আমি যখন দেশে ফিরি থাকার ঘরও ছিল না: প্রধানমন্ত্রী

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 07:57:25

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সব পরিকল্পনা করেছিলেন। সে কারণে ১৯৭৫ সালে আমাদের পুরো পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শুধু আমি আর আমার ছোট বোন সেসময় বিদেশে ছিলাম সে কারণে বেঁচে গিয়েছিলাম। এরপর দীর্ঘ ৬ বছর দেশে আসতে পারিনি। কারণ সে সময় যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল বিশেষ করে জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা দখল করে তখন থেকে দেশে আসতেই দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ কি পেয়েছে অনেকে গাল ভরে কথা বলে গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকারটা কি? একটা সামরিক শাসকের ক্ষমতা দখল করে একদিন ঘোষণা দিল যে আজকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম, আর তারপরেও সেটা গণতন্ত্র হয়ে গেল?

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪৯২টি উপজেলার ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পাকা ঘরসহ বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনকি আমার ছোট বোনের পাসপোর্ট পর্যন্ত রিনিউ করতে দেয় নাই, যাতে পাসপোর্ট নিয়ে সে আসতে না পারে। এই অবস্থায় আমাদের ৬ বছর কাটাতে হয় বাইরে। এরপর আমাদের আওয়ামী লীগ আমার অবর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব দেয়, শুধু মানুষের কথা ভেবে মানুষের শক্তি নিয়েই দেশে ফিরি। আমার কেউ ছিল না, আমার কোন থাকার ঘরও নাই। আমি কোথায় গিয়ে উঠবো তাও আমি জানি না। আমি কিভাবে চলব তাও আমি জানি না। কিন্তু আমার কেবলই একটা কথা মনে হচ্ছিল যে আমাকে যেতে হবে। যেতে হবে এই কারণে যে সামরিক শাসক দিয়ে নিষ্পেষিত হচ্ছে আমার দেশের মানুষ, তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তাদের জন্য কাজ করতে হবে। আর এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। যা আমার বাবা চেয়েছিলেন। এবং সেই একটি আদর্শ সামনে নিয়েই আমি ফিরে আসি।

তিনি বলেন, দেশে ফিরে আমি কখনো আমার ছোট ফুফুর বাড়ি কখনো মেঝো ফুফুর বাড়ি এরকমভাবে দিন কাটাই। কিন্তু আমার লক্ষ্য একটাই সামনে ছিল যে আমি কি পেলাম না পেলাম সেটা বড় কথা নয় কিন্তু দেশের মানুষের জন্য কতটুক কি করব। সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখেছি। জাতির পিতা তো সব পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তিনি একটা কথাই বলেছিলেন ‘আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায় বস্ত্র পায় উন্নত জীবন পায়।’ বঙ্গবন্ধু যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সেটা যদি বাস্তবায়ন করতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষ বহু আগেই উন্নত জীবন পেত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যখনই তিনি পরিকল্পনা নিলেন তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করল। আর সেই হত্যা শুধু একজন নয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে যারা ছিলেন তাদের সবাইকে হত্যা করেছে সেই সাথে আমার মেঝো ফুফু, সেঝো ফুফুর বাড়ি আক্রমণ করেছে ছোট ফুফুর বাড়ির প্রত্যেকটা পরিবারের সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এরপর কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪ নেতা হত্যা।

বাংলাদেশের মানুষ কি পেয়েছে? অনেকে গাল ভরে কথা বলে গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকারটা কি? একটা সামরিক শাসকের ক্ষমতা দখল করে একদিন ঘোষণা দিল যে আজকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম, আর তারপরেও সেটা গণতন্ত্র হয়ে গেল? হ্যাঁ অনেকগুলি রাজনৈতিক দল করার সুযোগ করে দিল কিন্তু মানুষকে দুর্নীতি করা মানি লন্ডারিং করা, ব্যাংকে ঋণ খেলাপী করা, টাকা ব্যাংক থেকে ছাপিয়ে নিয়ে এসে সেগুলি ছড়িয়ে দিয়ে মানি ইজ নো প্রবলেম সেই কথা শোনানো এবং আই উইল মেক ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ান একথাও জিয়াউর রহমান বলে গেছে। জিয়াউর রহমানের কাজেই ছিল এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা। এদেশের মানুষকে দরিদ্রকে দরিদ্রই রাখা। আর মুষ্টিমেয় লোককে টাকা পয়সা দিয়ে একটু অর্থশালী সম্পদশালী করে দিয়ে তাদেরকে দিয়ে তার ক্ষমতাকে যেন চিরস্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে পারে, তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। মেধাবী ছেলে-মেয়েদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের বিপথে ঠেলে দেওয়া। নির্বাচনের নামে প্রহসন সৃষ্টি করা, হ্যাঁ না ভোটে ১১০ ভাগ ভোট পরল, না ভোট নাই।

তিনি বলেন, সেনাপ্রধান হয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রপতি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, সেখানেও কেউ ভোট পেল না। তারপর দিল সংসদ নির্বাচন সেটাও আর একটা প্রহসন। সেটা আগে থেকেই ঠিক করা যে আওয়ামী লীগের ৪০টার বেশি সিট দেবে না। ৩৯টি সিট দিয়েছিল। সেগুলো কি গণতন্ত্র? যারা গণতন্ত্রের জন্য এতো কথা বলেন তাদের কাছে এটাই প্রশ্ন। এটা কি করে গণতন্ত্র হয়। একটা দল হলো হাটতে চলতেও শিখল না ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দলের সৃষ্টি সেই ক্ষমতায় আসে মানুষ পায় না এটা হয় কখনো? সব মানুষকে কিভাবে শোষণ করা যায়, কিভাবে ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যায়, কিভাবে এদেশের মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় সেই কাজগুলি দীর্ঘ ২১ বছর চলেছে। কারণ জিয়ার পর এরশাদ এসেছে এরশাদের পর খালেদা জিয়া এসেছে প্রত্যেকের একই চরিত্র।

এ সম্পর্কিত আরও খবর