ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীতে প্রতিনিয়ত চলছে দখলের মহোৎসব। আশুগঞ্জ বন্দরের পাশে নদী তীরের অনেক জায়গা এখন ইজারাদার মো. জিতু মিয়া ও প্রভাবশালীদের দখলে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সেসব জায়গায় গড়ে উঠছে বাঁশের জেটি। আর সেখানেই জাহাজ ভিড়িয়ে নামানো হচ্ছে সারসহ নানা পণ্য। আবার কেউ সরাসরি বালু ফেলে দখলে নিচ্ছেন নদীর তীর।
অভিযোগ আছে, টাকার বিনিময়ে ইজারাদার জিতু মিয়াকে নদী দখলে সহায়তা করছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরিন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কিছু অসাধু কর্মকর্তা। লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও টাকার বিনিময়ে উচ্ছেদ হয়নি ইজারাদারের অবৈধ জেটি ও বালুর স্তুপ। সাধারণত সেতু এলাকায় কোনও স্থাপনা তৈরির নিয়ম নেই। কিন্তু ইজারাদার বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সেতুর পিলারের সাথে জাহাজ নোঙর করান। এতে হুমকির মুখে পড়েছে মেঘনা নদীর উপরে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেতু।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার আশুগঞ্জ অংশের মেঘনা নদীতে চলছে দখলের মহোৎসব। মেঘনা নদীর আশুগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে আশুগঞ্জ সারকারখানার দক্ষিণে লঞ্চঘাট পর্যন্ত এক বছরের জন্য ৭৮ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন মো. জিতু মিয়া। এরপর থেকেই বন্দর এলাকা ও ব্রিজের পাশে চলছে অবৈধ ও অপরিকল্পিত বাশেঁর জেটি নির্মাণ। পাশাপাশি বালু দিয়েও ভরাট করা হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা। কয়েকদিনের ব্যবধানে কয়েকটি বাশেঁর জেটি নির্মাণ করা হয়েছে এবং বালু ভরাট করা হয়েছে ৪ জায়গায়। আর সারের পয়েন্ট রয়েছে একটি।
এছাড়া জেটিগুলো দিয়ে প্রতিদিন জাহাজ থেকে নামানো হচ্ছে সিমেন্ট, বালু, ধান, গম, ভুট্টা ও সারসহ বিভিন্ন পণ্য। তিনটি সেতুর পিলারের সাথে অবৈধ জেটি নির্মাণ করায় পিলারেই বাধাঁ হচ্ছে বলগেট জাহাজ। এতে যেকোনও সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
অভিযোগ আছে, নদী এলাকার দেখভাল করার দায়িত্বে বিআইডব্লিউটিএ থাকলেও আশুগঞ্জ অফিস থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে এসব অবৈধ জেটি। অবৈধ বাঁশের জেটি থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করেন জিতু মিয়ার লোক জাহিদ ও কামাল। যার ভাগ পান বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা। তবে প্রভাবশালীদের ভয়ে এসব বিষয়ে মুখ খুলেন না এলাকাবাসী।
জানা গেছে, জাহাজ থেকে যেকোনও পণ্য উঠা নামায় বস্তাপ্রতি এক টাকা ১৫ পয়সা করে আদায় করে জেটি মাটিলকরা। সে হিসেবে প্রতি জাহাজ থেকে ২৫-৫০ হাজার টাকা পান তারা। পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ায় সরকারি কোষাগারে কোনও অর্থ জমা হয় না।
গত ২৪ জানুয়ারি বিআইডব্লিউটিএ’র নিবার্হী ম্যাজিস্টেট মাহবুব জামিলের উপস্থিতে আশুগঞ্জের মেঘনা নদী তীরবর্তী এলাকায় অবৈধ স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় নদীর তীরবর্তী কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তবে অজানা কারণে ব্রিজের নিচে দখল হওয়া অবৈধ জেটি, বালু, ও ডক অপসারণ বা উচ্ছেদ করা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইজারাদার জিতু মিয়া এবং বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক ও আশুগঞ্জ নদী বন্দরের কর্মকতা শহিদ উল্লাহর মধ্যে ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। ফলে ব্রিজের নিচের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই চলে যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ইজারাদার মো. জিতু মিয়া বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে।’
এ সময় বাঁশ দিয়ে জেটি নির্মাণের অনুমতির পাওয়ার কাগজ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেন নি। তিনি জানান, এসব জেটি থেকে তার লোকজনই টাকা তোলে। তবে অন্য লেনদেনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক ও আশুগঞ্জ নদী বন্দরের কর্মকতা শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘অনুরোধ করায় সার মজুদ রাখার স্থানে উচ্ছেদ করা হয়নি। ভ্রাম্যমাণ তাদের সময় দিয়েছেন। আর ব্রিজের গোড়ায় রাখা বালুর মালিককে খুঁজে না পাওয়ায় কিছু করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিগগিরই আবারও অভিযান চালানো হবে।’
ইজাদারের কাছ থেকে টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যাদের অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তারাই মূলত এমন অভিযোগ করছেন।’