৫৭ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ

খুলনা, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 18:55:52

মেহেরপুর: মেহেরপুর সরকারি মৎস্য বীজ খামারে মাছের রেনু উৎপাদন শুরু হয়েছে। এতে খামার কর্তৃপক্ষ ও মাছ চাষিরা নানা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। মাছ উৎপাদনে জেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও বাইরে থেকে পোনা আনতে গিয়ে খরচ বেড়ে যায়। এসব সমস্যা সমাধানে এক প্রকার অসাধ্য সাধনের মতোই প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পর সরকারি ওই খামারটিতে রেনু উৎপাদন শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৬২ সালে শহরের উপকণ্ঠে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠে মেহেরপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার। জেলার মৎস্য চাষিদের রেনু পোনার চাহিদা মেটাতে সরকারি এই খামারটি স্থাপিত হলেও দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরে উৎপাদনই হয়নি। পুকুরের পানিতে অতিমাত্রায় আয়রন এবং পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় এতদিন উৎপাদন হয়নি। এ সময়ের মধ্যে পুকুরগুলোতে পলি জমে। হ্যাচারির গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পত্র অকেজো হতে থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রকল্পের অর্থ দিয়ে পুকুর সংস্কার করে পলিথিন ‍দিয়ে আবৃত্ত করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। অপরদিকে আয়রন মুক্ত করার জন্য বসানো হয় ছোট্ট একটি ‘আয়রন রিমুভাল প্লান’। আর এর মধ্য দিয়ে চাষি ও খামার কর্তৃপক্ষের স্বপ্নযাত্রার শুরু হয়। চলতি বছরে ৫৬ কেজি রুই, মৃগেল ও কাতলা মাছের রেনু পোনা উৎপাদন করে চাষিদের কাছে বিক্রি করেছে খামার কর্তৃপক্ষ। পদ্মা নদী থেকে সংগৃহীত মা ও পুরুষ মাছ খামারের পুকুরে পালনের মধ্য দিয়ে রেনু উৎপাদন হচ্ছে।

মেহেরপুর সরকারি মৎস্য বীজ খামার ব্যবস্থাপক ড. আসাদুজ্জামান মানিক জানান, মেহেরপুর জেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে পুকুর ও মৎস্য চাষিদের সংখ্যা। জেলার অর্থনীতিতে সবজির পরেই মাছের অবস্থান। চাষিরা বাড়তি টাকা খরচ করে ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে রেনু পোনা সংগ্রহ করেন। এতে খরচ বেড়ে যায় এবং অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত রেনু মেলে না। ফলে চাষিদের ক্ষতি বেড়ে যায়। আমরা এখানে যে কার্যক্রম শুরু করেছি তা ধরে রাখতে পারলে চাষিদের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করা সম্ভব। তবে এ জন্য দক্ষ জনবল, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও বড় আকারের ‘আয়রন রিমুভাল প্লান’ স্থাপন জরুরি।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বর্তমানে প্রায় ৬ হাজারের উপরে পুকুর রয়েছে। বছরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে ১১ হাজার মেট্রিক টন। মাছের চাহিদা সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন।

মাছ চাষিরা জানান, জেলায় পর্যাপ্ত হ্যাচারি না থাকায় এখানকার মৎস চাষিদের রেনু সংগ্রহের জন্য যেতে হয় ঝিনাইদহ, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। অনেক সময় রাস্তায় মারা যায় রেনু। সরকারি এ খামারে রেনু উৎপাদন শুরু হওয়ায় বেজায় খুশি তারা। তবে জেলায় সবচাইতে বেশি চাষ হয় মনোসেক্স ও পাঙ্গাস। সরকারিভাবে এসব রেনু উৎপাদনেরও দাবি মৎস চাষিদের।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া জানান, রেনুর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য দক্ষ জনবল ও একটি আধুনিক আয়রন রিমুভাল প্লানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে জেলার মাছ চাষে একটি গুণগত পরিবর্তন আসবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর