বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতেই নতুন স্বপ্ন শরীফের

, জাতীয়

শেখ সবুজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঝিনাইদহ | 2023-08-28 16:13:50

বর্তমানে জনপ্রিয় সবজি’র মধ্যে ক্যাপসিকাম অন্যতম। ক্রমেই বড় শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যন্তপল্লীর মাঠে-ঘাটে। শৈলকুপা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মসলেহ উদ্দিন তুহিন ও শিক্ষিত বেকার যুবক নেওয়াজ শরিফের মাধ্যমে গড়ে তোলা বাহারি ক্যাপসিকাম ক্ষেত নিয়ে স্থানীয়দের আগ্রহের শেষ নেই।

বাস্তবতার স্বপ্ন রাঙাতে পৌর এলাকার পাঠানপাড়া গ্রামে দৃষ্টিরন্দন ৪০ শতাংশ জমিতে দোল খাচ্ছে ক্যাপসিকামের আবাদ। নেওয়াজ শরীফ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে পাশ করে চাকরির পিছনে ছুটে ব্যর্থ হয়ে এলাকায় প্রথম মিষ্টি মরিচ চাষে ঝুঁকে পড়েন এবং তার দেখাতে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন।

সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে নেওয়াজ শরিফ জানায়, করোনাকালীন মহামারীর মধ্যে একদিকে অর্থাভাব অন্যদিকে বেকারত্বের ফাঁদে পড়ে তার বন্ধু রাশেদুল আলম বনির সাথে আলোচনা করে আদর্শ চাষি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রথমে তার বাবা শরিফুল ইসলাম রাজি না হলেও একপর্যায়ে ছেলের স্বপ্ন পূরনের জন্য ৫ হাজার চারা লাগানোর উপযোগি জমি তৈরিতে সাহায্য করেন। বিজ্ঞান অনুসারে একটি উন্নত প্রজাতির কৃষি খামার গড়ে তোলার লক্ষ্যেই তার সামনে হাসছে সবুজ ক্যাপসিকাম।

দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও বর্তমানে ক্যাপসিকামের চাষ প্রসারিত হচ্ছে

তিনি আরও বলেন, বেলে দোআঁশ মাটি এ মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য ভালো। মেধা শ্রম ও সাধনার সমন্বয় ঘটিয়েই তিনি সফলতা পেয়েছেন । তিনি বিশ্বাস করেন, স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য শুধু চাকরিতে নয় কৃষিতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। এ কারণে যথার্থভাবে লেখাপড়াকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি খামার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে তার নিরন্তর যাত্রা শুরু হয়েছে।

দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও বর্তমানে ক্যাপসিকামের চাষ প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষক ভাইয়েরা এর চাষ শুরু করেছে। যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া মিষ্টি মরিচের বিদেশে রফতানির সম্ভাবনাও রয়েছে প্রচুর। সারা বিশ্বে টমেটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ বা ক্যাপসিকাম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ’সি’।

দৃষ্টিরন্দন ৪০ শতাংশ জমিতে দোল খাচ্ছে ক্যাপসিকামের আবাদ

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আকরাম হোসেন জানান, অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস অবধি ক্যাপসিকাম চাষের উপযোগি সময়। আগে থেকে বীজতলা তৈরি করে রাখা হয় ১০ সেমি. দূরে দূরে। লাইন করে এর বীজ বুনতে হয়। ৭-১০ দিন পর চারা ৩-৪ পাতা হলে মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা স্থানান্তর করতে হয়।

সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা তৈরি করা বেডে ১.৫ ফুট দূরে দূরে লাইনে রোপণ করা হয়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় বলে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে রাখলে ভেতরের তাপমাত্রা বেশি থাকে। যেহেতু, ক্যাপসিকাম খরা ও জলাবদ্ধতা কোনটাই সহ্য করতে পারে না, তাই প্রয়োজন অনুসারে জমিতে সেচ দিতে হবে। কোন গাছে ফল ধরা শুরু হলে খুঁটি দিতে হবে যাতে গাছ ফলের ওজনে হেলে না পড়ে। জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। তিনি বলেন পাঠানপাড়া গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক নেওয়াজ শরিফের ক্ষেতটি নিয়মিত দেখভাল করা হয়। এখান থেকে বহু যুবক কৃষিকর্মীর সাথে পরামর্শ করে অনুপ্রাণিত হবে বলে মনে করি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর