রাজবাড়ীর জয়যাত্রা!

, জাতীয়

আব্দুল্লাহ আল মামুন | 2023-08-31 12:24:43

আজ রাজবাড়ী জেলার শুভ জন্মদিন। পদ্মা বিধৌত রাজবাড়ী জেলা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৪ সালের পহেলা মার্চ যাত্রা শুরু হয় | সাবেক গোয়ালন্দ মহকুমার চারটি থানা পাংশা, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী সদর নিয়ে রাজবাড়ী জেলা গঠিত হয়। ২০০৯ সালের নভেম্বর পাংশার অংশবিশেষ এলাকা নিয়ে কালুখালি উপজেলা সৃষ্টি হয়।

বর্তমান রাজবাড়ী জেলা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৬৫ সালে ইংরেজরা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভের পর উত্তর পশ্চিম ফরিদপুর (বর্তমান রাজবাড়ী জেলার কিয়দংশ) অঞ্চল রাজশাহীর জমিদারির অন্তর্ভুক্ত ছিল। নাটোরের রাজার জমিদারি চিহ্ন হিসেবে রাজবাড়ী জেলার বেলগাছিতে রয়েছে স্নানমঞ্চ, দোলমঞ্চ। পরবর্তীতে এ জেলা এক সময় যশোর জেলার অংশ ছিল। ১৮১১ সালে ফরিদপুর জেলা সৃষ্টি হলে রাজবাড়ীকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

রাজবাড়ী
 

এছাড়াও রাজবাড়ী জেলার বর্তমান উপজেলাগুলো অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাংশা থানা এক সময় পাবনা জেলার অংশ ছিল। ১৮৫৯ সালে পাংশা ও বালিয়াকান্দিকে নবগঠিত কুমারখালী মহকুমার অধীনে নেওয়া হয়। ১৮৭১ সালে গোয়ালন্দ মহকুমা গঠিত হলে পাংশা ও রাজবাড়ী এ নতুন মহকুমার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং রাজবাড়ীতে মহকুমা সদর দফতর স্থাপিত হয়।

১৮০৭ সালে ঢাকা জালালপুরের হেড কোয়ার্টার ফরিদপুরে স্থানান্তর করা হয় এবং পাংশা থানা ফরিদপুরের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৫০ সালে লর্ড ডালহৌসির সময় ঢাকা জালালপুর ভেঙে ফরিদপুর জেলা গঠিত হলে গোয়ালন্দ তখন ফরিদপুরের অধীনে চলে যায়। তখন পাংশা, বালিয়াকান্দি পাবনা জেলাধীন ছিল।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকালে ১৭৯৩ সালে রাজবাড়ী যশোর জেলার অর্ন্তভুক্ত হয়েছিল। এক সময়ে বেলগাছি কিন্তু গোয়ালন্দ মহকুমার এক্টা থানা ছিল এবং রাজবাড়ী নামে কিছুই ছিল না! তবে লক্ষিকোল রাজা সূর্যকুমার এবং বানিবহ জমিদার গিরীজাশংকর মজুমদার বর্তমান রাজবাড়ী পৌর এলাকার সীমানার মধ্যে নানা স্থাপনা গড়ে উন্নত জনপদে পরিণত করেন।

পদ্মা বিধৌত রাজবাড়ী জেলা

বিনোদপুর সংলগ্ন বাজার গড়ে উঠে যেটাকে রাজবাড়ী বাজারও বলা হত। নদী ভাঙনের ফলে ১৮৭৫ হতে ১৮৮০ সালের মাঝে গোয়ালন্দ মহকুমার অফিস স্থাপনা রাজবাড়িতে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়।

শহরের লক্ষিকোল রাজারবাড়ি নামে জেলার নামকরণ হয়েছে মনে করা হয়। যদিও সেই রাজার বাড়ি আজ বিলুপ্ত। ৩৭ বছর হল জেলা হয়েছে রাজবাড়ী তথাপি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। নতুন রাস্তা ঘাট অফিস আদালত মার্কেট অনেক কিছু নির্মিত হলেও দৌলতদিয়ায় পদ্মা ব্রিজ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। রাজবাড়ীতে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ দরকার।

পদ্মাকন্যা রাজবাড়ী

গোয়ালন্দের বিখ্যাত পদ্মার ইলিশের সেই জৌলুস আজ অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে আসছে। ঐতিহাসিক শিলিগুড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন এখন আর চলে না। তারপরেও বর্তমান সরকারের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে রাজবাড়ী। উন্নয়নের ছোঁয়া আজ সর্বত্র। শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠছে, শিক্ষার হার বাড়ছে।

জেলার ৩টি পৌরসভাতে শহর কেন্দ্রিক সেবা বাড়ছে। ব্যতিক্রমী ফসল (ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, কমলা) উৎপাদিত হচ্ছে গ্রামে। কৃষিতে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রথম পদ্মা সেতু চালুর পথে, ঢাকা-রাজবাড়ী ট্রেন চালু হবে আশা করা যায়। ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণের শহর পদ্মাকন্যা রাজবাড়ী আরও সামনে এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশা।

লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন, নির্বাহী প্রকৌশলী, রংপুর গণপূর্ত বিভাগ

এ সম্পর্কিত আরও খবর