হাওরের বুকে প্রশান্তির খোঁজে

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 13:47:08

নেত্রকোনা: সুবিশাল জলরাশি। চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। নৌ-ঘাটে সারি সারি করে দাঁড়ানো নৌকা-ট্রলার। খানিকটা দূরে তাকালেই চোখে পড়বে পানির ওপর যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে লাল-সাদা রঙের নান্দনিক এক ব্রিজ। দেখে মনে হতে পারে সাজানো কোনো এক বিশাল জাহাজ।

মূলত লাল-সাদা রঙে আঁকা সুবিশাল এ ব্রিজটিই বৃদ্ধি করেছে সৌন্দর্য। এ ব্রিজ থেকে যেমন দেখা মিলবে সমুদ্রের মতোই বিশাল জলরাশি আর চোখে পড়বে হাওর-বাংলারপ্রাকৃতিক  সৌন্দর্য। সেই সঙ্গে জলরাশি থেকে ভেসে আসা ছলাৎ ছলাৎ শব্দ মনকে করে তুলবে উতলা।

পর্যটন সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলটি হচ্ছে নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার উচিতপুর। সম্প্রতি আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে স্থানটি মিনি কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় বাড়ছে প্রতিদিনই। পূবালী শীতল হাওয়ায় হৃদয়কে শান্ত করার পাশাপশি হাওরের বৈচিত্রময় লীলা-ভূমিতে বিচরণ ও সাঁতার কাটতে এ মিনি কক্সবাজারে ছুটে আসছে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ। ফলে ক্রমেই পর্যটন সম্ভাবনাময় আকর্ষণীয় জনপদ হয়ে উঠছে উচিতপুর।

নেত্রকোনা শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত মদন উপজেলা। মদন সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটারের পথ উচিতপুর হাওর। নেত্রকোনা থেকে উচিতপুর দেড়ঘণ্টার পিচঢালা পথেও আছে গ্রাম-বাংলার সৌন্দর্য। আর রাস্তার দু’পাশে সারি সারি করে গাছের দৃশ্য যে কাউকে দেবে রোমাঞ্চকর অনুভূতি। নিজস্ব গাড়ি, বাস ও সিএনজিতে পৌঁছানো যাবে উচিতপুরে।

উচিতপুর পৌঁছাতেই প্রথমে চোখে পড়বে বিশাল নৌ-ঘাট। যেখান থেকে মদন, খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় জলযানের যাতায়াত চলে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।

হাওরে ঘুরতে হলে ট্রলার বা ঢেউয়ে দোলানো ডিঙি নৌকা ভাড়া করতে হয় এখান থেকেই। ঘাট থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত আকর্ষণীয় সেই ব্রিজ। ব্রিজটির নাম হচ্ছে বালই ব্রিজ।

জানা যায়, সরকার হাওরবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে হেমন্তকালীন যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুবন্ত রাস্তা ও ব্রিজটি নির্মাণ করে। শুকনো মৌসুমে এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে সড়কটি ডুবে যায়। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন ব্রিজটি ভেসে থাকে।

দুইভাবে যাওয়া যায় ব্রিজটিতে। নৌ-ঘাট থেকে ট্রলারে করে ১০ মিনিটে পৌঁছা যায় ব্রিজে। আবার অনেকেই সেই আঁকাবাঁকা ডুবন্ত রাস্তা ধরে পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি আর হৈ-হুল্লোর করতে করতে পৌঁনে এক ঘণ্টায় পৌঁছে যান সেই বালই ব্রিজে। ব্রিজের পাশেই রয়েছে একটি ভাসমান রেস্টুরেন্ট।

এদিকে আকর্ষণীয় এ জায়গাটিতে একটি মাত্র খাবার হোটেল আর থাকার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় ও পর্যটকদের মতে, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারসহ সরকার এদিকে একটু নজর দিলে আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে উচিতপুর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর