‘রিয়েল হিরো’ ইউএস বাংলার পাইলট জাকারিয়া

ঢাকা, জাতীয়

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 17:50:25

দেড় শতাধিক যাত্রীসহ কক্সবাজারের আকাশে পৌঁছে গেছে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ। জানালা দিয়ে নিচে বিস্তৃত নীল সাগর হাতছানি দিয়ে ডাকছে যাত্রীদের। ফ্লাইটটির অবতরণ মুর্হূত তখন, কিন্তু নামলো  না।  যান্ত্রিক ত্রুটি আঁচ করতে পেরে নিরাপদে অবতরণের সুযোগ খুঁজছিলেন পাইলট  জাকারিয়া সবুজ। কিন্তু কক্সবাজারের এয়ারপোর্টে জরুরি অবতরণের প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকায় পাইলট প্লেন ঘুরিয়ে নেন পাইলট। এরপর রওনা হোন চট্টগাম বিমানবন্দরে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টায় অনটাইমে প্লেনটি শাহজালাল এয়ারপোর্ট থেকে কক্সাবাজরে উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়। কক্সবাজারের আকাশে পৌঁছে যান্ত্রিক ত্রুটির সংকেত পায়। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে দেন। সেই সঙ্গে জরুরি অবতরণের অনুমতি চান পাইলট। তড়িৎ গতিতে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে। রানওয়ের দিকে মুখ করে সাজানো হয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও জরুরি অ্যাম্বুলেন্স।

কিছুক্ষণ পর রানওয়ে দিকে ফ্লাইটটি নিয়ে আসেন ক্যাপ্টেন জাকারিয়া। তার সামনে আর কোনো বিকল্প তখন নেই। পেছনের চাকা নামিয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত এয়ারপোর্টের রানওয়ে স্পর্শ করলো ইউএস বাংলার বোয়িং বিএস ১৪১।

আতংকগ্রস্থ যাত্রীর চোখে মুখে তখন আশার আলো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে নামার অপেক্ষা। তখনও গতি ঝাড়িয়ে প্লেন ছুটে চলছে সামনের দিকে। নোজ গিয়ার না খোলা অবস্থায় কোন ধরণের ধাক্কা বা  আঁকা বাঁকা পথে না গিয়ে প্লেন রানওয়ে ধরে সোজাসোজি চলতে থাকলো।

এ দৃশ্য এয়ারপোর্টের আশেপাশে থাকা বহুলোক তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করছিলেন। স্বাভাবিক ল্যান্ডিংয়ের মতই উড়োজাহাজটি রানওয়ে স্পর্শ করে সামনের দিকে যাচ্ছে। তখন প্লেনের সামনে চাকা বা নোজ গিয়ার নামছে না। এ অবস্থায়ও প্লেন সোজাসোজি চলছে লাইনচুতি ঘটছে না। গতি নিয়ন্ত্রণের পর সামনের  অংশ  রানওয়ের গায়ে হালকা স্পর্শ খায়।

তখন পেছন থেকে ছুটে আসছে একের পর এক ফায়ার সার্ভিসে জরুরি গাড়ি। প্লেন সামলে নেন পাইলট জাকারিয়া। তারপর যাত্রীরা একে একে নিরাপদে জরুরি নির্গমন দরজা দিয়ে নামতে থাকেন।

যান্ত্রিক ত্রুটির পরও প্লেনের এমন সফল ও নিরাপাদ ল্যান্ডিংয়ের পর প্রশংসা ভাসছেন পাইলট জাকারিয়া এবং ফাস্ট অফিসার রউফ।

তাদেরকে হিরো আখ্যা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট ভেসে উঠছে। হাসিমুখে তাদের ছবিও দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বহু পাইলট ক্রু এ ফ্লাইট সংশ্লিষ্টরা তাদের যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাপ্টেন জাকারিয়ার ছবি দিয়ে তার সাহসিকতা ও চমৎকার ল্যান্ডিংয়ের ভুয়সী প্রশংসা করছেন।

পাইলট জাকারিয়া তার প্রতিক্রিয়া বলেন ‘আমার প্রধান দায়িত্ব ছিল, যাত্রীদের কীভাবে সুস্থ ও নিরাপদে নিচে নামানো যায়। সেটাই করেছি। মাথায় যদি অন্য কিছু আনি তাহলে এদিকে মনোযোগ দিতে পারতাম না।’

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম-পিআর) কামরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে ১১ টা ৩০ এ অনটাইমে ফ্লাইটটি ছেড়ে যায়। কক্সবাজারে এয়ারপোর্টে জরুরি ল্যান্ডিং সুবিধা না থাকায় চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাইলট । অত্যন্ত সফল ও দক্ষতার সঙ্গে প্লেনটি অবতরণ করে।

তিনি আরো জানান, ইউএসব বাংলা শুরু থেকেই ফ্লাইট সেফটির ব্যাপারে সতর্ক। নেপাল দুর্ঘটনার পরও আরও বেশি সতর্ক। আজকে যা হয়েছে তা যে কোনো এয়ারলাইন্সের বেলায় ঘটতে পারত।  

বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেফট্যান্টেন্ট আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘অসাধারণ দক্ষতা  এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বে পরিচয় দিয়েছেন ক্যাপ্টেন জাকারিয়া সবুজ ও ফাস্ট অফিসার সাইয়্যেদ রউফ।

আরেকজন লিখেছেন, ‘স্যালুট ক্যাপ্টেন জাকারিয়া এবং ফাস্ট অফিসার রউফ। অসাধারণ দক্ষতার জন্য।  অ্যাভিয়েশন ওর্য়াল্ড  তোমাদের জন্য গর্বিত।

 শামসুদ্দোহা নামে একজন লিখেছেন, ‘অভিজ্ঞ ল্যান্ডিং। পাইলট বহু মানুষের জীবন রক্ষা কারেছেন। ক্যাপ্টেনের কাছে এর চেয়ে আর কোনো ভালো বিকল্প ছিলো না। তা না হলে তাকে সাগরে বা অন্যকোন জায়গায় প্লেন নামাতে হতো যেখানে অনেক হাতাহতের আর ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটত।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের পাঁচটি গাড়ি ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়।

ফ্লাইটে ১১ শিশুসহ (ইনফ্যান্ট) ১৬৪ জন যাত্রী ও ৭ জন ক্রু ছিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা। এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ফ্লাইট সফলতার সঙ্গে তারা পরিচালনা করেছে। অল্প সময়ের মধ্যে দেশের কোন এয়ারলাইন্সের এত ফ্লাইট পরিচালনা এটাই প্রথম দেশে।

এভিয়েশনগুলো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশনের গত বছরের নিরীক্ষায় বাংলাদেশ বিমান ও ইউএস-বাংলার নম্বর ৭০-এর ওপরে। বিশ্বের গড় হচ্ছে ৬০।

এ সম্পর্কিত আরও খবর