স্ত্রী-সন্তান কেউ খোঁজ নেয় না, অসহায় বৃদ্ধের করুণ মৃত্যু

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 02:03:13

দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল রাজু মিয়ার। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন। ছেলের লেখাপড়া ও মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন রাজু। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। স্ত্রী অভিমান করে চলে যান বাবার বাড়িতে। আর ছেলে-মেয়েও খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করে দেন। বৃদ্ধ বয়সে নিরূপায় হয়ে একটি রুম ভাড়া নিয়ে স্ত্রী-সন্তান ছাড়া একা থাকতে শুরু করেন রাজু মিয়া।

শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে সেই রাজু মিয়া (৫৪)-কে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ভাড়া দেয়া একটি বাসার আম গাছের সাথে ঝুলন্ত দেখতে পান তার প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশে খবর দিলে ওই বৃদ্ধের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রংপুর সদরের সদ্যপুস্করণী ইউনিয়নের পালিচড়া বাজার এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। সদর কোতয়ালী থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, নিহত রাজু মিয়া স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান এর বাসায় চার আগে ভাড়া উঠেন। তার গ্রামের বাড়ি পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুরের উপজেলার পাইকারহাট এলাকায়। তার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে।

রাজু মিয়ার খালাতো ভাই সাগর মিয়া জানান, এক  ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল রাজু মিয়ার। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন। ছেলের লেখাপড়া ও মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন রাজু। এনিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। স্ত্রী অভিমান করে তার বাবার বাড়ি পীরগাছা উপজেলার কদমতলীতে চলে যান।

সন্তানেরাও রাজুর খোঁজ খবর নেয়া বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় চার মাস আগে সদ্যপুস্করণী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানের বাসার একটি রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন রাজু। দিন-রাতে তার কাছেই খেতেন। প্রতি মাসে রুম ভাড়ার টাকা রাজু মিয়ার বোনরা পাঠাতেন বলেও জানান তার খালাতো ভাই সাগর মিয়া।

এদিকে বাসার মালিক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, চারমাস আগে তার কাছে রাজু মিয়া একটি রুম ভাড়া নেন রুম। প্রতি মাসে ৭'শ টাকা করে ভাড়া দিতেন। মানুষ হিসেবে সহজ সরল ছিলেন রাজু। পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। শুক্রবার মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়েছেন। কিন্তু সকালে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পারি তার মৃত্যুর বিষয়টি।

সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে ময়না তদন্তের জন্য নিহতের মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর