রোগী ও নারী যাত্রীদের দুর্ভোগের এক বছর

খুলনা, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 20:42:43

মেহেরপুর: মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সরাসরি বাস চলাচল। ফলে দুঃসহ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে যাত্রীরা। বিশেষ করে হাসপাতালগামী রোগী ও নারী যাত্রীদের কষ্টের সীমা নেই। কুষ্টিয়া জেলার অংশে সড়কের বেহাল দশার কারণে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা মেহেরপুর থেকে রাজধানী ও উত্তরবঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া লোকাল বাসের পাশাপাশি দূরপাল্লার বাসও চলাচল করে। সাধারণ মানুষের সাশ্রয়ী বাহন এই বাস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই সড়কে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে।
আগে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে দুই জেলার বাস মালিক সমিতির বাস চলাচল করত। তখন মেহেরপুর থেকে প্রতি ১০ মিনিট পর পর একটি করে বাস কুষ্টিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যেত এবং একটি করে বাস মেহেরপুর পৌঁছাত। ফলে ৬০ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই সড়কে যাত্রীরা সহজেই বাস পেত।

কিন্তু প্রায় এক বছর আগে থেকে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মেহেরপুর স্ট্যান্ড থেকে বাস ছেড়ে জেলার সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার খলিশাকুন্ডি বাজারে গিয়ে যাত্রী নামিয়ে দেয়। ওই যাত্রীরা খলিশাকুন্ডি থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসে ওঠে। মূলত দুই জেলার মধ্যবর্তী স্থান খলিশাকুন্ডিতে বাস স্টপেজ গড়ে উঠেছে। দুই জেলার মালিক সমিতির বাস সেখান থেকে নিজ নিজ জেলার মধ্যে আলাদাভাবে চলাচল করছে। এতে যাত্রীদের কপালে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।

খলিশাকুন্ডি লোকাল বাসের সময় নিয়ন্ত্রক (স্টাটার) আসাদুজ্জামান বাবু জানান, কুষ্টিয়া থেকে খলিশাকুন্ডি পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক পথ চলাচলের অযোগ্য। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু রাস্তা ঠিক না হওয়ায় সরাসরি বাস চলাচল করছে না। যাত্রী দুর্ভোগ দেখে নেতাদের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।


মেহেরপুর জেলার একটি বাসের চালক শামীম রেজা বলেন,‘লোকাল বাস মালিক সমিতির বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া পৌঁছাতে হয়। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে আমরা ঠিক সময়ে কুষ্টিয়া পৌঁছাতে পারি না। এতে ফিরে আসার নির্ধারিত ট্রিপ হাতছাড়া হয়ে যায়। ফলে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়। এ কারণে মালিক সমিতি সরাসরি বাস চালাচ্ছে না।’

কুষ্টিয়ার একটি বাসের চালক সুমন হোসেন বলেন,‘রাস্তার বেহাল দশার মধ্যে চালাতে গিয়ে বাসের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। নিজেদের আয় ও যাত্রীদের দুর্ভোগ বিবেচনায় রেখে মালিকরা বাস চালাচ্ছে। রাস্তার যে অবস্থা তাতে এ সড়কে বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার কথা।’

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র গাংনীর মিনারুল ইসলাম ও মেহেরপুরের জান্নাতুল আক্তার বিউটি বলেন,‘মধ্যবর্তী স্থানে বাস পরিবর্তন করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে আমরা ঠিক সময়ে কলেজে যেতে পারছি না। পরীক্ষার দিনগুলোতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রী আমাদের মতোই মেহেরপুর থেকে যাতায়ত করে।’

এদিকে রোগী পরিবহনে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গরীব মানুষের একমাত্র বাহন হচ্ছে বাস। ছোট ছোট যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্সে খরচ বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রোগী নিয়ে যায় বাসে। কিন্তু মধ্যবর্তী বাস পরিবর্তনের ফলে রোগীরা যেমন অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে তেমনি বেড়ে যাচ্ছে খরচ।

মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়াগামী নারী যাত্রী মুক্তা বলেন,‘মধ্যবর্তী স্থানে বাস পরিবর্তন করতে গিয়ে অধিকাংশ সময় হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারি না।’

সরাসরি বাস চলাচল শুরুর বিষয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন,‘রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় সরাসরি বাস চলাচল করছে না বলে মালিক সমিতি আমাকে জানিয়েছে। আমি দুই জেলার মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। জনগণের স্বার্থে পুনরায় সরাসরি বাস চলাচলের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। রাস্তা সংস্কার হচ্ছে। অচিরেই আমরা বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে পারব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর