অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2023-08-28 12:39:00

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা পরিষদের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিভিন্ন অভিযোগ বিভাগীয় কমিশনারের তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদকে ১০ দিনের মধ্যে ‘অভিযোগ সংক্রান্ত’ জবাব দাখিলের দ্বিতীয় তাগিদপত্র দিয়েছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা শাখা-২।

এ সংক্রান্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ সামছুল হকের স্বাক্ষরিত (স্মারক নং-৪৬.০৪৫.০২৭.০৮.১৫০.১৫০.২০১৮-১৩৭, তারিখ-১ মার্চ ২০২১ খ্রিস্টাব্দ) এর মাধ্যমে পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসানের কাছে প্রেরিতে পত্রে বলা হয়েছে, ‘আপনার বিরুদ্ধে পাংশা উপজেলা পরিষদের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদির অভিযোগের সাথে জড়িত মর্মে প্রমাণিত হয়েছে।

এহেন কর্মকাণ্ড অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, পরিষদ ও রাষ্ট্রের স্বার্থের হানিকর এবং উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ (উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা সংশোধিত) এর ১৩(১)(খ) ও ১৩(১)(গ) ধারার অপরাধের শামিল এবং উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা সংশোধিত) এর ১৩(১)(খ) ও ১৩(১)(গ) ধারার অপরাধে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- তার সন্তোষজনক জবাব ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিভাগে দাখিল করার জন্য ২৭/০৩/২০১৯ তারিখের ২৯৭নং স্মারকে বলা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি জবাব পাওয়া যায়নি।

এমতাবস্থায় উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা সংশোধিত) এর ১৩(১)(খ) ও ১৩(১)(গ) ধারার অপরাধে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- তার সন্তোষজনক জবাব একই আইনের ১৩(২) ধারা অনুযায়ী আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিভাগে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। একই সাথে আপনি ব্যক্তিগত শুনানিতে আগ্রহী কিনা তাও জানাতে অনুরোধ করা হলো।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কে.এম আলী আজম পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত উপজেলা পরিষদের সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ সরেজমিন তদন্ত করেন।

পাংশা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে তিনি এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তদন্তকালে স্থানীয় সরকার বিভাগের ডিএলজি(যুগ্ম-সচিব) ইদ্রিস আলী, জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী ও পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

পাংশা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা মাহমুদ হেনা মুন্সীর গত ২৩/০৪/২০১৮ তারিখের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৭/০৫/২০১৮ তারিখে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা মাহমুদ হেনা মুন্সী ওই অভিযোগ করেন।

এর প্রেক্ষিতে প্রথমে গত ১৪/১১/২০১৮ তারিখে উক্ত অভিযোগ তদন্তের জন্য বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক দিন ধার্য্য করা হয়েছিল। কিন্তু পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরে করার জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত কার্যক্রমটি ৩১/০১/২০১৯ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

তদন্তকালে বিভাগীয় কমিশনার কে.এম আলী আজম পাংশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদের বিরুদ্ধে পরিষদের সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাগজপত্র দেখেন এবং পাংশা পৌরসভার মেয়র ও পাংশা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণসহ অভিযোগকারীদের বক্তব্য শোনেন ও তাদের লিখিত স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এরপর তিনি অভিযুক্ত পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদের বক্তব্য শোনেন।

এছাড়াও তিনি পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ কর্তৃক পাংশা বাজারে উপজেলা পরিষদের জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত শেড ও দোকান পরিদর্শনকালে বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন।

তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৪/০১/২০১৯ তারিখে তিনি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এ খবর লেখা পর্যন্ত পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ কোন জবাব দাখিল করেননি বলে জানা গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর