‘২১ আগস্ট আ. লীগের সমাবেশে মঞ্চে গ্রেনেড ছুড়েছিলেন ইকবাল’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 04:19:58

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশ চলাকালে গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হুরকাতুল জিহাদের সদস্য ইকবাল হোসেন সেদিন সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। ওই দিন মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুঁড়েছিলেন গ্রেফতারকৃত ইকবাল। 

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। 

এর আগে রাজধানীর দিয়াবাড়ি থেকে গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইকবালকে গ্রেফতারের করে র‌্যাব।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, হামলার সময় তিনি মঞ্চের উদ্দেশ্যে গ্রেনেড ছুঁড়েন। ছদ্মবেশে ইকবাল দেশে-বিদেশে আত্মগোপন করেন। এ সময় তিনি একাধিকবার পেশা পরিবর্তন করেন। এমনকি বিদেশে থাকা অবস্থায়ও তিনি নাম পরিবর্তন করেছিলেন।
 
ইকবালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব ডিজি বলেন, জঙ্গি ইকবালের বাবার নাম আব্দুল মজিদ মোল্লা। তার বাড়ি ঝিনাইদহে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় সে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিল।
 
তিনি আরও বলেন, ‘ইকবাল দেশে অবস্থানকালে সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে বিরোধ-কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০০১ সালে তার চিন্তা-চেতনায় একটা মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আসে। সে ঝিনাইদহের এক স্থানীয় জঙ্গি সদস্যের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে যোগদান করেন। ২০০৩ সালে তিনি মুফতি হান্নান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন।’
 
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘২০০৪ সালের আগস্টে মুফতি হান্নানের নির্দেশে তিনি ঢাকায় আসেন এবং গোপন আস্তানায় অবস্থান করেন। সেখানে হুজিবি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যান্যদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করেন। তিনি মুফতি হান্নানের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন।’
 
‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিষয়ে র‌্যাব জানায়, মুফতি হান্নানের নির্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। হামলা পরিচালনার জন্য মুফতি হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। হামলার সময় তিনি মঞ্চ উদ্দেশ্য করে গ্রেনেড ছোঁড়েন। ঘটনার পর ঝিনাইদহে গিয়ে আত্মগোপন করেন।'
 
র‌্যাব ডিজি বলেন, ২০০৮ সালে জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহে তার নিজ বাড়িতে, পরবর্তীতে গাজীপুর, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। আত্মগোপনে থাকাকালে সে নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশার মেকানিক ইত্যাদি ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
 
তিনি আরও বলেন, র‌্যাবের অভিযানের কারণে ২০০৮ সালে দেশ ত্যাগ করেন। প্রবাসে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় প্রথমে সেলিম এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে ২০২০ সালের শেষের দিকে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফেরত এসে ইকবাল আত্মগোপনে থেকে সমমনাদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করেন। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা জঙ্গি ইকবাল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
 
উল্লেখ্য,২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় তৎকালীন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের কয়েক শত নেতা-কর্মী।
 
গ্রেনেড মামলায় দণ্ডিত ৩৩ আসামি কারাগারে থাকলেও পলাতক ছিলেন ১৬ জন। ইকবাল গ্রেফতার হওয়ায় এখন পলাতক রইলেন ১৫ জন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত।ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয় আরও ১১ জনের।
 
 

এ সম্পর্কিত আরও খবর