‘ধনী ছিলাম বলেই মধ্যযুগে ইংরেজ-ওলান্দাজরা এসেছিল’

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-22 21:46:24

মধ্যযুগে বাংলাদেশ ধনী দেশ ছিল বলে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মধ্যযুগে বাংলাদেশ ছিল একটি ধনী দেশ, কারণ তখন পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল কৃষি নির্ভর। তখন যাদের উন্নত কৃষি জমি ছিল তারাই ছিল ধনী। আমাদের উন্নত কৃষি জমি ছিল বিধায় আমরা ছিলাম ধনী। আমরা ধনী ছিলাম বিধায় আমাদের দেশে বর্গীরা এসেছে, ওলান্দাজরা এসেছে, ইংরেজরা এসেছে। যে বাড়িতে ধন থাকে সেই বাড়িতেই ডাকাত পড়ে, আমি তাদের ডাকাত বলছি না। তবে আমরা ধনী ছিলাম বিধায় ওলান্দাজা-বর্গীরা এসেছিল।

রোববার (৩১ জানুয়ারি) সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী একথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, যখন পৃথিবীর অর্থ ব্যবস্থা শিল্প নির্ভর হয়ে গেল আমাদের থেকে যখন কাঁচামাল নিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলো চড়া দামে শিল্প পণ্য আমাদের কাছে বিক্রি করা শুরু করল তখন আমরা দরিদ্র হয়ে গেলাম। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দৃশ্যপট আবার উল্টে দিতে চাই। আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ আবার উন্নত দেশে রূপান্তরিত হব, আমরা ধনী দেশে রূপান্তরিত হব। আমরা শুধু বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে ধনী হব তা নয়। আমরা আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করব। যে প্রজন্ম শুধু বাংলাদেশকে উন্নয়ন করবে তা নয় সেই প্রজন্ম পৃথিবীকে পথ দেখাবে। আমরা একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।

হাছান মাহমুদ বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হচ্ছে উদাহরণ সৃষ্টিকারী দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। যে দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে মানুষের ঘনত্ব সাড়ে ১২০০। এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশের রাজধানী ঢাকা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্যে একটি। এই দেশের করোনা মহামারির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নেতৃত্বে দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে দূরদৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ আজকে করোনা মহামারিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, ব্লুমবার্গের মতে করোনা মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এই উপমহাদেশে তৃতীয় এবং পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ২০তম। করোনা মহামারি দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এখানে যেভাবে নিয়ন্ত্রণটা হচ্ছে সেটি পৃথিবীর মাঝে উদাহরণ।

মন্ত্রী বলেন, অনেকে এটি স্বীকার করতে না চাইলেও বিএনপি এবং তার মিত্ররা আর রাত ১২টার পর যারা টিভির পর্দা গরম করে তাদের কেউ কেউ তা স্বীকার না করলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এই করোনা মহামারির মধ্যে পৃথিবীর সব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। পৃথিবীর মাত্র ২০টি দেশে জিডিপি গ্রোথ পজিটিভ। আর তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা তৃতীয়। যেই দেশে মানুষের ঘনত্ব সর্বোচ্চ কৃষি জমির পরিমাণ মাথাপিছু পৃথিবীতে সর্বনিম্ন যে দেশে ঝড়, বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তন নিত্যসঙ্গী সেই করোনা মহামারির মধ্যে পৃথিবীতে জিডিপি গ্রোথের ক্ষেত্রে তৃতীয় বাংলাদেশের ওপরে গায়ানা এবং সাউথ সুদান দুটি দেশ শুধু আছে। যেখানে মানুষ অনেক কম এবং যাদের অর্থনীতি অনেক ছোট। সেই তুলনায় বাংলাদেশকে বলতে হয় পৃথিবীতে এক নম্বরে আছে এই করোনার মহামারির মধ্যে জিডিপি গ্রোথ ধরে রাখার ক্ষেত্রে। আশপাশের দেশের তুলনা করে বলেন, ভারতে জিডিপি গ্রোস মাইনাস ১০, পাকিস্তানে মাইনাস ০ দশমিক ৩৮, শ্রীলংকা মাইনাস ৪ দশমিক ৫৫, ভুটানে প্লাস ০ দশমিক ৫৭, নেপাল ০ দশমিক ০২, আফগানিস্তান মাইনাস ৫। অর্থাৎ আশপাশের সকল দেশে মাইনাস কোন কোন দেশে প্রায় একই জায়গায় রয়েছে। বাংলাদেশ সেখানে জিডিপি ধরে রেখেছে ২৪ শতাংশ। যেটা পৃথিবীতে তৃতীয় কার্যত প্রথম।

তিনি বলেন, করোনা সংকটের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল, আছে এবং থাকবে। এই করোনা মহামারির মধ্যে অনেকে বড় বড় কথা বলে অনেকে নয়াপল্টনে অফিসে বসে সংবাদ সম্মেলন করে কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো কোন রাজনৈতিক দল এই করোনার সংকটের মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কারণে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে কয়েকজন সংসদ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রায় ১ হাজারের কাছাকাছি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অনেক সংসদ সদস্য মন্ত্রিসভার এক তৃতীংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে আবার কাজে নেমে পড়েছে। এটি জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে সম্ভব হয়েছে। তার সঠিক নেতৃত্বের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণকে সংকটের সময়ও আশান্বিত করেছেন। দেশ পরিচালনায় আশান্বিত করেছেন শুধু তাই না সেই আলোয় দেশ উদ্ভাসিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে তার গায়ের পণ্য কুটির আর পণ্য কুটির নয়। দেশে কুড়ে ঘর খুঁজে পাওয়া যায় না। কবিতায় কুড়ে ঘর আছে বাস্তবে আকাশ থেকেও কুড়ে ঘর দেখা যায় না। সেই কুড়ে ঘর হয় টিনের চালা ঘর না হয় আধাপাকা ঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ আজকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ছিল স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত একটি দেশ। ২০২১ সাল আসার আগেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে তিনি একটি উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর করবেন। প্রধানমন্ত্রী বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে শুধু অবকাঠামগত উন্নয়ন করতে চান না একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে চান যে প্রজন্ম হবে মেধা মূল্যবোধ দেশাত্মবোধে সমৃদ্ধ একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে চান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর