প্রতিবন্ধী হয়েও আত্মনির্ভরশীল রজ্জব আলী!

, জাতীয়

খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ | 2023-09-01 13:01:00

শিশু বয়সেই টাইফয়েড জ্বরে বিকলাঙ্গ হয়ে যায় দুটি পা। অভাবের তাড়নায় ইচ্ছে থাকা সত্বেও সম্ভব হয়নি মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনো। ক্ষুধার চাহিদা মেটাতে শিশু বয়সেই শুরু করেন দর্জির কাজ। অল্প সময়েই আয়ত্ত্ব করেন জামা-কাপড় তৈরির কাজ। তবে এক যুগের বেশি সময় কাজ করেও দর্জি কাজে ঘুরেনি ভাগ্যের চাকা।

এরপর মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। তবে শারীরিক অক্ষমতার কারণে তিন বছর চাকরি শেষে ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। তবে অর্থাভাবে সফল হতে পারেননি নার্সারি ব্যবসাতেও। এরপর শুরু করেন আতর বিক্রি। এখন আতর বিক্রি করেই চলছে প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ রজ্জব আলীর জীবন।

১৯৫৯ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রজ্জব আলী। মাত্র ১২ বছর বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে বিকলাঙ্গ হয়ে যায় তার দুটি পা। পরিবারের অভাব অনটনে যোগ দেন দর্জি কাজে। এরপর চাকরি এবং ব্যবসা করে টিকিয়ে রাখেন সংসার জীবন।

সংসার জীবনের প্রতিটি ধাপে সংগ্রাম করে সময় পার করলেও কারো নিকট হাত পাতেন নি তিনি। জীবনে কখনোই করেননি ভিক্ষাবৃত্তি। প্রতিবন্ধী হয়েও আতর বিক্রি করে পুরোপুরি আত্মনির্ভরশীলভাবে চলছে রজ্জব আলীর জীবন।

তিন চাকার একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা করে গ্রামের বিভিন্ন হাট বাজারে আতর বিক্রি করে চলছে তার জীবন সংসার। স্ত্রী রাশেদা এবং এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। ছেলে-মেয়েদের বিয়েও দিয়েছেন আতর বিক্রির জমানো টাকা দিয়েই। তবে চিকিৎসার কারণে উঠতি বয়সেই তাকে বিক্রি করতে হয়েছে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ভিটে-মাটি। যে কারণে শেষ বয়সে ঠাঁই নিয়েছেন বড় মেয়ের বাড়িতে।

বড় মেয়ের বাড়িতে দিনযাপন করলেও বুঝা হয়ে উঠেনি তার পরিবারের। তিন চাকার রিকশা নিয়েই সিংগাইর উপজেলার পারিল, গোলাইডাঙ্গা এবং জামসা বাজারসহ আশেপাশের বিভিন্ন হাট-বাজারে আতর বিক্রি করেন তিনি। সারাদিন বিক্রি শেষে আয় হয় মাত্র দুই থেকে আড়াইশো টাকা। এই টাকা দিয়েই কোন রকমে চলছে তার পরিবার।

সিংগাইর উপজেলার পারিল বাজারে আলাপ হলে রজ্জব আলী শিকদার বলেন, পা দুটো বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়ায় সব কাজ করা সম্ভব নয়। নিজের চাহিদা অনুযায়ী তিন চাকার একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি করে নিয়েছেন। এই রিকশাই তার চলাফেরা এবং জীবন-জীবিকার হাতিয়ার। রিকশায় করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আতর বিক্রি করেন তিনি।

প্রতিবন্ধী রজ্জব আলী

ঢাকার মিডফোর্ড থেকে পাইকারি ধরে আতর ক্রয় করে গ্রামের বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে যে মুনাফা হয় তা দিয়েই চলে যায় তার সংসার জীবন। ভাগ্যের চাকা বদলের জন্য এক ছেলে প্রবাস জীবনে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর কোন চাহিদাও নেই বলে জানান তিনি।

পারিল এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, পারিল গ্রামেই রজ্জব আলীর ভিটে-বাড়ি ছিলো। তবে চিকিৎসার জন্য তিনি ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে এখন পার্শ্ববর্তী বাস্তা এলাকায় মেয়ের বাড়িতে থাকছেন। প্রতিবন্ধী হয়েও জীবনে কারো নিকট হাত পাতেন নি, ভিক্ষাবৃত্তি করেনি। সরকার অনেককেই ভিটে-বাড়ি করে দিচ্ছে। একটি ভিটে-বাড়ি পেলে শেষ বয়সে রজ্জব আলীর জন্য বেশ উপকার হবে বলে জানান তিনি।

সিংগাইরের বলধারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাজেদ খান বলেন, ছোট বেলা থেকেই খুব সংগ্রামী জীবন-যাপন করছেন রজ্জব আলী। তাকে একটি ভিটে-বাড়ি অথবা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি সে ঘর-বাড়ির জন্য আবেদন করে তাহলে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা হবে বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিবন্ধী হয়েও রজ্জব আলী আত্মনির্ভরশীল। এই বিষয়টি অবশ্যই বেশ সম্মানের। কোন প্রয়োজনে রজ্জব আলী যোগযোগ করলে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর