সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 21:15:01

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদসহ সকল সংঘবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থবিরোধী কোন কার্যক্রম বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা পরিচালিত হতে দিব না। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত থাকবে।

নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান।   

তিনি বলেন, সহিংস উগ্রবাদ, মানবপাচার ও মাদক প্রতিরোধে আমাদের সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার নীতি বিশেষ সুফল বয়ে এনেছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে গৃহীত ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন দ্যা ড্রাগ প্রবলেম’-এর সঙ্গে বাংলাদেশ একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

সভায় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যে বিবরণ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাতে আমরা হতভম্ব। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও অবিচারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে।

‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যূত ও অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশার স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে গত বছর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আমি পাঁচ-দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম। আমরা আশাহত হয়েছি, কেননা আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।’

মিয়ানমার মৌখিকভাবে সব সময়ই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তারা কোন কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব হয়েছে মিয়ানমারে তাই এর সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারে। জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে আমরা তারও আশু বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা দেখতে চাই। আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।

ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ভ্রাতৃপ্রতীম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন আজও অব্যাহত রয়েছে যা আমাদের মর্মাহত করে। এ সমস্যার আশু নিষ্পত্তি প্রয়োজন। ওআইসি-র পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে আমরা ওআইসি-র মাধ্যমে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাব।

বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেস, গত সাড়ে নয় বছরে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। যে বাংলাদেশকে বলা হত দুর্যোগ, বন্যা-খরা-হাড্ডিসার মানুষের দেশ, তা এখন বিশ্বশান্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশিদের ছাপিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

দেশের নারীর ক্ষমতায়নের কথা তুল ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংসদই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র সংসদ যেখানে সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, স্পীকার এবং বিরোধী দলীয় নেতা নারী। বর্তমান সংসদে ৭২ জন নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ৩৩ শতাংশ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

উন্নয়ন কার্যক্রম এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষমতা সৃষ্টিতে গৃহীত পদক্ষেপসমূহকে এ সময় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বৈশ্বিক মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যাত্রা শুরু করেছি। আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের এই যাত্রাপথ আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পরিকল্পনার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, যা আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়নে পুরোপুরি অঙ্গীকারাবদ্ধ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর