৫০ বছর পরেও ৭ই মার্চের ভাষণ সার্বজনীন ও প্রাসঙ্গিক

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 08:26:10

পঞ্চাশ বছর পরেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ সার্বজনীন ও প্রাসঙ্গিক।

মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে তৃতীয় ও শেষ দিনে ইউনেস্কো ও ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের যৌথ আয়োজনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ: ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত বক্তরা এ কথা বলেন।

এ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর সামাজিক ও মানবিক সেক্টরের সহকারী মহাপরিচালক গাবিরিয়াল রোমাস এবং ইনফরমেশন সেক্টরের স্ট্রাটেজিস এন্ড পলিসিজ বিষয়ক পরিচালক গাই বারগার অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস-এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। মিডিয়া আর্কাইভ বিশেষজ্ঞ এবং ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারের বাছাই উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য ডোমিনিকা সাইতিভিল।

এ অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ হোসেন।

রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তার স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ তিনটি মাইলফলক উদযাপন করছে- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী এবং ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের ৫০তম বর্ষপূর্তি। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আমরা আমাদের জন্মভূমি পেয়েছি। এ স্বাধিকার আন্দোলনে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের গুরুত্ব অপরিসীম বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অনলাইন এ আয়োজনের উদ্বোধনী পর্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেনের শুভেচ্ছা ভিডিও বার্তা প্রদর্শিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালির রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সম্পৃক্ত হওয়া এবং অতি সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের মাধ্যমে এ মহান ব্যক্তির প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের জন্য ইউনেস্কোকে তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ অভিন্ন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হত না। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক-ই দেননি, বরং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা প্রদান করেছেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ইউনেস্কোর সামাজিক ও মানবিক সেক্টরের সহকারী মহাপরিচালক বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপন শুধু বাংলাদেশের নয় ইউনেস্কোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বিষয় যে ভাবে উঠে এসেছে তা ইউনেস্কো-এর আদর্শ ও লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে তিনি সৃজনশীল অর্থনীতিতে ইউনেস্কো-বঙ্গবন্ধু পুরস্কার প্রবর্তনে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ পুরস্কার অভিবাসী, নারী-পুরুষ সমতা ও যুব উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বারগার তার বক্তব্যে বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণ শুধুমাত্র বাংলাদেশের একজন রাজনৈতিক নেতার মুখ নিঃসৃত কিছু শব্দ নয়, বরং অর্থনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক বঞ্চনার শিকার একটি জাতির এক সংগ্রামী নেতার সংগ্রামী জীবনের বহিঃপ্রকাশ। ইউনেস্কো-এর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য যে বৈশিষ্ট্যসমূহ থাকা দরকার তার সবগুলোই এ ভাষণে বিদ্যমান বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তাই অনুবাদের মাধ্যমে এ ভাষণের প্রচার ও প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান এবং জাতিসংঘের ৬টি দাপ্তরিক ভাষাসহ সর্বমোট ১৪টি ভাষায় অনুদিত হলেও আরও অধিক ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে এ ভাষণ বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি মত প্রকাশ করেন।

এরপর এক ঘণ্টব্যাপী প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় প্রথম বক্তা হিসেবে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এ ভাষণের বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ ছাড়া এ ভাষণের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব ও কৌশলসমূহ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এ ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যথার্থভাবে পারিপার্শ্বিকতা বিচার করে সুকৌশলে মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর