মৃত্যুর আগে বলে গেলেন ঘাতকদের নাম

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2023-08-21 03:53:09

মুখে অক্সিজেন মাস্ক। বুকের নিচের অংশটা সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছিলেন সমানে। এর মধ্যেই একজনের প্রশ্নের জবাবে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে যান-‘আমাকে ধরে দুজন এসে তিন দিক থেকে পাত পাত (একের পর এক) ছুরি মেরে দেন। ছুরিকাঘাত করেন বাবু আকবর ও সাহাবু।’ এভাবেই মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিজের ঘাতকদের নাম এভাবেই বলে গেছেন-ছাত্রলীগ কর্মী আশিকুর রহমান রোহিত (১৮)।

শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যুর পর ভাইরাল হয়েছে ১ মিনিট ২২ সেকেন্ডের সেই ভিডিও।

৮ জানুয়ারি বিকেলে নগরের বাকলিয়া থানার দেওয়ানবাজার ভরা পুকুরপাড়সংলগ্ন কেডিএস গলির ভেতরে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা হয়। ৭ দিনের নিরন্তর যুদ্ধের পর চিরদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছে এই কলেজছাত্রের প্রাণ।

পরিবারের দাবি, মাদকের প্রতিবাদ করায় রোহিতকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এই খুনের পেছনে পূর্ববিরোধও থাকতে পারে। তবে রোহিত মৃত্যুর আগে সেই ভিডিওতে বলেছেন, ‘আমার ভাই নাজিমকে মহিউদ্দিন গুলি করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। আমি মহিউদ্দিনকে ধরতে পুলিশকে হেল্প করেছি। তাই ছুরিকাঘাত করেছে বাবু ও সাহাবু।’ এই বাবু ও সাহাবু মহিউদ্দিনের হয়ে কাজ করেন। রোহিতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সড়কে নেমে আসেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা নগরীর চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেন। তাঁরা সড়ক অবরোধ করে রোহিত হত্যার বিচার চান।

আশিকুর চট্টগ্রাম নগরের ওমর গণি এমইএস কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। চকবাজারের মা মণি ক্লাব-নামের একটি ক্রীড়া সংগঠনের সদস্য ছিলেন তিনি।

রোহিতের দাবির প্রমাণ মেলে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বক্তব্যেও। তাঁরা জানান, যুবলীগ নামধারী স্থানীয় মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে সাহাবু ওরফে কালা সাহাবু তাঁর হাতে থাকা ছুরি দিয়ে রোহিতের পেটে আঘাত করেন। তাঁদের সঙ্গে থাকা মো. বাবুও একইভাবে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় লোকজন জড়ো হয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় রোহিতকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ছোট ভাইয়ের ওপর হামলার ঘটনায় ৯ জানুয়ারি বড় ভাই জাহিদুর রহমান বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় মহিউদ্দিন, সাহাবু ও বাবুকে আসামি করা হয়। তবে আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

জাহিদুর রহমান দাবি করেন তার ভাইয়ের ওপর হামলাকারীরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। রোহিত তাঁর ক্লাবের পক্ষ থেকে এলাকায় মাদকবিরোধী পোস্টার-লিফলেট সাঁটালে তাঁরা ক্ষুব্ধ হন। এরপর ৫ জানুয়ারি আসামিরা তা ছিঁড়ে ফেলেন। এর প্রতিবাদ করায় খুনের উদ্দেশে রোহিতের ওপর হামলা করা হয়।

জাহিদুর জানান তিনি রাজমিস্ত্রির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। এর সঙ্গে তাঁর ইট-বালুও সরবরাহ করেন। ভাইয়ের ব্যবসার সঙ্গে রোহিতও যুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে মহিউদ্দিনেরও একই ব্যবসা আছে। তা নিয়ে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

তবে রোহিত সেই ভিডিওতে বলে গিয়েছেন, নৌকার মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের গণসংযোগ থেকে ফেরার পথেই তাঁকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে বলে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আসামিদের ধরতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। হত্যার পেছনের সম্ভাব্য সব কারণ যাচাই করা হচ্ছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর