কমছে না অবৈধ অটোরিকশার দাপট

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 08:41:32

রংপুর: গণপরিবহন সেবা না থাকায় রংপুরে দিন দিন বেড়ে চলছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার সংখ্যা। বিভাগীয় এই নগরীর সড়ক জুড়ে এখন অটোরিকশার লাগামহীন দাপট।

সিটি করপোরেশনের দেয়া ৪ হাজার ৮০০ বৈধ লাইসেন্সের বিপরীতে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করছে। প্রতিদিনই এসব অটোরিকশার গ্যাড়াকলে তীব্র যানজটে পড়তে হয়। এতে একদিকে বাড়ছে ভোগান্তি, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত গণপরিবহন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী।

সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও অবৈধ অটোরিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বরং অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচল আর যত্রতত্র পার্কিংয়ে বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। সঙ্গে রয়েছে নিত্যদিনের যানজট নামক যন্ত্রণা। এমন পরিস্থিতিতে নগরীতে দ্রুত গণপরিবহন সেবা চালু করার পাশাপাশি তিন চাকার অবৈধ অটোরিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ সচেতন মহলের।

রংপুর মহানগরীতে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। এই নগরীতে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ প্রতিদিন কোনো না কোনো কাজে শহরমুখী হচ্ছে। এতে যানবাহন ব্যবহারে তিন চাকার অটোরিকশার ওপর নির্ভর করতে হয় বেশির ভাগ মানুষকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর মহানগরীর মডার্ন মোড়, পার্কের মোড়, কলেজ রোড লালবাগ, শাপলা চত্বর, গ্রান্ড হোটেল মোড়, জাহাজ কোম্পানি মোড়, সুপার মার্কেট ট্রাফিক মোড়, সিটি বাজার মোড়, কাচারী বাজার জিরো পয়েন্ট, মেডিকেল মোড়, সাতমাথা মোড়, মাহিগঞ্জ, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল রোডে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সময় ভয়াবহ যানজটে আটকা পড়তে হয় নগরবাসীকে। এতে করে অনেক সময় চরম ভোগান্তিতে হাঁপিয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে অবৈধ অটোরিকশার ছড়াছড়ি, যত্রতত্র অটো স্ট্যান্ড ও মোটরসাইকেলসহ কার-মাইক্রো, পিকআপ ভ্যানের পার্কিং এবং ফুটপাত দখল করে ব্যবসার পসরা সাজিয়ে চলছে দিব্যি বেচাকেনা। এতে নগরীর প্রধান সড়কগুলোর দু’ধারের ৫৮ ফুট ফোরলেন সড়কের প্রায় পুরোটাই অটোরিকশা আর হকারদের দখলে গেছে। এসব দখল মুক্ত করতে এবং অবৈধ অটোরিকশার লাগাম টেনে ধরতে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতাকে দুষছে নগরবাসী।

এ নিয়ে কথা হয় নগরীর ধাপ চেকপোস্ট এলাকার মাসুম ইবনে মিল্লাতের সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, রংপুরে এখন পাল্লা দিয়ে অটোরিকশা চলছে। শহরের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলো থেকেও এখানে অটোরিকশা আসছে। এতে প্রায় দিনই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বাসা থেকে বের হয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করা দুষ্কর। সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ চাইলে এসব দুর্ভোগ শেষ হবে বলে মনে করেন তিনি।

পায়রা চত্বর এলাকার হাসনাইন, তারিকুল, মানিক মিয়া, আব্দুল মজিদ ছট্টু অভিযোগ করে জানান, নগরীর অধিকাংশ অটোরিকশার চালক অদক্ষ ও অযোগ্য। এদের বেশির ভাগই অপ্রাপ্ত বয়সের চালক। মাঝে মধ্যে বেপরোয়া অটোরিকশার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। যা সিটি করপোরেশনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেখেও না দেখার ভান করে যাচ্ছে।

অটোরিকশার দৌরত্ম বন্ধে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার জন্য মেয়রকেও দায়ী করে যানজট নিরসনে নগরীতে একই রঙের অটোরিকশার চলাচলের ব্যবস্থা করা, নগরীর বাইরের অটোরিকশার প্রবেশ বন্ধ এবং বিভিন্ন পয়েন্টে নির্দিষ্ট অটোস্ট্যান্ডে গাড়ি পার্কিং করে রাখার ব্যবস্থা করার জন্য পরামর্শ দেন তারা।

অন্যদিকে রংপুর জেলা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা মালিক শ্রমিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার কবির সুমন বলেন,‘নগরীর অবৈধ অটোরিকশার দৌরাত্ম কমাতে আমরা বারবার সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না নেয়ায় লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশার নগরীতে পরিণত হয়েছে রংপুর। ৪ হাজার ৮০০ লাইসেন্সের বিপরীতে নগরীতে প্রায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি অটো চলাচল করছে।’ অবৈধ অটোরিকশার চলাচল বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই শ্রমিক নেতা।

রংপুর সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তা হাসান গোর্কি জানান, রংপুরে অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রয়েছে। নতুন করে আর কোনো লাইসেন্স ইস্যু হয়নি। বিগত সময়ের দেয়া ৪ হাজার ৮০০ লাইসেন্সই বহাল রয়েছে।

এ ব্যাপারে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন,‘নগরীতে অবৈধ অটোরিকশার চলাচল বন্ধে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই অবস্থার পরিবর্তন আসবে। একই সঙ্গে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে গণপরিবহন সেবা চালুর জন্য মটর মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি।’

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ জয়নুল বারী জানান, দ্রুত মেট্রোপলিটন আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি গঠন করে গণপরিবহন চালু করা হবে।

অন্যদিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ বলেন,‘রংপুর মহানগরীর ফুটপাত দখল মুক্তসহ যানজট নিরসনে আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতোমধ্যে মাইকিং, পোস্টারিং ও লিফলেটের মাধ্যমে নগরীতে অবৈধ যানবাহনের প্রবেশ নিষেধ ও দখলে রাখা ফুটপাত পথচারীদের ব্যবহারে ছেড়ে দেয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর