নারিকেলের আইচায় স্বপ্ন দেখছে উদ্যোক্তারা

বরিশাল, জাতীয়

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 03:48:05

বরিশাল: গ্রামাঞ্চলে নারিকেলের আইচা মানে অপ্রয়োজনীয় বস্তু। আগে গৃহস্থালির কাজে সামান্য কিছুটা ব্যবহার ছাড়া এটি ফেলে দেয়া হতো। তবে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে এই আইচার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। আগের অপ্রয়োজনীয় এই বস্তুটি এখন মূল্যবান কাঁচামালে পরিণত হয়েছে।

তাছাড়া বর্তমানে নারিকেলের এই আইচা দিয়ে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে কেউ কেউ উপার্জনের চাকাও ঘুড়িয়ে দিয়েছেন। আবার পাশাপাশি কিছু অসহায় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। এতে করে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে, তেমনি এই অপ্রয়োজনীয় বস্তুর নিত্য নতুন ব্যবহারে নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, বরিশালের বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা নারিকেলের এই আইচা দিয়ে প্রায় শতাধিক রকমের শোপিস তৈরি করছেন। তবে এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে চাহিদা কম থাকলেও রাজধানী ঢাকার আড়ং, সিলেটের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে।

সোমবার ( ২৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর বেশ কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি কারখানায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ জন কাজ করছেন। আর প্রত্যেকের কাজের ধরন আলাদা। কেউ নৌকা বা পাতা তৈরি করছেন, আবার কেউ বাঁশের শলা কাটছেন, কেউবা তৈরি পণ্যের উপর পলিশের কাজ করছেন। আর প্রত্যেকেই কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে সুনিপুণ কারুকাজ ফুটিয়ে তুলছেন নারিকেলের আইচায়।

নগরীর রূপাতলীর শেরে বাংলা সড়কে আনোয়ার হোসেন মন্টুর হাসিনা কুটির শিল্প ঘুরে দেখা গেছে, চায়ের কাপ, মগ, ফুলদানি, জুয়েলারি বক্স, মোমদানি, পালনৌকা, চাবির রিং, টেবিল ল্যাম্পের স্ট্যান্ড, ফুলের শোপিস আইচা দিয়ে বানানো হয়েছে। নারিকেলের আইচা দিয়ে এখানে কতো কিছু তৈরি হচ্ছে। আর সব পণ্য আনোয়ার হোসেনসহ বয়স্ক নারীরা তৈরি করছেন।

তবে এই কাজের প্রধান কারিগর আনোয়ার হোসেন মন্টু নিজেই। তার দেয়া দিকনির্দেশনা ও ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করছেন সবাই।

হাসিনা কুটির শিল্পের বয়স্ক কর্মচারী তাহমিনা বেগম বকুল (৬৬) বার্তা২৪.কমকে জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করছেন। স্বামী মারা গেছে অনেক আগেই। তাই পাঁচ সদস্যের সংসার চালিয়ে নিতে এখানে কাজ করছেন। আইচা থেকে তৈরি হওয়া সব ধরনের শোপিসের কাজ জানেন তিনি।

এদিকে হাসিনা কুটির শিল্পের মালিক আনোয়ার হোসেন মন্টু (৬৪) বার্তা২৪.কমকে জানান, অভাবের সংসারে লেখাপড়া বেশি দূর এগোয়নি তার। এর ফলে ১৯৬৯ সালে প্রথম নারিকেলের আইচা দিয়ে শোপিস বানানো শুরু করেন। ওই সময়ে মীর আনিস উদ্দিন নামে একজনের কাছ থেকেই নারিকেলের আইচা দিয়ে নানা রকম পণ্যসামগ্রী বানানো শেখেন আনোয়ার। তবে নানা প্রতিহিংসার মধ্য দিয়ে তাকে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে তার এই কারখানায় প্রায় ১২ জন কর্মচারী রয়েছে। যারা মাসিক বেতনে কাজ করেন। আর কারখানায় প্রায় অর্ধশতাধিক বিভিন্ন ধরনের শোপিস তৈরি হচ্ছে। যার মূল কাঁচামাল এই নারিকেলের আইচা। বর্তমানে এর চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন মেলাকে ঘিরে এর চাহিদা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়।

আনোয়ার জানান, শোপিস বানাতে নারিকেলের আইচা ছাড়াও বাঁশ, কাঠ, পাট, সুতা, আইকা প্রভৃতি উপকরণের দরকার হয়। আর নারিকেলের আইচার বেশির ভাগ আসে ঝালকাঠির স্বরূপকাঠি থেকে। আকারভেদে প্রতিটি আইচার দাম পড়ে ৬০ পয়সা থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। আর এই কারখানা থেকে উৎপাদিত সর্বনিম্ম ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা মূল্যের পণ্য রয়েছে।

তবে শুধু এই আনোয়ার হোসেনই নয়, তার ছেলে এম এ রশীদ আরিফ, নগরীর বিএম কলেজ এলাকার উদ্যোক্তা নিলয় মিতুল, বান্দ রোড এলাকার জেমস টিমোথি অধিকারী পলাশ ও তার মা মনপ্রভাসহ আরও অনেকেই এখন নারিকেলের আইচা দিয়ে পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তবে এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন নারিকেলের আইচা শিল্পের উদ্যোক্তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর