‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে’

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 02:56:32

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে গেন্ডারিয়ার জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) আয়োজিত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাপস এই মন্তব্য করেন।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলনের যে সূত্রপাত, তার অন্যতম পুরোধা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যেমনি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পরে মুক্তিযুদ্ধের সকল ইতিহাস থেকে জাতির পিতাকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে তেমনি পঁচাত্তরের পরে ভাষা আন্দোলনসহ তার পূর্বের অবদানগুলো মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকেই আসলে স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল সূচনা, সেটাও মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।

অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু, ৫২ সালে রক্ত দেওয়া এবং আমরা অর্জন করতে পেরেছিলাম ৫৬ সালে। তাও ওয়ান অফ দ্য স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজেস অব পাকিস্তান। উর্দু স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ, তার সাথে আরেকটি রাষ্ট্র ভাষা হলো বাংলা। বাংলা দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও আমরা ছিলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ।

বরেণ্য ব্যক্তিদের সাথে করপোরেশনের সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা হবে জানিয়ে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এখন থেকে ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকার বরেণ্য, পদকপ্রাপ্ত ও স্বনামধন্য ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিভিন্ন কার্যক্রম ও বিভিন্ন সম্মাননা প্রদর্শনের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রমে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা যায়, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

তাপস বলেন, আজ ৮ ফাল্গুন। দুদিন পরে আমরা ভুলে যাবো যে, সেটা ১০ ফাল্গুন বা ১১ ফাল্গুন। এই ভুলে যাওয়াটা আমাকে পীড়া দেয়।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহারে বারবার নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। আজকে মোবাইল ফোনে যে বাংলা বার্তা আমরা পায়, তা শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা করপোরেশনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার সকল সরকারি-বেসরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের নামফলক-চিহ্নফলক অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে। কোনো ইংরেজি শব্দ বাংলা বর্ণ দিয়ে লেখা যাবে না।

ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরও বলেন, এই গণবিজ্ঞপ্তি আমরা জারি করেছি, কারণ আজকে আমরা দেখছি, অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে বাংলাভাষা তার মর্যাদা এবং সম্মান হারিয়ে ফেলেছে। এজন্য আমরা মনে করি, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকার সকল নামফলক এবং চিহ্নফলক বাংলায় হওয়া আবশ্যক।

এ সময় ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, আমি একদিন একটি চুল কাটার দোকানে গেলাম। আমি চুল কেটে ওঠছি। তখন দেখি এক মা তার সন্তানকে চুল কাটার জন্য নিয়ে এসেছে। স্বভাবতই ছোটবেলায় সবাই যেমন চুল কাটাতে একটু নারাজ থাকে, তাদেরকে মানিয়ে মানিয়ে চুল কাটাতে হয়। তেমনি সেই ছোট বাচ্চাটাও চুল কাটাতে আগ্রহী না। নাপিত সেই বাচ্চাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। পরে নাপিতকে বাচ্চাটির মা বলছে, আমার ছেলে তো বাংলা বুঝে না, তাকে বলে লাভ নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট অভিনয় শিল্পী সালমা বেগম সুজাতা বলেন, বায়ান্ন সালে যে সকল শহীদের রক্ত এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলা ভাষা। সেই ত্যাগের ফসল আমাদের এই একুশে পদক। এটা মহান প্রাপ্তি, বিশেষ প্রাপ্তি। এটা স্বর্গীয় সুখ।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে এবং সচিব আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মেয়র প্যানেলের ১ নং সদস্য ও ৪৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শহিদ উল্লাহ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে খ্যাতিমান অভিনেতা, প্রয়াত এটিএম শামসুজ্জামান এবং ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর