পাপুলের এমপি পদ এখন স্পিকারের হাতে

, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 06:19:55

কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মাদ শহিদুল ইসলাম পাপুলকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে চার বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ কুয়েতি দিনার (২৮ কোটি টাকা) জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এতথ্য জানা গেছে। এখন পাপুলের সংসদ সদস্য পদ থাকার সিদ্ধান্তটা স্পিকারের হাতে!

একাদশ জাতীয় সংসদের এই সদস্য কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল একজন আইন প্রণেতা যখন মানব পাচারের মতো অপরাধ করে তখন তার সংসদ সদস্য পদ থাকে কী করে?

কোন সংসদ সদস্যের সাজা হলে এমপি পদের যোগ্যতা নিয়ে আইনি ব্যাখা জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, “একজন সংসদ সদস্য যদি কোন মামলায় দুই বছর বা তদুর্ধ্ব সময় সাজাপ্রাপ্ত হন এবং সেই সাজা যদি নৈতিকস্খল হয়। আর সেই বিষয়টা সরকার বা কোন কর্তৃপক্ষ সংসদকে যদি অবহিত করেন যে আপনার ওই আসনের অমুক এমপি এই মামলায় এই ধারায় এতো বছরের কারাদণ্ড হয়েছে এবং সেটাকে আমরা নৈতিকস্খল বলে বিবেচনা করি তখন সংসদ সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে কাগজপত্র দেখে তাকে তখন ‘ডিজমেম্বর’ (সংসদ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার) করতে পারে। তার আগে দেখভাল করার কোন সুযোগ সংসদের নেই।

অন্যদিকে কার্যপ্রাণালী বিধির ১৭২ বিধি অনুযায়ী “কোন সদস্য ফৌজদারি অভিযোগে বা অপরাধে গ্রেফতার হইলে কিংবা কোন আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইলে বা কোন নির্বাহী আদেশক্রমে আটক হইলে ক্ষেত্রমত গ্রেফতারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ তৃতীয় তফসিলে প্রদত্ত যথাযথ ফরমে অনুরূপ গ্রেফতার, দণ্ডাজ্ঞা বা আটকের কারণ বর্ণনাপূর্বক অবিলম্বে অনুরূপ ঘটনা স্পিকারকে জানাইবেন।”

এরপর কার্যপ্রণালী বিধির ১৭২ বিধি মোতাবেক পত্র পাইবার পর কার্যপ্রণালী বিধির ১৭৬ বিধি অনুযায়ী স্পিকার যথাশীঘ্র সংসদ অধিবেশনে থাকিলে সংসদে তাহা পাঠ করিবেন, কিংবা সংসদ অধিবেশন না চলিলে সদস্যদিগের অবগতির জন্য তাহা প্রচার করার নির্দেশ দিবেন।”

তবে শর্ত থাকে যে, “কোন সদস্যের জামিনে বা আপিলে খালাস হওয়ার সংবাদ যদি মূল গ্রেফতার সংসদকে জ্ঞাপনের পূর্বে পাওয়া যায়, তাহা হইলে অনুরূপ গ্রেফতার বা পরবর্তী মুক্তি বা খালাসের সংবাদ স্পিকার সংসদকে না জানাইলেও চলিবে।”

সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি অফিসিয়ালি স্পিকারকে অবহিত হলে তখন হয়তো তখন তিনি সংসদের অধিবেশন অবহিত করতে পারেন।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন,“ স্পিকারের নিকট বিষয়টা যে কোন ভাবেই আসতে পারে। এমনকি স্পিকার তো গণমাধ্যমের রিপোর্টটা আমলে নিতে পারেন। তাছাড়া যে কোন নাগরিকও দরখাস্ত দিতে পারে, নির্বাচন কমিশনও দিতে পারে, যে কোন ভাবেই হোক স্পিকারের নলেজে আসলেই হলো। এটা এমন কথা নাই যে স্পিকারকে সুনির্দিষ্ট কোন অথরিটি জানাতে হবে। আইনের স্প্রিট তো তা না, আইনে স্প্রিট হলো সাজাপ্রাপ্ত হলে তখন তার সংসদ সদস্য খারিজ হবে এবং স্পিকার সেটা করবে। অতএব যে কোন ভাবেই স্পিকার অবগত হলেই হবে। স্পিকারের যখনই জানবেন তখনই ব্যবস্থা নিতে পারে।”

তবে এক্ষেত্রে একটু সুযোগও রয়েছে বলে জানালেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, “একটা বিষয় আছে যখন বলা হবে কোর্টে রায় হয়েছে, কোর্টের রায় তো স্পিকারের সন্তষ্টি হতে চাইবে, সেই জায়গায় একটু তাকে কনভিন্স হওয়ার জন্য সময় নিতে হবে। শুধু বলেই দিলেই হবে না যে রায় হয়েছে রায়টাও স্পিকারকে জানতে হবে। সাজাটা স্পিকার দেখতে চাইবে। সেখানেও অনেক সুযোগ আছে স্পিকার চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানতেই পারেন সেক্ষেত্রে কোন সময় লাগবে না। আর যদি সুযোগ দিতে চায় তাহলে ২,৪, ৬ মাস অপেক্ষাও করতে হতে পারে, রায় আসবে, কে পাঠাবে এগুলো তাদের সুযোগ সুবিধা আছে।” আইনি ব্যাখা দিয়ে আরো বলেন, স্পিকার নিজেও সংবাদমাধ্যমে জেনে আমলে নিতে পারেন। স্পিকারের নলেজে আসলেই হলো।

আপিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কি না জানতে চাইলে বলেন, “যে কোন সাজাই চূড়ান্ত হয় আপিলের পরে। এইক্ষেত্রে সাজা এবং জরিমানা হয়েছে। যদি জরিমানা স্থগিত হয় আপিলে সেক্ষেত্রে কিন্তু অযোগ্য হবেন। শুধু জরিমানা স্থগিত হলে হবে না সাজাও স্থগিত হতে হবে। আর সাজা যদি স্থগিত হয় তাহলে তাকে আর সাজাপ্রাপ্ত বলা যাবে না। আপিলটা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে ‍চূড়ান্তভাবে সাজা বলা যাবে না। ওই জায়গায় সাজাটা যদি স্থগিত হয়ে যায় তাহলে সংসদ পদের অযোগ্যতা আর বিবেচনা হবে না। সেক্ষেত্রে আপিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

এদিকে এমপি পাপুল সম্পর্কে সংসদে প্রশ্ন ওঠায় ২০২০ সালের ৮ জুলাই সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন,“ সে কিন্তু স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। সে কিন্তু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নমিনেশন চেয়েছিল আমি দেইনি। সে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। নির্বাচনে ওই সিট জাতীয় পার্টিকে দিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টির নোমান নমিনেশন পেয়েছিল সে নির্বাচন করেনি ওই লোক জিতে আসে। সে (পাপুল) কুয়েতের নাগরিক কিনা, সেটা কিন্ত কুয়েতের সাথে কথা বলছি, দেখবে। আর যদি এটা হয় তাহলে তার ওই সিট হয়তো খালি করে দিতে হবে। যেটা আইনে আছে সেটাই হবে।”

প্রসঙ্গত, গত মানবপাচার ও অর্থপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৭ জুন কুয়েত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিনপার্টমেন্ট সিআইডি এমপি পাপুলকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রসঙ্গে কুয়েতের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কাজী শহীদ ইসলামের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অতিরিক্ত ভিসা নবায়ন ফি আদায়, কুয়েতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে কুয়েত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট- সিআইডি। তার বিরুদ্ধে ১১ জন বাংলাদেশি সাক্ষীও দিয়েছেন।

এছাড়া পাপুলের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই জব্দ করেছে সিআইডি। একই সঙ্গে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর