প্রেম নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হয়েছে কলেজ ছাত্র রওনক : পুলিশ

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ৪ | 2023-08-25 16:14:51

প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারে কলেজছাত্র রওনক হোসেন রনো হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচজনকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একথা বলেন ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহিম খাঁন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রিয়াজ আলম ওরফে ফারহান, ফাহিম আহম্মেদ ওরফে আব্রো, ইয়াসিন আলী, আল আমিন ওরফে ফারাবী খাঁন এবং লিজা আক্তার ওরফে মাইশা। গত ১ মার্চ শাঁখারী বাজারে দোল উৎসবের ভিড়ের মধ্যে কলেজছাত্র রওনককে (১৮) ছুরি মারে একদল যুবক। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে। আজিমপুর নিউ পল্টন লাইন স্কুল ও কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রওনক কামরাঙ্গীরচরে রনি মার্কেট এলাকার শহিদ মিয়ার ছেলে। বন্ধুদের সঙ্গে দোল উৎসব দেখতে পুরান ঢাকায় গিয়ে তিনি নিহত হন। পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার ইব্রাহিম বলেন, মাইশা নামে এক তরুণীর সঙ্গে রওনকের প্রেম ছিল। ওই সম্পর্ক ভেঙে তুহু নামে আরেক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন রওনক। কিন্তু তুহুকে অন্য এক ছেলে পছন্দ করে। ওই ছেলের সঙ্গে রওনকের ঝগড়াও হয়েছিল। “প্রতিশোধ নিতে ওই যুবকের পরিকল্পনায় হোলি উৎসবে রওনককে খুন করা হয়।” ওই যুবকের নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, “তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাই সঙ্গত কারণেই তার নামটি বলছি না।” ওই যুবকের এই পরিকল্পনায় রওনকের সাবেক প্রেমিকা লিজাও জড়িয়ে পড়েন বলে পুলিশের দাবি। উপ-কমিশনার ইব্রাহিম বলেন, ঘটনার দিন রওনক কামরাঙ্গীর চরের বাসা থেকে বেরিয়ে কলাবাগানে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। “তুহুকে যে ছেলে পছন্দ করত তার পরিকল্পনায় মাইশার প্ররোচনায় রওনকসহ আট বন্ধু শাঁখারী বাজার যায়। রওনক পৌঁছনোর আগেই ওই যুবকসহ কয়েকজন লক্ষ্মীবাজার কেএফসির সামনে একত্রিত হয়। সে সময় কয়েকজনকে ছুরি সরবরাহ করে ওই যুবক।” রওনক শাঁখারী বাজার শনি মন্দিরের সামনে গেলে প্রথমে মারধর এরপর ছুরিকাঘাত করা হয়। উপ-কমিশনার ইব্রাহিম বলেন, “তুহুর দুই প্রেমিকের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তবে খুনের ঘটনার সঙ্গে তুহুর কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।” রওনক, মাইশা, তুহু কিংবা এই বন্ধু মহলের কেউ কোনো নির্দিষ্ট এলাকা কিংবা একই প্রতিষ্ঠানের নয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা ইব্রাহিম। পুলিশ বলছে, ফারহান নিজেই ছুরিকাঘাত করেছিলেন। ফোরহানসহ পাঁচজনকেই মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। রিমান্ডের আবেদনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, রওনককে কিল-ঘুষির পাশাপাশি কোমর ও উরুতে ছুরিকাঘাত করা হয়। রওনক তখন দৌড়ে শনিদেব মন্দিরের কাছে এক আইনজীবীর চেম্বারে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তার বন্ধুরা তাকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার মৃত্যু ঘটে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বলে তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই (তদন্ত) জানে আলম মুনশী জানান। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে ১০ দিন করে হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেছিল ‍পুলিশ। শুনানি শেষে প্রত্যেককে তিন দিন হেফাজতের নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস। শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহ আলম বলেন, “এরা কিশোর, অপ্রাপ্ত বয়স্ক। শিশু আদালতে তাদের শুনানি হওয়া উচিত। আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান থাকলেও তাদের হাজির করা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টা পর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর