প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাব বাঁচতে পারে সেটাই লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 13:05:22

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে সত্যিই আমার জন্য একটা আনন্দের দিন। কারণ এদেশে যারা সব থেকে বঞ্চিত মানুষ যাদের কোন ঠিকানা ছিল না, ঘরবাড়ি নেই, আজকে তাদেরকে অন্তত একটা ঠিকানা, মাথা গোজার ঠাঁই করে দিতে পারছি। মুজিববর্ষে অনেক কর্মসূচি করতে পারি নাই। এটা সবচেয়ে বড় উৎসব যে গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষকে ঘর দিতে পারলাম এর থেকে বড় উৎসব বাংলাদেশে হতে পারে না। তার কারণ এদেশের মানুষের জন্যই কিন্তু আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪৯২টি উপজেলার ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পাকা ঘরসহ বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। তাদের জীবন যেন উন্নত হয়, বিশ্ব দরবারে আমরা বাঙালি হিসেবে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলতি পারি সেটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, এদেশের মানুষের জন্যই কিন্তু আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, তিনি কিন্তু আমাদের কথাও কখনো চিন্তা করেন নাই, চিন্তা করেছেন বাংলার মানুষের কথা। যে মানুষগুলি অন্ন জোগাতে পারত না, একবেলা খেতে পারত না। যাদের কোন থাকার ঘর ছিল না রোগের চিকিৎসা পেত না ধুকে ধুকে যাদের মরতে হতো।

জীবন উৎসর্গ করেছেন আমার বাবা। কখনো নিজের জন্য চিন্তা করেন নাই, নিজে কি পেলেন না পেলেন সেটা নিয়ে চিন্তা করেন নাই, এদেশের মানুষের কথাই চিন্তা করেছেন। সাধারণ মানুষের ঘর করে দেওয়ার চিন্তাটা তিনিই করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সরকার গঠন করেই আমাদের লক্ষ্য ছিল সব থেকে আগে যেটা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার। সেটা হচ্ছে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ, গরিব মানুষ, গ্রামের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরে থাকা মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং বাংলাদেশকে দারিদ্র মুক্ত করা। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিলাম। প্রত্যেকরে একটা ঘরের মালিক করে দেওয়া। একেবারে নিঃস্ব যারা ভূমিহীন যারা তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেওয়ার প্রকল্প করে দিলাম।

বস্তিবাসীদের জন্য ঘরে ফেরা কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্তিবাসীরা নিজ গ্রামে ফিরে গেলে ৬ মাস বিনা পয়সায় খাবার পাবে, বাচ্চাদের স্কুলে দিতে পারবে, বিনা পয়সায় একটা ঘর করে দেব আর সেই সাথে টাকা দেব তারা যেন কাজ কর্ম করে ব্যবসা বাণিজ্য করে চলতে পারে। সেই ব্যবস্থা নিয়ে ঘরে ফেরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করলাম। আমরা গৃহায়ন তহবিল করলাম। এই গৃহায়ন তহবিল থেকে এনজিওদের হাতে টাকা দিলাম যে তারা যেন আমাদের গৃহহীন মানুষদের ঘর করে দেয়। এনজিওরা ২৮ হাজার পরিবারকে এই ঘর করে দিয়েছিল। প্রায় ২০ হাজারের মতো বস্তিবাসী নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল এবং ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১১ হাজার ভবন তৈরি করলাম ৪ হাজার চালু করে দিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি খালেদা জিয়া এসে এই কাজগুলো প্রায় বন্ধ করে দিল। সত্যি কথা বলতে ২০০১-২০০৮ আমাদের জন্য সত্যি একটা অন্ধকার যুগ। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস সে সময় সৃষ্টি হলো যার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা হল। বন্দি হয়ে গেলাম আমি। তারপরেও আমি আশা ছাড়িনি যে আল্লাহ একদিন সময় দেবেন এদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারব।

তিনি বলেন, আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন শুরু করেছি ২০২০ সাল থেকে ২০২১ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অর্থাৎ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। জাতির পিতার জন্মের শতবর্ষ আর স্বাধীনতার ৫০ বছর আমরা একই সাথে পালন করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাস সারা বিশ্ব স্থবির। আমার খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল নিজে দাঁড়িয়ে আপনাদের হাতে জমির দলিল তুলে দেই। কিন্তু সেটা পারলাম না করোনার কারণে।  আমি জানি না পৃথিবীর কোন দেশে কখনো অথবা আমাদের দেশেও কোন সরকার এতো দ্রুত এতগুলি ঘর করে দিয়েছে। আমরা ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর করে দিয়েছি। সেই সাথে ব্যারাক হাউজের মাধ্যমে ৩ লাখ ২০ হাজার ইতিমধ্যে দিয়েছি। আজকেও ব্যারাক হাউজের মাধ্যমে দিচ্ছি ৩ হাজার ৭১৫টা। এত অল্প সময়ের মধ্যে এই কাজ করা সহজ কথা নয়। সকলের সম্মিলিত প্রয়াস যার কারণে এতো বড় অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের কোন শ্রেণির মানুষ বাদ যাচ্ছে না। বেদে শ্রেণির মানুষের জন্য ঘর করে দিচ্ছি, তাদের বাসস্থনের ব্যবস্থা করেছি হিজরাদের স্বীকৃতি দিয়েছি তাদেরকেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা দলিত শ্রেণি বা হরিজন শ্রেণি তাদের জন্য ভালো উচ্চ মানের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। এভাবে প্রত্যেক শ্রেণির মানুষ চা শ্রমিকদের জন্য করে দিচ্ছি। প্রত্যেক শ্রেণির মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি যেন সাবই সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্য একটি মানুষও ঠিকানা বিহীন থাকবে না। গৃহহারা থাকবে না, যতটুক পারি। হয়তো সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে তাই সীমিত আকারে করে দিচ্ছি। যা হোক একটা ঠিকানা আমি সমস্ত মানুষের জন্য করে দেব। আমি বিশ্বাস করি যখন এই মানুষগুলি ঘরে থাকবে। আমার বাবা মা যারা সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছে দেশের জন্য তাদের আত্মা শান্তি পাবে লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তাদের আত্মা শান্তি পাবে। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই ছিল আমার বাবা একমাত্র লক্ষ্য। কাজেই সব থেকে খুশি যে এত অল্প সময়ে এতগুলো পরিবারকে একটা ঠিকানা দিতে পেরেছি।

তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে এই মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে কোন লোক গৃহহারা থাকবে না। মুজিববর্ষে অনেক কর্মসূচি করতে পারি নাই। আমাদের এটা বড় উৎসব যে গৃহহীন ভূমিহীন মানুষকে ঘর দিতে পারলাম এর থেকে বড় উৎসব বাংলাদেশে হতে পারে না। এদেশটাকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে তাদের জীবন যেন উন্নত হয়, বিশ্ব দরবারে আমরা বাঙালি হিসেবে মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে চলতি পারি সেটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর