তিন দশকেও আধুনিক হয়নি ঝালকাঠির বাস টার্মিনাল

, জাতীয়

জহির রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল | 2023-08-30 05:30:43

ঝালকাঠি থেকে ফিরে: গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি ঝালকাঠির জেলা বাস টার্মিনালে। গত ৩৩ বছর ধরে বাসটার্মিনালটি চলছে সেই আগের নিয়মেই।

জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে এক একর জমির উপর স্থাপন করা হয় ঝালকাঠি জেলা বাস টার্মিনাল। সেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে অভ্যন্তরীণ ৮টি রুটে বাস চলাচল করে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে সরাসরি ও ভায়া হয়ে শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ছাড়ে এই টার্মিনাল থেকেই। এতে কয়েক হাজার যাত্রীকে চলাফেরা করতে হয় এই টার্মিনাল হয়ে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই আন্তঃজেলা বাস ও মিনিবাস টার্মিনালে জায়গা সংকট রয়েছে। নেই কোনও সীমানা প্রাচীর, যাত্রী ছাউনি, উন্নতমানের পাবলিক টয়লেট আর বিশ্রামাগার । ডাস্টবিন  ও পয়নিঃস্কাশনের ব্যবস্থা নেই বাসটার্মিনাল এলাকায়। টার্মিনাল জুড়ে রয়েছে উচুঁ-নিচুঁ গর্ত আর খানাখন্দ। এতে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা আর শীত বা শুষ্ক মৌসুমের ধুলা-বালিতে নাকাল যাত্রী, চালক ও হেলপারসহ এলাকাবাসী।

বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলা শহরের প্রবেশদ্বার কৃষ্ণকাঠি এলাকায় ১৯৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আলতাফ হোসেন ঝালকাঠি জেলা বাস টার্মিনাল স্থাপনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।  এরপর থেকে সেখান থেকে বরিশাল, ভান্ডারিয়া, খুলনা, পিরোজপুর, মটবাড়িয়া, পাথরঘাটাসহ মোট আটটি রুটে বাস চলাচল করে। এছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরগুনাসহ দূরপাল্লার বাসও চলাচল করছে ঝালকাঠির এই বাস টার্মিনাল হয়ে।

অভিযোগ আছে, বাস টার্মিনালটি হাইওয়ে থেকে দূরে হওয়ায় দূরপাল্লা পরিবহন সেখানে যায় না। ফলে এসব বাসগুলো কৃষ্ণকাঠি পেট্রোল পাম্প মোড় এলাকার সড়কের উপর থেকেই যাত্রী ওঠানামা করেন। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা। 

ঝালকাঠি বাসটার্মিনালে নোংরা অবস্থায় টয়লেট
ঝালকাঠি বাসটার্মিনালে নোংরা অবস্থায় টয়লেট

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি পাবলিক টয়লেট থাকলেও ভাঙ্গাচুরা,দূর্গন্ধ অবস্থায় অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। তবুও পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের জনপ্রতি ৫ ও ৭ টাকা করে আদায় করছে ইজারা নেয়া এক নারী ।

আরও দেখা গেছে, জরাজীর্ণ আর জোড়াতালি দেয়া কাউন্টারে চলছে টিকিট বিক্রির কাজ। ডাস্টবিন না থাকায় স্থানীয় দোকান ও যাত্রীদের ফেলা বর্জ্য এবং মলমূত্রের দুর্গন্ধে নাক চেপে চলাফেরা করতে হচ্ছে। এতে পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।

এছাড়াও বাস টার্মিনালে পাকা সীমানা প্রাচীর বা কাঁটাতারের কোনও ভেড়া না থাকায় প্রায়ই বাসের ডিজেল, গিয়ার অয়েল, টায়ার, অতিরিক্ত টায়ারের রিং, সিসি ক্যামেরাসহ অনেক যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের।

শাহিনুর মরিয়ম নামে এক যাত্রী জানান, ঝালকাঠি বাস টার্মিনালে আসলেই তার মনে হয় কোনও পরিত্যক্ত জায়গায় এসেছেন। নোংরা, ময়লা-আবর্জনা আর ধুলা-বালির মধ্য দিয়েই নিয়মিত বরিশালে যাতায়াত করতে হয় তাকে। অবস্থার পরিবর্তন ও যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে কেউ এগিয়ে আসেন না বলেও তার অভিযোগ।

ঝালকাঠি বাসটার্মিনালে যত্রতত্র ফেলানো আবর্জনার স্তুপ
ঝালকাঠি বাসটার্মিনালে যত্রতত্র ফেলানো আবর্জনার স্তুপ

হৃদয় নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, মালিক সমিতি ও পৌরসভার রেশারেশির কারণে বাস টার্মিনাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। পৌরসভা বলে মালিক সমিতি লোক রেখে পরিস্কার করাবে। আবার মালিক সমিতি বলে পৌরসভার মধ্যে যখন বাস টার্মিনাল তখন পরিস্কার ব্যবস্থাও  পৌরসভার।

ঝালকাঠি বাস টার্মিনালে থাকা রুপা পরিবহনের চালক মো. শাহিন জানান, এই বাস টার্মিনালে সমস্যার শেষ নেই। বাস নিয়ে এসে এখানে বিশ্রামেরও সুযোগ হয় না চালকদের। তাছাড়া সীমানা দেয়াল বা বেড়া না থাকায় বাসের যন্ত্রাংশ চুরি হয়। ফলে চুরি এড়াতে রাতে বাসের মধ্যেই থাকতে হয়।

তিনি আরও জানান, বর্ষাকালে টার্মিনালে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে বাসের চাকা পড়লে উঠাইতেও অনেক কষ্ট হয়। তাই নিরাপদে বাস রাখা, চালক, হেলপারদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাসহ বাস টার্মিনালটি আধুনিক করার দাবি সংশ্লিষ্টদের সবার।

এক টিকিট কাউন্টার কর্মী মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, নোংরা পরিবেশ, পাশে ফেলানো ময়লা আর্বজনার দুর্গন্ধ ও ভাঙা কাউন্টারেই তাদের টিকিট বিক্রি করতে হয়। শুধু শুনা যায় টার্মিনালটি সংস্কার করা কিন্তু কোনও কোনও কাজ দৃশ্যমান হয় না বলেও জানান তিনি।

ঝালকাঠি বাসটার্মিনাল
ঝালকাঠি বাসটার্মিনাল

ঝালকাঠি জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিলন মাহমুদ বাচ্চু বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘সারাদেশের ছোট-বড় প্রায় সব বাস টার্মিনালই আধুনিক। সেসব টার্মিনাগুলোতে কমবেশি সব সুবিধা ভোগ করেন বাস মালিক, চালক, হেলপার ও যাত্রীরা। কিন্তু ঝালকাঠি জেলা বাস টার্মিনালে উল্টো চিত্র। দীর্ঘদিন  সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ ও অনুন্নত অবস্থায় পড়ে আছে টার্মিনালটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাস টার্মিনারে পেছন দিকে সুগন্ধা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে শিগগিরই টার্মিনালটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই টার্মিনালটি হাইওয়ের পাশে সরিয়ে নিয়ে আধুনিক বাস টার্মিনাল স্থাপনের দাবি সংশ্লিষ্টদের।’

ঝালকাঠি পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বাস মালিক, চালক, হেলপার ও যাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই ঝালকাঠীতে আধুনিক বাস টার্মিনাল স্থাপনের জন্য পৌরসভা থেকে একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পাস করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে৷ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে বলে আশা করছি।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর