ফাঁকিবাজ রাহাত স্যার!

ময়মনসিংহ, জাতীয়

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 00:16:24

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): নাম রাহাত হোসেন শাকিল। তিনি গৌরীপুর চান্দের সাঁটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান না। হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। মাঝে মধ্যে দুই-একদিন কর্মস্থলে আসলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়েই চলে যান। তবে মাস শেষে ঠিকই বেতন উত্তোলন করেন।

সম্প্রতি এই শিক্ষকের অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম খান অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অনুমতি ছাড়া রাহাতের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে শোকজ করে জবাব দিতে বলা হয়েছে। আর রাহাতের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাহাত হোসেন শাকিলের বাড়ি পৌর শহরের নয়াপাড়া মহল্লায়। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি চান্দের সাঁটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। সেখানে কয়েক বছর ভালোভাবে চাকরি করার পর হঠাৎ করেই বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন শিক্ষক রাহাত। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না করিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে মাস শেষে বেতন উত্তোলন করতেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করতেন।

তবে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল নাসরিন বিনতে সুলতানা ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলে কপাল পুড়ে রাহাতের। তিনি রাহাতের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাকে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসার নির্দেশ দেন। এতেই বিরোধ শুরু হয় দুজনের মধ্যে। এর জের ধরে কিছুদিন আগে প্রধান শিক্ষককে হুমকিও দেন রাহাত।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত চান্দের সাঁটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের সংখ্যা রয়েছে ছয়জন। এরমধ্যে সহকারী শিক্ষক রাহাত অনিয়মিত হওয়ায় পাঁচজন শিক্ষক নিয়েই চলছিল এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা। তবে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক নাসরিন নিজের টাকায় দুজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত পিটিআইয়ে প্রশিক্ষণে ছিলেন প্রধান শিক্ষক নাসিরন। আর এই সুযোগে রাহাত হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করে চলে যেতেন। পরে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ইকবাল হোসেন ও মুজাহিদুল হক ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিষয়টি লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করে খাতায় লিপিবদ্ধ করেন। ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টায় বিদ্যালয়ে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে চান রাহাত। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বাধা দিলে তিনি হাজিরা খাতার পাতা ছিড়ে নিয়ে আসেন। ১৬ সেপ্টেম্বর ‘মা সমাবেশ’ পরিদর্শন করতে গিয়ে বিদ্যালয়ে রাহাতকে অনুপস্থিত পান উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান। এরপর ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর বিনা অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে রাহাতকে শোকজ করেন প্রধান শিক্ষক। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর তার বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের দাতা কমিটির সদস্য আব্দুল মোতালেব বলেন,‘রাহাত আমাদের গ্রামের সন্তান। সে ভালো কিছু করলে গ্রামের সুনাম, খারাপ কিছু করলে গ্রামের দুর্নাম। রাহাতের জন্য স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে এটা কখনোই কাম্য নয়। সে স্কুলে যে অনিয়ম করে যাচ্ছে, সেটা শুধরে নিয়ে যদি স্কুলে নিয়মিত আসে তাহলে আমরা ও এলাকাবাসী খুশি হব।’

প্রধান শিক্ষক নাসরিন বিনতে ইসলাম বলেন, ‘রাহাতের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সে আমাকে গালমন্দ করে হুমকি দিয়েছে। হাজিরা খাতার পাতা ছিড়ে নিয়েছে। তাই শোকজের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। চাকরি করতে হলে রাহাতকে নিয়িমত স্কুলে আসতে হবে। নয়তো সে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাক।’

এ বিষয়ে রাহাত হোসেন শাকিল বলেন,‘প্রধান শিক্ষকের শোকজের জবাব দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সেটা মীমাংসা হয়ে গেছে।’

জেলা শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন বলেন,‘রাহাতের বিরুদ্ধে পাঠদান ফাঁকি দিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলন করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর