অর্থমন্ত্রীর নিষ্ক্রিয়তায় গতিহীন অর্থমন্ত্রণালয়!

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 08:43:08

যেকোনও দেশের সরকারের চালিকা শক্তি মূলত আর্থিক খাত। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা থাকলে সরকারের সফলতাও তরতর করে বৃদ্ধি পায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে নানা দিক থেকে আলোচনা সমালোচনা উঠলেও ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও লক্ষণই চোখে পড়েনি। মন্ত্রী বদল হয়েছে, কর্মকর্তা বদল হয়েছে কিন্তু বদলায়নি বিশৃঙ্খলকারীরা। উল্টো তারা বহাল তবিয়তে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে চলেছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নানা সময় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও অদৃশ্য কারণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তখন পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তখন থেকেই অর্থ খাত নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা নানাভাবে বলার চেষ্টা করেছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সেই সুযোগ হাতে এসে যায় আ হ ম মুস্তফা কামালের। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জীবনের প্রথম বাজেট পেশ করতে ২০১৯ সালের ১৩ জুন সংসদে দাঁড়ালেও প্রচণ্ড অসুস্থতার কারণে বার বার চেষ্টা করেও তিনি বাজেট উপস্থাপন করতে পারেননি। এরপর সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বাজেট পেশ করেন।

চিকুনগুনিয়ার কারণে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করার আগের দিন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন, কিন্তু অসুস্থতা এতোটাই ছিল যে পুরো বাজেট অধিবেশনেই তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। চিকুনগুনিয়ে শেষ হওয়ার পর ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়ার ভয়ে ওই বছর সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে খুব একটা যাননি অর্থমন্ত্রী। এরপর ২০২০ সালের শুরু দিকে নিজ মন্ত্রণালয়ে অফিস শুরু করলেও মার্চ থেকে করোনার ভাইরাসের প্রভাবে সবকিছু স্থবির করে দেয়।

তবে করোনার লকডাউন শেষে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও অফিস খুলে দিলেও ভয়ে অফিসমুখী হননি অর্থমন্ত্রী। এই সময়ে অধিকাংশ বৈঠকই সেড়েছেন ভার্চুয়ালি। তবে তার বড় অর্জন অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে সফলতা। সবকিছু খুলে দিলেও অর্থমন্ত্রী এখনও ভার্চুয়ালি সব সভাতেই অংশ নেন।

সাবেক অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যাংক নীতিমালা করার। তার সুরে তাল দিয়েছিলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রীও কিন্তু দুই বছর হতে চলল এখনও সেই নীতিমালার তিমিরেই রয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রীর প্রথম বছর গেছে চিকুনগুনিয়ার ভয়ে, দ্বিতীয় বছর কেটে যাচ্ছে করোনার ভয়ে।

দীর্ঘ প্রায় এক বছর অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের সামনা সামনি আসেন না বলে জানা গেছে। এখানেও করোনাভীতি বলে জানা যায়। অর্থমন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বৈঠক ভার্চুয়ালি হওয়ায় অনেক সিদ্ধান্তই তাৎক্ষণিক নেওয়া জটিল বলে মনে করেন তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ।

অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর কয়েক দফা তিনি দেশের বাইরে যান। এরমধ্যে চোখের চিকিৎসার জন্য ২০২০ সালের ২৮ নভেম্বর সিঙ্গাপুর যান। সেখানে ৪৩ দিন অবস্থান করার পর দেশে ফেরেন ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি। টানা এক মাস ১৩ দিন দেশের বাইরে থাকায় মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি কমে আসে। যদিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তখন কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতেন অর্থমন্ত্রী।

তবে এই সময়ে চারটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) থেকে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার এবং তার সহযোগীরা ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে আছে। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পিকে হালদারের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর জোরালো কোনও নির্দেশনা বা স্টেটমেন্ট আসেনি।

সংসদে ‍সুযোগ পেলেই অর্থমন্ত্রীকে তুলোধুনো করেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি একটি বিল পাস নিয়ে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, রুমিন ফারহানাসহ অন্যরা প্রশ্ন তোলেন অর্থমন্ত্রণালয় চালায় কে?

সংসদে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘টাকা পাচার ও মন্দ ঋণের কারণে ব্যাংকে চলছে তারল্য সংকট, শেয়ার মার্কেট ধ্বংসের দারপ্রান্তে। তবে উনি (অর্থমন্ত্রী) সাধারণ অবস্থা থেকে অত্যান্ত বড় শিল্পপতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। বছরে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। ওনি কিছু করতে পারেন না। এত মেধাবী তিনি কিন্তু শেয়ারবাজার, খেলাপি ঋণ নিয়ে কিছু করলেন না। ওনার মন্ত্রণালয় আসলে চালায় কে?’

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার করেন। ব্যাংকিং খাত ভেঙে পড়েছে, সেদিকে নজর দিন। টাকা পাচার বন্ধ করুন। এগুলো করতে পারেন না। আসলে এই মন্ত্রণালয় কে যে চালায় বুঝি না।’

গত ২ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেক সভায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ তিন দশমিক ২৬ শতাংশ কমিয়ে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। অথচ ওই সভায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন না। সরকার প্রধান ভার্চুয়ালি সভায় যোগ দিলেও ছিলেন না অর্থমন্ত্রী। এ নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর