ পরীক্ষার চেয়েও কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিবন্ধন পাওয়ায় চাকরির আশাতো করা যেতেই পারে। দ্রুত নিয়োগ না দিলে অনেকের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের প্রকৃত তালিকা এন.টি.আর.সিতে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একটি সূত্রে জানা গেছে, এন.টি.আর.সি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলাদা আলাদা চিঠি দিয়ে তালিকা চেয়েছে। তালিকা পাঠানোর জন্য শিক্ষা অফিস তাগাদা দিচ্ছে। এর বেশি কিছু করার নেই শিক্ষা অফিসারদের। কারণ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই চলে ম্যানেজিং কমিটির নিয়ন্ত্রণে।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাসার জানান, অসাধু কিছু মানুষতো সবখানেই থাকে। যার ফলে প্রকৃত তালিকা হয় না। তবে এবার যে তালিকা যাচ্ছে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে। এন.টি.আর.সির বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই তালিকা পাঠাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।