ঘটি গরমের আরেক নাম ‘মিসকল’

খুলনা, জাতীয়

এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 15:53:56

কুষ্টিয়া: নাম তার মন্টু মিয়া। বয়স পঞ্চাশের উপরে। সেই মন্টু মিয়া এখন ঘটি গরমওয়ালী বা ‘মিসকল’ নামেই পরিচিত।

মন্টু মিয়ার বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের স্বরুপদহ গ্রামে। আড়াই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই ঘটিগরম বিক্রি করেন।‘মিসকল’ বলে ডাকতেই কাঁধে ঝোলানো ঝুড়ি নিয়ে ছুটে চলে আসেন মন্টু মিয়া।

প্রথমে একটু করে হাতের উপরে দেওয়া মানেই ‘মিসকল’। আর সেটুকু মুখে দিয়ে যদি ভালো লাগে তখন ৫-১০ কিংবা ২০ টাকার পরিমাণ দিতে বললেই নাকি ‘কল’ চলে আসে। অর্থাৎ ক্রেতার কাছে তখন কাগজের ঠোঙায় ভর্তি করে ঘটি গরম দেন তিনি।

বিকেল থেকে সন্ধ্যা আবার কখনো রাত পর্যন্ত তার দেখা মেলে কুষ্টিয়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গড়াই নদীর শেখ রাসেল সেতুর উপরে।

ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মাঝে মাঝেই প্রচলিত কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে অনবরত কথা বলতে থাকেন। এ জন্য তিনি আলাদাভাবে পোশাক পরা কিংবা সাজসজ্জা করেন না। একেবারেই সাদামাটা মানুষের মতো লুঙ্গি আর হাফ শার্ট পরেই ঘটিগরম বিক্রি করেন তিনি।

এদিকে বাপ-দাদার সময় থেকেই বাড়িতে লুঙ্গি, গামছা তৈরির কাজ করেন মন্টু মিয়া। পাশাপাশি একটু বাড়তি আয়ের জন্য এ ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

তিনি জানান, গত ৩০ বছর ধরে পোড়াদহ ও কুষ্টিয়া শহর ঘুরে ঘুরে ঘটি গরম ভাজা বিক্রি করছেন তিনি। বাড়িতে লুঙ্গি, গামছার কাজ শেষে বিকেলে পোড়াদহ থেকে ট্রেনে কুষ্টিয়ায় আসেন। ঘটিগরম বিক্রি শেষে আবার রাত ৯-১০টার মধ্যে বাড়িতে ফিরে যান।

ঘটি গরম বা মিসকল ভাজার উপকরণ হচ্ছে- চানাচুর, চিড়া ভাজা, পেয়াজ আর রসুন ভাজা। কাগজের ঠোঙায় ৫-১০ আবার ২০ টাকাও বিক্রি করা হয় এই ঘটি গরম।

মন্টু মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘এক সময় সকাল থেকে বিকেল অবধি শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মার্কেটে এই ঘটি গরম বিক্রি করতাম। কিন্তু বছর খানেক হল আর সকালে বের হই না। কারণ বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এই ব্রিজে অনেক লোকজনের সমাগম থাকে। তাই অল্প সময়েই আমার ঘটি গরম শেষ হয়ে যায়। অবশ্য এর জন্য আমাকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ব্রিজের প্রায় এক কিলোমিটার ৫-৭ বার পায়ে হেঁটে হেঁটে বেড়াতে হয়।’

তিনি বলেন,‘বিকেলে এসে রাত পর্যন্ত ঘটি গরম বিক্রি করে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা লাভ থাকে। সারা বছরই বাড়ির কাজের পাশাপাশি এই ঘটি গরম বিক্রি করি। এ কাজের জন্য আমার স্ত্রী অনেক সহযোগিতা করে। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভালো আছি।’

স্থানীয় কনক রেজা ও সোহানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, দিন শেষে প্রায়ই এই ব্রিজের উপর আসা হয়। বেশ ভালো লাগে। শহরে বিনোদন কেন্দ্র তেমন না থাকায় এই ব্রিজের উপরে অনেক মানুষ আসে। এখানে আসলেই মন্টু মিয়ার সঙ্গে দেখা হয়।‘মিসকল’ বলতেই ছুটে এসে হাতের মুঠোয় ঘটি গরম দেয়। শুধু আমাকেই নয়, ব্রিজে দাঁড়ানো অন্যরা মিসকল বলে ডাকলেই তাদের হাতের মুঠোও একটু করে ঘটি গরম দেন তিনি। এরপর তারা সেই ঘটি গরম কিনে খায়।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর