প্রত্যন্ত গ্রামে রহস্যময় অট্টালিকা

রাজশাহী, জাতীয়

গনেশ দাস, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 18:55:33

বগুড়া: পুরো গ্রাম জুড়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বসবাস। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে টিনের বেড়া। মূলত এখানে বিল্ডিংয়ের বাড়ি করার সামর্থ্য নেই কারো। কিন্তু গ্রামে ঢুকতেই শ্বেত পাথর দিয়ে তৈরি বিশাল দুইটি অট্টালিকা দৃষ্টি কাড়ে সবার। কাছে গিয়ে না দেখলে মনে হবে রাজপ্রাসাদ। তবে এই বাড়ি নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। কেউ জানে না কী উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রামের মধ্যে এমন দুটি বিশাল অট্টালিকা তৈরি করা হয়েছে।

কথিত আছে এই বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। আর তৈরি করার সময় লেগেছে দীর্ঘ ১২ বছর। কেউ বসবাস করে না এই বাড়িতে। শুধুমাত্র একজন কেয়ারটেকার রয়েছে দেখাশোনা করার জন্য। বাড়ির মালিক সাখাওয়াত হোসেন টুটুল বর্তমানে দুদকের মামলায় গ্রেফতার হয়ে ঢাকায় কারাগারে রয়েছেন।

বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের দেউলী সরকার পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন টুটুল।

দেউলী সরকার পাড়া গ্রামের লোকজন জানায়, স্কুল জীবনে বাবা-মায়ের ওপর অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন টুটুল। এরপর ঢাকায় বসবাস করেন। সেখানেই লেখাপড়া শেষ করে বিয়ে করেন এক অবাঙালি নারীকে। এরপর থেকেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। ঢাকার ধানমন্ডিতে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, গাজিপুর টাটকা ফুড প্রডাকশন ফ্যাক্টরি, গ্রামের বাড়িতে একটি ইটভাটা এবং একটি কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াও প্রায় অর্ধ শতাধিক বিঘা আবাদি জমি রয়েছে টুটুলের। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান টুটুল কীভাবে এতো সম্পত্তির মালিক হল তা নিয়ে এলাকায় রয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে হঠাৎ করে তিনি তার পৈত্রিক টিনের বাড়ির পাশে, নতুন এই বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গা নিয়ে শুরু করেন বাড়ি নির্মাণের কাজ। শুরুতে প্রতিবেশীরা মনে করেছিল মাঝে মধ্যে গ্রামে এসে অবস্থান করার জন্য বিল্ডিং তৈরি করছে। কিন্তু দেখা যায় ইটের পরিবর্তে কংক্রিটের গাঁথুনি দিয়ে শুরু করা হয় নির্মাণ কাজ। পাশাপাশি দুইটি বিল্ডিং তৈরি করা হয়। নির্মাণ শেষে পুরো বাড়ি দুইটি এবং সীমানা প্রাচীরে টাইলসের পরিবর্তে শ্বেত পাথর দেয়া হয়। এমনকি পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য তৈরি সেফটি ট্যাংকের উপরের অংশেও দেয়া হয়েছে শ্বেত পাথর। নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরাও এলাকার কেউ না। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে নির্মাণ কাজ শেষে চলতি বছর তা বসবাসের উপোযোগী করে তোলা হয়।

একটি চারতলা, আরেকটি তিনতলা বাড়ির ছাদে রয়েছে ৪টি করে গম্বুজ। প্রধান ফটকে রয়েছে ৪টি গম্বুজ। দুইটি বাড়ি ছাড়াও আলাদা করে রয়েছে আকর্ষণীয় ডিজাইনের রান্না ঘর, দুইটি পুকুর, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের নিয়ে তৈরি করা একটি পার্ক এবং ফুলের বাগান।

বর্তমানে এ বাড়িতে কেউ বসবাস না করলেও প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে বাড়িটি একনজর দেখার জন্য। কিন্তু বাড়ির মালিক গ্রেফতার হওয়ার পর কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।

কেয়ারটেকার জয়ন্ত কুমার জানান, অপরিচিত লোকজনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে। এ জন্য বাড়ির সামনে প্রবেশ নিষেধ কথাটি লিখে রাখা হয়েছে।

এদিকে লোকজনের ভিড় হওয়ার কারণে বাড়ির সামনে গড়ে উঠেছে একটি হোটেলসহ বিভিন্ন দোকান। পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার বাড়িটি পরিদর্শন করেছে।

গত এপ্রিল মাসে দুদকের মামলায় গ্রেফতার হন সাখাওয়াত টুটুল। এরপর থেকে বাড়ির ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। সাখাওয়াত হোসেন টুটুল জেলহাজতে থাকায় বড় ভাই ফজলুল বারি বর্তমানে তার ব্যবসা বাণিজ্য দেখাশোনা করছে।

ফজলুল বারির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিব্রত বোধ করে বলেন, এই বাড়ি করেই টুটুল আজ জেলখানায়।

কেন বাড়িটি করা হয়েছে? কতো টাকা ব্যয় হয়েছে এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না।’

মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান বলেন,‘আমি নিজেই বাড়িটি দেখে এসেছি। এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এই প্রত্যন্ত গ্রামের ভেতরে কেন এমন প্রসাদ সমতুল্য অট্টালিকা তৈরি করা হয়েছে সে ব্যাপারে কেউ কিছুই বলতে পারছে না।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর