অটোপাসের পক্ষে-বিপক্ষে এমপিরা যা বললেন

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 02:16:17

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অটোপাশের পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন সংসদ সদস্যরা। কোন কোন সংসদ সদস্য পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে থাকলেও অন্যরা বলেছেন সরকারের এই সিদ্ধান্ত যথার্থ এবং যথেষ্ঠ দক্ষতার পরিচয়। শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন, আমরা নিয়মিত মনিটরিং করেই সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

রোববার (২৪ জানুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে এইচএসসি ও সমমানের তিনটি পরীক্ষার পৃথক তিনটি বিল পাসের আগে বিলের জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে সংসদ সদস্যরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, মুজিবুল হক চুন্নু, রওশন আরা মান্নান, মোকাব্বির খান, রুমিন ফারহানা।

হারুনুর রশীদ বলেন, সারাদেশে বেশি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া যেত। তাতে অন্তত পক্ষে পরীক্ষার মাধ্যমে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতাম তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের অন্ততপক্ষে বাড়িতে টেবিলে বসানোর একটা ব্যবস্থা হতো।

তিনি বলেন, আইন পাসের মধ্য দিয়ে অটোপাস দিয়ে দিলাম। সত্যিকার অর্থে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ছেলে মেয়েদের প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত যে ভয়াবহ একটা সংকট তৈরি হলো। সিদ্ধান্তগুলো আরো চিন্তা ভাবনা ও বিবেচনা করে নেওয়া উচিত ছিল। সত্যিকার অর্থে এর মধ্য দিয়ে মেধাবীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, দীর্ঘ সময় ঘরে বসে থাকার কারণে ছেলে মেয়েরা মানসিক চাপের মধ্যে আছে। যদি তাদের আবারও একই একই শ্রেণিতে বসে থাকতে হয় তাহলে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে।

গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বিলটির সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ জড়িত। কোভিড-১৯ সারা বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে। যেখানে ক্ষমতাধর দেশ সমূহ হিমশিম খাচ্ছে সেখানে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ অনেকটা নিরাপদে আছে। কোভিড-১৯ এর কারণে সমাজের সকল স্তরের মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিশুরাও ব্যতিক্রম নয় তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, যখন সরকার দেশের সমগ্র শিল্প-কারখানা, পোশাক খারখানা খুলে দিল যেখানে লাখে লাখে মানুষ কাজ করছে। সেখানে সরকার একটু সচেষ্ট হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারা বাংলাদেশেই পরীক্ষা নেওয়া অবশ্যই সম্ভব হত। এখানে অবশ্য সরকার ব্যর্থ হয়েছে। যদিও মন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রণালয় বিদ্যমান পাস কাটিয়ে অটোপাসের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি যা করার করে দিয়েছে। তাহলে পার্লামেন্টে আমাদের কাজ কি? আমাদের কাজ হলো সরকারের এই ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে আইনটিকে পাস করে দিতে হবে। এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। সরকার গণতান্ত্রিক আচারণ করলে মহামারির সময়ে আরো তিনটি অধিবেশন হয়েছে সেখানেই বিষয়টি আলোচনা করতে পারত।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, বিলটা না এনে কোন পথ ছিল না। গত এক বছরে কোভিড-১৯ এর সময়ে গ্রামে গঞ্জে করোনার প্রভাবটা ওইভাবে দেখি নাই। অটোপাস না করে আমরা একটা সংক্ষিপ্ত অর্থাৎ একটা শর্ট কোর্সের মধ্যে পরীক্ষা নিতে পারতাম। ১৯৬১ সালেও এরকম একটা অটোপাসের গেজেট হয়েছিল ওই সময় যারা পাস করেছিল তাদের কাছে সারাজীবন এটা একটা গ্লানি। এটা একটা বদনাম ছিল।

ফখরুল ইমাম বলেন, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিল। কয়েক লাখ ছেলে-মেয়েরা যে এক সঙ্গে এসে যে পরীক্ষা দেবে এইটার জন্য যে বিল আসছে এটা একটা দুরদর্শিতা। আগে তো জান তারপর তো জাহান। একবছর মানুষের জীবনে কিছুই হয় না। অনেকে বলেছেন মেধার সমস্যা হয়, কিছুই হয় না। এরকমও অনেক লোক আছে যারা এসএসসিতে তৃতীয় এবং এইচএসসিতেও তৃতীয় বিভাগে পাস করে পরবর্তীতে মেডিকেল সাইন্সে সর্বোচ্চ জায়গায় স্থান করেছে। যাদের মেধা থাকে যে কোন সময় উঠে আসতে পারে।

রুমিন ফারহানা বলেন, প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকের নিম্নমান প্রশ্ন ফাঁস করাসহ নানা দুর্ভোগের পর এখন যুক্ত হয়েছে অটোপাস। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়ের পর পর তার বাক নির্ধারিত হয়। কারণ-কে ডাক্তার হবেকে ইঞ্জিনিয়ার হবে কে আইনজীবী হবে সেটা নির্ধারিত হয় ঠিক এই পর্যায়ে। ছাত্র-ছাত্রীরা মূল পড়াশোনাটা করে পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে। পরীক্ষা না থাকলে নিয়মতি ক্লাস করে পাঠ্যপুস্তকের ওপর পুরোপুরি দখল আসে না। সেখানে করোনাকালীন সময় দীর্ঘ সময় ক্লাস বন্ধ ছিল। অতীতের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ইনসাফ হয় না। অটোপাসের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভালো ছাত্রছাত্রী। এই ক্ষতি দেশেরও হবে।

পরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাদের বক্তব্যের জবাবে বলেন, পরীক্ষার জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই একই অবস্থা। উন্নত যেসকল দেশকে আমরা ফলো করি, যেসব জায়গাও অটোপাসের ব্যবস্থা করেছে। তারাও অ্যাসেসমেন্ট করে রেজাল্ট দিচ্ছে। কাজেই হঠাৎ করেই এটা করেছি সেটি ভাববার সুযোগ নেই।

যেহেতু গেজেট প্রকাশের কথা বলা আছে আমাদের সে প্রস্তুতি নেওয়া আছে। জানুয়ারির মধ্যে সমস্ত ফলাফল তৈরি করে অর্ডিন্যান্স পাস করে ফলাফল দিয়ে দেবার প্রস্তুতি ছিল। গেজেট প্রকাশ করতে বিল পাস হয়ে গেলে দুই দিনের মত সময় লাগবে তারপরই ফলাফল প্রকাশ করতে পারব। বিলম্বের কোন সুযোগ নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর