অযত্ন-অবহেলায় দেশের ছোট পুরাতন মসজিদ

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 22:43:24

 

ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা রংপুর। এই জেলায় রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্যের অনেক নির্দশন। তেমনই একটি স্থাপত্য আকন্দপাড়ার পুরাতন মসজিদ। ছোট ছোট ইটের গাঁথুনিতে তৈরি মসজিদটির কারুকার্য চোখে ধরার মতো। সামান্য পরিমাণ জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদের আয়তন নিয়ে রয়েছে বেশ কৌতুহল। এর উত্তর দক্ষিণে ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি ও পূর্ব পশ্চিমে ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। দেয়াল ১ ফুট ১১ ইঞ্চি চওড়া। আয়তনে এত ছোট মসজিদ দেশের আর কোথাও আছে কিনা, তা অনেকেরই অজানা। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুরে ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটির অবস্থান।

শ্যামপুর থেকে এক কিলেমিটারের কম দূরুত্বে গোপালপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের আকন্দপাড়ার নান্দিনার দিঘীর পাড় থেকে মাত্র ৩শ গজের মধ্যেই পুরাতন এই মসজিদটি। গ্রামের মেঠোপথের পাশে ছোট একটি জায়গায় বাঁশের ঝাড়। মসজিদটি ওই বাঁশ ঝাড়ে বিরাট একটি বটবৃক্ষের লতাপাতা আর জঙ্গলের ভিতর। ভুতুরে পরিবেশে থাকা মসজিদটি এখন পরিত্যক্ত।

কারুশিল্পে খচিত মসজিদের মিনারসহ ভেঙে পড়েছে এর অবকাঠামো। মসজিদ বেয়ে উঠেছে একটি বিরাট বটগাছ। এই বটবৃক্ষের ভরে খসে পড়েছে ইট। ভেঙে পড়েছে দক্ষিণের দেয়ালটি। বর্তমানে মসজিদের কোল ঘেঁষে দুটি কবর রয়েছে। ছোট ছোট ইটের গাঁথুনিতে তৈরি প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন এই মসজিদ। সময়ের পরিক্রমায় সংস্কারের ছোঁয়া লাগে নি। অযত্ন-অবহেলা আর সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় বর্তমানে মসজিদটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। 

মসজিদটি দেখতে প্রায়ই বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে লোকজন আসেন। অনেকেই লেখালেখিও করছেন এটি সংরক্ষণে। এনিয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় গবেষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, এই মসজিদটি কারো মতে আড়াই শ’ বছর থেকে ৫০০ বছরের পুরাতন হবে। এখানকার পূর্বপুরুষদের মতে এই অঞ্চলে এতো ছোট মসজিদ আর নেই। এর জমির পরিমাণ ও আকার-আয়তন খুবই কম।

তিনি আরো জানান, মসজিদের উত্তর দক্ষিণে ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি ও পূর্ব পশ্চিমে ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। দেয়াল ১ ফুট ১১ ইঞ্চি চওড়া। একটি প্রবেশ পথ ও মেহরাব রয়েছে। মসজিদটি এতই ছোট যে এখানে ঈমামসহ ৩-৪জন নামাজ পড়তে পারতেন। মসজিদটি মিনার ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে মসজিদটিকে ঘিরে একটি বিরাট বটগাছ বেয়ে উঠেছে।

প্রাচীন এই নিদর্শনটি সংরক্ষণ ও সংস্কারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছে স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক বাবর আলী ও তার স্ত্রী আছেকা খাতুন বলেন, এত ছোট মসজিদও হয়, তাও মিনারসহ? তাদের বাপ-দাদার পূর্বপুরুষরা এই মসজিদের ইতিহাস ভালো জানতেন। আমরা শুনেছি এটি প্রায় ৩ থেকে -৪’শ বছর আগের মসজিদ। এই মসজিদটি সংস্কার করে পর্যটন শিল্পের সঙে এই মসজিদটিকে যুক্ত করা হলে এখানে আরো মানুষ আসবে। 

এটি সংরক্ষণে রংপুর বিভাগীয় প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক জাকির আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের প্রাচীন স্থাপত্য, নিদর্শন ও ঐতিহাসিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং সংস্কারের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। এই মসজিদটি পরিদর্শন করে আমরা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিতে আহ্বানও করেছিলাম। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। 

এ ব্যাপারে রংপুর জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. আবু সাঈদ ইনাম তানভিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রাচীন ওই মসজিদটির সংরক্ষণ ও সংস্কারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর