‘পুলিশ সম্পর্কে আল জাজিরার তথ্য মনগড়া ও উদ্দেশ্যমূলক’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 05:53:18

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পুলিশ সম্পর্কে দেওয়া তথ্য মনগড়া ও উদ্দেশ্যমূলক বলে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। একই সাথে সংগঠনটি ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করে আল জাজিরা।

শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আর এম ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। এমনকি বিভিন্ন তথ্যের ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আল জাজিরার প্রতিবেদনে জনৈক ব্যক্তির বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে তিনি  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার ঘুষ নিয়ে ওসিদের পদায়ন করে বলে উল্লেখ করেছেন। ওই ব্যক্তি আদৌ এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করেছেন নাকি কাট, কপি ও পেস্ট করে এ বক্তব্য তৈরি করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই।

আরও উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ বিদেশে অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানের কারণে বর্তমান প্রজন্মের পুলিশিং এবং পুলিশের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে তার কোনও স্বচ্ছ ধারণা নেই। উপরন্তু, বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান প্রজন্মের অফিসারদের সঙ্গে তার কোনও ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। সাক্ষাৎকারে পুলিশ সম্পর্কে তার বক্তব্য কল্পনানির্ভর মনে হচ্ছে।

এছাড়া, জনৈক ব্যক্তি তার বক্তব্যে ডিএমপি’র এয়ারপোর্ট থানায় ওসি বদলি সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছেন। ডিএমপির এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের অধিক্ষেত্র অন্যান্য থানার মতো বিস্তৃত নয়। ডিএমপির ৫০টি থানার আয়তনের দিক বিবেচনায় সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম আয়তনের থানা এয়ারপোর্ট থানা। এ থানা এলাকায় অন্যান্য থানার তুলনায় কম সংখ্যক জনগণ বসবাস করেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট এই থানার মধ্যে অবস্থিত হলেও এয়ারপোর্ট ও তৎসংলগ্ন সংরক্ষিত এলাকায় এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের কর্মপরিধি অত্যন্ত সীমিত। এয়ারপোর্ট ও তৎসংলগ্ন সংরক্ষিত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), এ্যাভসেক (AVSEC), ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস, সিভিল এভিয়েশন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দায়িত্ব পালন করে থাকে।

এক্ষেত্রে কোনও ধরনের অপরাধ সংগঠিত হলে বা যৌক্তিকভাবে কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতারের  প্রয়োজন হলে, সুরক্ষিত এয়ারপোর্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাই দায়িত্ব পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে কোনও ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি এয়ারপোর্ট খানায় অভিযোগ করেন এবং গ্রেফতার ব্যক্তিকে থানায় সোপর্দ করেন। এয়ারপাপোর্টের সব ধরনের কার্যক্রম সিসিটিভি মনিটরিং এর আওতায় রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা এয়ারপাপোর্ট থানার কার্যক্রম সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন। অধিকন্তু, এয়ারপোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা টহল কার্যক্রম ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পালন করে থাকে।

প্রতিবাদ লিপিতে জানানো হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সৎ, সজ্জন এবং আদর্শ রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত। থানায় ওসি পদায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী তিনি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন। গ্রহণযোগ্য একজন সম্মানিত ব্যক্তি সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) ক্লিন ইমেজের একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত। পুলিশ প্রধান হিসেবে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের প্রশাসনিক কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী, থানায় ওসি বদলি/পদায়নে ক্ষেত্রে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নন। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, ওই ব্যক্তির পুলিশে বদলি/পদায়ন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই।

এছাড়া ডিএমপি'র বর্তমান পুলিশ কমিশনার একজন দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত। তিনি পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর পরই থানায় আগত সেবা প্রত্যাশীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন এবং যথাযথ আইনি সেবা পান, সে লক্ষ্যে নানামুখী উদ্যোগ প্রহণ করেছেন। সেক্ষেত্রে থানায় ওসি বদলি/পদায়নে উৎকোচ গ্রহণের প্রসঙ্গের অবতারণা বাতুলতা মাত্র। এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশ পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে ওই ব্যক্তির কোনও ধারণাই নেই। এ ধরনের বস্তুব্য তার কল্পনাপ্রসূত এবং বানোয়াট।

আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পুলিশের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সকল প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। তিনি পুলিশ সদস্যদের সকল প্রকার অপেশাদার আচরণ ও মাদকের সঙ্গে পুলিশের যে কোনও ধরনের সংশ্লিষ্টতার ক্ষেত্রে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি প্রদর্শন করে চলেছেন। পুলিশের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম/দুর্নীতি রোধে কাজ করছেন আইজিপি। পুলিশের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, প্রয়োজনে ফৌজদারি অথবা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের সর্বোচ্চ জবাবদিহিতা ও পেশাগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও আইজিপি নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। সর্বোপরি, আধুনিক বিট পুলিশিং-এর মাধ্যমে তিনি পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোরায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, যা ইতোমধ্যে বাস্তবরূপ লাভ করেছে। তার এ উদ্যোগ জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। করোনাকালে বর্তমান আইজিপি'র নেতৃত্বে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত ৮৫ জন পুলিশ সদস্য জনগণের সেবায় আত্মোৎসর্গ করেছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার পুলিশ সদস্য।

আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনাকারী বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের প্রতি অবিচল আস্থা এবং শ্রদ্ধা রেখে দেশ ও জনগণের কল্যাণে অহর্নিশ কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ পুলিশ দেশের যে কোনও প্রয়োজন ও সংকটে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে অঙ্গীকারাবন্ধ। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণে যখন বাংলাদেশ পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী করে বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা হচ্ছে, তখন একটি মহলের এ ধরনেরর দুরভিসন্ধিমূলক প্রতিবেদন প্রচার অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর