যে বিষয়টি পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীদের ভাবাচ্ছে

, জাতীয়

মো. রুবেল ইসলাম তাহমিদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মুন্সীগঞ্জ | 2023-08-31 07:22:11

পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, এটা এখন বাস্তবতা। বাংলাদেশ সরকারের  অন্যতম বড় চেলেঞ্জের কাঠামো এই সেতু। সেতুতে সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটিও ইতোমধ্যে বসে গেছে। এখন সবার মুখে একটাই প্রশ্ন গাড়ি চলবে কবে? গাড়ি চলার উপযোগী করতেই সেতুর ওপর রাত-দিন চলছে সড়ক নির্মাণের কাজ।

এখন প্রশ্ন হলো সড়ক নির্মাণ করলেই কি সেতুতে নির্বিঘ্নে গাড়ি চলাচল করতে পারবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বছরের বাকি সময় সেতুর ওপর দিয়ে নির্বিঘ্নে গাড়ি চলাচল সহজ হলেও শীতে সেটা অতটা সহজ হবে না। কারণ বছরের ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে যে কুয়াশা দেখা দেয় তাতে নদীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেতুতে গাড়ি চালানো কঠিন হবে। আর এই বিষয়টিই রীতিমতো ভাবাচ্ছে পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীদের।

পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, এটা এখন বাস্তবতা

জানা গেছে, সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান বাসানোর পর সেতুতে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। মোট দুই হাজার ৯১৭টি ক্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ৮৮২টির বেশি বসানো হয়ে গেছে। এছাড়া সুপার-টি গার্ডার ৪৩৮টির মধ্যে বসেছে প্রায় পৌনে ৪শ’। ফলে শিগগিরই বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতুর চারপাশের টুকি টাকি নানা ধরনের কাজ চলছে। তবে পদ্মাসেতুর নকশা অনুযায়ী সব সমস্যা সমাধান হলেও পৌষের হাড় কাপানো তীব্র শীতের ঘন কুয়াশা ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।

সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান বাসানোর পর সেতুতে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হচ্ছে

তারা মনে করছেন, কুয়াশার কারণে প্রায়ই যমুনা সেতুতে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। ফলে দুই পাড়ে ৪০-৪৫ কিলোমিটার রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় ওই এলাকার যাত্রীদের। একই সমস্যা পদ্মা সেতুতেও হতে পারে। তবে প্রকৌশলীরা এই সমস্যা রেখে পদ্মা সেতু চালু করতে চান না। তারা এ সমস্যার সমাধান বের করতে চান সেতু চালু হওয়ার আগেই।

জানা গেছে, শীত মৌসুমে কুয়াশার মধ্যে চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুতে আলো বা রঙ বা দুটোই ব্যবহার করা হবে কিনা- সে বিষয়ে কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঘন কুয়াশা দূর করতে বাড়তি আলো ব্যবহারের কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তবে আলো ব্যবহার না করে নদীবক্ষের ঘন কুয়াশা এড়ানো সম্ভব হবে কিনা- তা যথেষ্টই বিবেচনার দাবি রাখে।

তবে ঘন কুয়াশার কারণে যাতে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য উপায় খুঁজছেন প্রকৌশলীরা। সেতুতে বিশেষ ধরনের লাইটিংয়ের ব্যবস্থাকেই সমাধান মনে করছেন প্রকৌশলীরা।

দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘এ বিষয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে কী করার আছে তা আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত নেয়া হলে জানানো হবে।’

তবে সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু সেতু পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি সেতুর টোলপ্লাজায় ডিজিটাল ওয়েদার স্কেল রয়েছে। স্কেলে কুয়াশার ঘনত্ব ৪০ রিখটারের নিচে নেমে এলে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে পদ্মা সেতুতে ঘন কুয়াশার মধ্যেও যেন গাড়ি চলতে পারে তার জন্য হেভি লাইটের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অপারেশন মেইনটেনেন্সের সময় অনেক কিছু সংযোজন হয়। এটা তেমন জটিল কিছু নয়।’

প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের মতো ঘন কুয়াশাও একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘন কুয়াশার কারণে চীনসহ সারা পৃথিবীতে সেতুর ওপর যান চলাচল বন্ধ থাকে।

এদিকে পদ্মা সেতুর লাইটিংয়ের ডিজাইন এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী, এইকম-এর করা মূল নকশাকে ভিত্তি করে 'পার্ট বাই পার্ট' আরও অনেক নকশা করা হয়ে থাকে। সেসব নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যাচাই করার পর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) অনুমোদন করে। এরপরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেটা বাস্তবায়ন করে। পদ্মা সেতুর মূল কাজ শেষ হওয়ার পর লাইটিংয়ের কাজ শুরু হবে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মান কোড মেনেই পদ্মা সেতুতে লাইটিং ব্যবহার করা হচ্ছে। আর্কিটেকচার লাইট ও স্ট্রিট লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ৩৭ দশমিক ৫০ মিটার পর পর ১২ মিটার উচ্চতার প্রতিটি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হবে।তবে ঘন কুয়াশা প্রতিরোধ করার জন্য বিশেষ কোনও লাইটিং ব্যবহার করার ব্যাপারটি প্রস্তাবিত নকশায় নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর