বাজারে চাহিদা বেড়েছে দেশি মাল্টার

বরিশাল, জাতীয়

সিদ্দিকুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:44:08

বরিশাল: বরিশাল অঞ্চলে সুস্বাদু ফল মাল্টার চাষ হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। আর বর্তমানে দেশীয় পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফরমালিনমুক্ত এই মাল্টার চাহিদাও বেড়েছে অনেক।

স্থানীয় ফলের দোকান ও আড়তগুলোতে কদিন আগেও বিদেশি মাল্টার রাজত্ব ছিল। তবে এখন সেখানে দেশি মাল্টার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

বিদেশি মাল্টার তুলনায় দেশি এই মাল্টাগুলো অনেক সুস্বাদু। কিন্তু সবুজ ও হালকা হলুদ-সবুজ বর্ণের মাল্টাগুলো সুস্বাদু হলেও রঙের কারণে এখনো ক্রেতাদের মাঝে পুরোপুরি আস্থা আনতে পারেনি। তবে সচেতন নাগরিকরা এখন এই মাল্টা ক্রয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানান খুচরা ও পাইকারি ফল ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নগরীর ফলপট্টি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় দোকানেই অন্যান্য ফলের পাশাপাশি দেশি মাল্টা বিক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়াও নগরীর ভ্রাম্যমাণ ফলের দোকানগুলোতেও এই মাল্টা বিক্রয় করতে দেখা গেছে।

ফলপট্টির একাধিক ব্যবসায়ীরা বার্তা২৪.কমকে জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশি মাল্টা রাখতে শুরু করেছেন। বর্তমানে এর চাহিদা রয়েছে। দেখতে সবুজ হলেও এই ফলটি অনেক মিষ্টি এবং সম্পূর্ণ ফরমালিন মুক্ত।

তারা আরও জানান, বর্তমানে বরিশালের পিরোজপুর, বরিশাল সদর, বাবুগঞ্জ, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর থেকে এই মাল্টাগুলো আসে। এছাড়াও বিভাগের অন্যান্য জেলায় এই মাল্টা চাষ হয়। তবে পিরোজপুরে বেশি মাল্টা চাষ হয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশি মাল্টা পাইকারি প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকা দরে ক্রয় করছেন। পাশাপাশি সব ধরনের খরচ বাদ দিয়ে খুচরা দোকানগুলোতে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে প্রকারভেদে মাল্টা কেজি প্রতি ১৫০-১৭৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বিদেশি (দক্ষিণ আফ্রিকা) মাল্টা কেজি প্রতি ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

তাছাড়া আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ফল বাজারে বিদেশি মাল্টার বিপরীতে বরিশাল অঞ্চলে উৎপাদিত দেশি মাল্টার রাজত্ব থাকবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে মাল্টা চাষ শুরু থেকে দুই বছরের মধ্যে ভালো মানের ফলন পাওয়ায় চাষিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষরাও এই ফল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বরিশাল সদর উপজেলার মাল্টা চাষি আমানত গ্রিন এগ্রোর মালিক মো. সাদিক হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, গত চার বছর আগে থেকে এই মাল্টা চাষ শুরু করেন। আর গত বছর থেকে মাল্টা গাছে ফল আসতে শুরু করে। তাছাড়া এবার এতো বেশি পরিমাণ ফল হবে তা কল্পনা করতে পারেননি তিনি।

তিনি জানান, তার ফার্মে প্রায় ২২০টি মাল্টা গাছ রয়েছে। যার মধ্যে এ বছর প্রায় ৬০টি গাছে মাল্টার ফলন হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ৬ মণ মাল্টা স্থানীয়দের কাছে বিক্রয় করেছেন। বর্তমানে দেশি এই মাল্টার চাহিদা রয়েছে বলে জানান সাদিক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরিশাল বিভাগে ১৬৪ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ১৩৮ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন মাল্টা ফল উৎপাদন হয়েছে। হেক্টর প্রতি মাল্টার গড় উৎপাদন ৬ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। যার মধ্যে পিরোজপুর জেলায় সর্বোচ্চ ৯৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৯শ ৯৯ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন মাল্টা। এছাড়াও বরিশাল জেলায় ২৬ হেক্টর জমির বিপরীতে ৫২ মেট্রিকটন, ঝালকাঠিতে ১১ হেক্টর জমির বিপরীতে ২০ মেট্রিক টন, পটুয়াখালীতে ৬ হেক্টর জমির বিপরীতে ১২ মেট্রিক টন, বরগুনা জেলায় ১০ হেক্টর জমির বিপরীতে ২০ মেট্রিক টন এবং ভোলা জেলায় ১৬ হেক্টর জমির বিপরীতে ৩৫ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের উপপরিচালক তুষার কান্তি সমদ্দার বার্তা২৪,কমকে জানান, পূর্বের তুলনায় বর্তমানে দেশি মাল্টা উৎপাদনের পাশাপাশি চাহিদাও বেড়েছে দ্বিগুণ। তাছাড়া কৃষি অধিদপ্তর সব সময় মাল্টা চাষিদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছে। পাশাপাশি নতুন চাষিদেরও নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে বরিশাল অঞ্চলে বারি মাল্টা-১ জাতের চারা রোপণ করা হচ্ছে। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় এবার মাল্টার দ্বিগুণ উৎপাদন হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর