আমার দারাজ উপস্থাপিত ইগনাইট উইমেন কার্নিভাল ২০২১ অনুষ্ঠিত হয় গত ৮ এবং ৯ মার্চ। আমাদের সমাজের যে নারীরা তাঁদের ভালোবাসা এবং সেবা দিয়ে বাংলাদেশকে আজকের এই দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন, তাঁদের সম্মান জানাতেই আমাদের এই আয়োজন।
পাঁচটি ভিন্ন দেশ থেকে ২৫ জন প্রগতিশীল নারী, দুই দিনের দীর্ঘ ভার্চুয়াল ইভেন্টে আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মহিলা নেতৃবৃন্দ, উদ্যোক্তা, ডাক্তার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের মহিলা প্রতিনিধিগণ।
এই বছর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি থাকা সত্বেও আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনে কোন রকম কমতি রাখা হয়নি। বরং নারীদের অধিকার, তাঁদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অবদান প্রচারের উদ্দেশ্য কার্যকর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
কার্নিভালে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভা করা হয়, যেখানে কিভাবে বাংলাদেশকে আরও উন্নত এবং ডিজিটাল করা যায় যেখানে নারীরা সুরক্ষিত বোধ করবেন এবং সমাজের বাঁধা ভেঙে তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নকে বিকশিত করবার সুযোগ পাবেন, এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা তাঁদের মূল্যবান অভিমত প্রদান করেন । ট্রাভেলেটস অফ বাংলাদেশ এবং টেকনাইটের সহযোগিতায় এবং দ্য ডেইলি স্টার, হোয়াটস অন, ঢাকা এফএম ৯০.৪, বার্তা ২৪, ডিজিটাল ব্রিং, ইগনাইট' ভলান্টিয়ার, ক্রাফট নাইট, ইয়ুথ প্ল্যানেট, তরুণ এবং হাইপ স্কাউট এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি সফল হয়েছে।
১ম পর্ব : ই-বিজনেস এর মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন করা:
নাহিদা খান শুরমির সঞ্চালনায় অধিবেশনটিতে বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন ই-কমার্সের বর্ধিত জনপ্রিয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এ প্যানেলে সদস্য ছিলেন: ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের ইনভেস্টমেন্ট কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান-ফারহা মাহমুদ ত্রিনা, দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড পেমেন্টস বিভাগের প্রধান-মিস মঞ্জুরী মল্লিক, এবং রেইন ড্রপস টেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-নিশাত মুশফিকা। মহামারী চলাকালীন সময়ে অনলাইন বাণিজ্যের বিস্তৃত প্ল্যাটফর্মের কারণে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের দ্রুত বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। এই সেক্টরে নিয়োজিত নারীদের অবশ্যই পুরুষের মতন সমান আত্মবিশ্বাস ও মানসিকতার সাথে তাঁদের কাজের প্রতি নিয়োজিত হতে হবে। "আমরা করতে পারি এবং আমরা আরও ভালোভাবে করতে পারি", মিসেস মনজুরি মল্লিক বলেন। “উদ্যোক্তাদের সবসময় পণ্যগুলির গুণগত মান বজায় রাখতে হবে এবং গ্রাহকের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাঁদের এই যাত্রায় উত্থান-পতন থাকবেই। তাই সবসময় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। “প্রতিটি চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকির পেছনে একটি সুযোগ রয়েছে", বলেন ফারহা মাহমুদ ত্রিনা। অধিবেশনে প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারিক দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছিল।
২য় পর্ব: নেতৃত্বে মহিলা:
জাসরিন রাইসার সঞ্চালনায় অধিবেশনটিতে নেতৃত্বের মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্যানেল সদস্যরা হলেন: খুশি কবির- নিজেরা করি-এর সমন্বয়কারী, মাহজাবিন ফেরদৌস স্বর্ণা- বাংলাদেশ ক্যান্সার এইড ট্রাস্টের জিএস এবং দারুচিনির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং তাহসিনা বানু- এলিগেন্ট গ্রুপের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার। মহিলাদের প্রতি বৈষম্য কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে জানতে চাইলে খুশি কবির এর জবাবে বলেন, “আমরা কেবল তখনই এই জটিল সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে পারব যখন সমাজ এবং আমরা নিজেরাই নারীদেরকে মানুষ হিসেবে দেখা শুরু করব এবং সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক নিয়মের একটি নির্দিষ্ট বাক্সের মধ্যে আবদ্ধ করা বন্ধ করব”। আমাদের সমাজে একজন মহিলা নেত্রী হয়ে উঠতে অনেক কষ্ট ও অসুবিধা গুলো পার করতে হয়. “আপনাকে নেতা হবার জন্য উপযুক্ত পারিবারিক পরিবেশে থাকার পাশাপাশি সাহসী, আত্মবিশ্বাসী এবং স্পষ্টবাদী হতে হবে। তবে তাদের দাবিকৃত এমন নির্দিষ্ট গুণাবলীর জন্য ও আপনাকে শাস্তি পেতে হবে ”, তাহসিনা বানু যোগ করেন। মেয়েদের কেন নিজেদের নেতা হয়ে উঠতে চ্যালেঞ্জ করা উচিত জানতে চাইলে মাহজাবিন ফেরদৌস স্বর্ণা বলেন, "আমি যখন একজন ব্যবসায়ী হয়েছি, যখন আমি কর্তৃত্বের অবস্থানে এসেছি, তখন আমি আরও ১০ জন মহিলাকে ক্ষমতাবান করতে পারছি"। প্রভাবশালী নারীরা আজ যে অবস্থানে রয়েছেন সেখানে পৌঁছতে তাদের অবিরাম লড়াই করতে হয়েছে। তবে আমরা এই অবস্থার একটি ধীর কিন্তু দৃঢ় অগ্রগতিও দেখতে পারছি।
৩য় পর্ব: মহিলাদের শিক্ষা- কেন মহিলা শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ:
আয়েশা মোস্তফার সঞ্চালনায় এ অধিবেশনে বাংলাদেশের মেয়েদের সাক্ষরতার হার ৭২% হলেও সারাদেশে স্থিতিশীল নয় সে বিষয়ে আলোচনা করেন। প্যানেল সদস্যরা হলেন: ডক্টর সাইকা আহমেদ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, সালমা সিদ্দিকা-লেখক, ফারিন দৌলা- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং ইশরাত নাহার এরিনা-ব্রেন চাইল্ড, প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশ। শিক্ষা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য পরিবারকে এই বিষয়টি সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে এবং তাদের ছেলে ও মেয়েদের জন্য সমানভাবে বিবেচনা করতে হবে। ইশরাত নাহার ইরিনা বলেন, "বাবা-মাকে মেয়েদের প্রথমে মানুষ হিসাবে ভাবতে হবে"। বাংলাদেশের বেশিরভাগ জায়গায়, শিক্ষালাভ একটি বিলাসিতা বলে ধারণা করা হয় তাদের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম এর তুলনায় । "এ ক্ষেত্রে আরও বেশি বৃত্তি ও বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত এবং এগুলোর প্রচারের জন্য মিডিয়াকে আরও দক্ষতার সাথে কাজ করা উচিত", বলেন সালমা সিদ্দিকা। শিক্ষা শুধু পুঁথি পুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ফারিন দৌলা যোগ করেন, “আমাদের মেয়েদের স্টেম শিক্ষার দিকে ঠেলে দিতে হবে এবং তাদের সম্মতি ও যৌন শিক্ষার বিষয়েও শিক্ষা দিতে হবে”। মহিলাদের প্রতিনিয়ত যে সমস্ত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেদিক বিবেচনায় এনে স্পষ্ট করে বলা যায় যে, মহিলাদের জন্য শিক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ডাঃ সাইকা আহমেদ বলেছিলেন, “সমস্যাটি আমাদের শিকড়ে। আমাদের অবশ্যই লড়াই করে যেতে হবে এবং কখনই হাল ছাড়া যাবে না। এইভাবে, আমরা সমাজে একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পারি ”।
৪র্থ পর্ব: নেতৃত্বে মহিলা:
আয়েশা মোস্তফা পরিচালিত অধিবেশনটিতে নারীরা সারা বিশ্বজুড়ে যেসব প্রতিবন্ধকতা ও লিঙ্গ বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছে এবং তার পরেও কীভাবে নারীরা বারবার নিজেকে পুরুষের সমান প্রমাণ করেছেন তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্যানেল সদস্যরা হলেন: চিরন্তী সেনানায়েক- এইচওয়াইপি শ্রীলঙ্কার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, এমিলি এল্ড্রেজ- দ্য নিউ সেলফ এমপ্লয়মেন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এবং বাতোল গোলামি- আফগানিস্তান ইয়ুথ আসসেম্বলির সিইও । একজন উত্তম নেতার যেসকল গুণাবলী থাকা উচিত সে সম্পর্কে জানতে চাইলে চিরন্তী সেননায়েক জবাব দেন, “এটি একটি অনন্য যাত্রা যা একজন ব্যক্তির নিজের পার করতে হয়। এটা খুবই বিষয়গত। একজন নেতা বাধ্যতামূলকভাবে একজন ভাল নেতা হয় না। বাস্তবায়ন নয়, যে প্রভাব টি তৈরি করবার চেষ্টা করছেন সেটাই তাৎপর্যপূর্ণ ।" আমাদের দেশে বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে বিবাহের পর অথবা মাতৃত্ব গ্রহণ করার পর, তাদের পেশার বিসর্জন দিয়ে কেবলমাত্র পরিবারের কর্তব্য গুলিতে মনোনিবেশ করতে দেখা যায়। "বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অনেক সামাজিক চাপ থাকতে পারে, তবে এটা মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা কে, আমরা কি হতে চাই এবং আমাদের নিজেদের জন্য সেইসব সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা রয়েছে" , এমিলি এল্ডারেজ বলেন। মহিলারা এখন তাদের নেতৃত্বের পথে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া সকল দেয়াল ভাঙতে সংকল্পবদ্ধ। “কেন আমাদের আরও মহিলা নেতার প্রয়োজন এ প্রশ্নের সব থেকে সাধারণ এবং মৌলিক উত্তর হচ্ছে, নারীরা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ এবং অবশ্যই অর্ধেক জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। তবে একটু বিস্তারিত উত্তর দিতে গেলে বলতে হবে, মহিলারা দেশের শ্রমশক্তি এবং অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখেন। তাই সেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া গুলিতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব করা তাদের প্রাপ্য ”, মন্তব্য করেন চিরন্তী সেনানায়েক। "আমি আফগানিস্তানে নারী এবং তাদের ক্ষমতায়নের সাথে কাজ করছি, আমার লক্ষ্য মহিলাদের জন্য সম্ভাবনাগুলো প্রসারিত করা এবং তাদের শিক্ষা ও বিকাশের পথ সুগম করা", যোগ করেন বা্তোল গোলামি।
৫ম পর্ব: সাইবার-বুলিং এবং সচেতনতা
রাতিন জামান পরিচালিত অধিবেশনটিতে সাইবার-বুলিংয়ের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে যা তুলনামূলকভাবে পুরুষদের থেকে নারীদের বেশি সম্মুখীন হতে হয়। প্যানেল সদস্যরা হলেন: নুরুন নাহার বেগম- অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, সালমা সুলতানা স্মৃতি- গ্রামীণ ড্যানোনা ফুডস লিমিটেডের ব্র্যান্ড ম্যানেজার, মিস ইসমত জেরিন খান- দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের আইনী ও কর্পোরেট বিষয়ক প্রধান । “মানসিক ক্ষতি শারীরিক ক্ষতির মতো দৃশ্যমান হয় না, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য আরও ক্ষতিকারক। মানসিক নির্যাতন দীর্ঘমেয়াদী সময় ধরে ঘটার পর হয়তো আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলি, যেটা এই পুরো প্রসঙ্গকে আরো বিপদজনক করে তোলে ”, মিস ইসমত জেরিন বলেন। সাইবার-বুলিং একটি সংকটপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। “ পিতামাতাদের, তাঁদের বাচ্চাদের সমস্যা গুলো সম্পর্কে কথা বলার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাচ্চাদের, বিশেষত মেয়েদের, অবশ্যই পিতা মাতার কাছে গিয়ে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে হবে ", যোগ করেছেন নুরুন নাহার বেগম। “অল্প বয়স থেকেই মেয়েদের হয়রানির বিরুদ্ধে কথা বলার গুরুত্ব সম্পর্কে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। তাদের আইনগত সহায়তা সম্পর্কেও সচেতন করা উচিত ”, সালমা সুলতানা স্মৃতি বলেন। আলোচনার সময় ডিজিটাল সুরক্ষা আইন-২০১৮ উল্লেখ করা হয়েছিল।
৬ষ্ঠ পর্ব: নারী স্বাস্থ্য
আরাবিয়া তানজিলা নিশি পরিচালিত এই অধিবেশনটিতে বাংলাদেশের মহিলাদের স্বাস্থ্যের করুন অবস্থার বিষয়ে কথা হয়েছিল। প্যানেল সদস্যরা হলেন: ডাঃ জাকী রেজওয়ানা আনোয়ার-এফআরএসএ, মেডিকেল ডাক্তার, নিউজকাস্টার, কলামিস্ট এবং ফিলান্থ্রপিস্ট, উম্মে শায়লা রুমকি- ডিবিসি নিউজ টিভির অতিথি ফিজিওথেরাপি পরামর্শক। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে- “মৃত্যুর কারণগুলির মধ্যে হেমোরেজ, ইক্লেম্পিয়া, সেপসিস এবং অনিরাপদ গর্ভপাত প্রধান। তবে মায়েদের বয়স এই ক্ষেত্রে একটি মৌলিক কারণ ", ডাঃ জাকী রেজওয়ানা আনোয়ার বলেন। বাংলাদেশের ক্রমোন্নতি পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির কারণেই মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি করা হয়। “সমাজের অধীনে কর্মী দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পনা ও সম্পাদনের যথেষ্ট ব্যবধান রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আমাদের সম্মিলিত ও একজোট হয়ে কাজ করতে হবে ”, উম্মে শায়লা রুমকি যোগ করেন। মহিলাদের স্বাস্থ্য বিধান সম্পর্কে নিজেকে শিক্ষিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যা গুলো সম্পর্কে কথা বলতে হবে, যা সম্পর্কে সমাজের কিছু সংখ্যক লোকের অস্বস্তির কারণে মানুষ কথা বলতে সংকোচবোধ করে।
৭ম পর্ব: বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা
জাসরিন রাইসা পরিচালিত এই অধিবেশনটিতে বর্তমান বিশ্বে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি নারীর তীব্র আগ্রহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। প্যানেল সদস্যরা হলেন:আফরোজা নাজনীন সুমি - সুমিস কিচেনের সিইও, কানিজ ফাতেমা - ট্রিপজিপের সিইও এবং সুলতানা শিকদার অহনা - কয়েন কোচ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা । নিজেকে উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করার সময় নারীদের অসংখ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। “আমি রান্না কে আমার পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি ,তা আমার নিজেকে প্রথমে স্বীকার করতে হয়েছিল। এটি প্রায়ই আমাদের সমাজে ছোট করে দেখা হয় ”, আফরোজা নাজনীন সুমি বলেন। “আমি যখন প্রথম আমার যাত্রা শুরু করেছি, তখন অনেক মানুষই আমার পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করার চেষ্টা করেছিল। তাদের মাথায় এটা গেঁথে ছিল যে আমি একজন মহিলা তাই এই সকল প্রক্রিয়া সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান রাখব না ”, যোগ করেন সুলতানা শিকদার অহনা। “ব্যবসা পরিচালনা করার পাশাপাশি মহিলাদের নিয়মিত জীবনের বিভিন্ন ভূমিকারও ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। সমাজ ক্রমাগত আমাদের সকল গতিবিধির উপর নজর রাখে এবং তখন এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। তবে আপনাকে সর্বদা মনে রাখতে হবে আপনি কে এবং কার মতামত আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ", কানিজ ফাতেমা বলেন। মহিলারা যদি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে বজায় রাখতে চান, তবে তাদের অবশ্যই বাস্তব দক্ষতার সাথে নিজেদের শিক্ষিত করতে হবে এবং নতুন অভিজ্ঞতা এবং পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে নির্ভীক হতে হবে।
৮ম পর্ব: কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অভিজ্ঞতা
তানিশা আরমান পরিচালিত এই অধিবেশনটিতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের, বিশেষত শীর্ষস্থানে থাকা নারীদের তাদের অবস্থান ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত কিভাবে সংগ্রাম করতে হয়, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্যানেল সদস্যরা হলেন: নওরিন জাহান- এক্সিকিউটিভ অফ ডেইলি স্টার ব্র্যান্ড মার্কেটিং, জারা মাহবুব- কাজী আইটির সিইও এবং কান্ট্রি ডিরেক্টর, লায়লা নাজনীন- স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রধান এইচআর এবং জোসিন্তা জিনিয়া- বিইউপির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান এবং এনটিভিতে সিনিয়র নিউজ কাস্টার। নারীদের তাদের কর্মজীবন জুড়ে অবিচ্ছিন্ন চড়াই-উতরাইয়ের সাথে লড়াই করতে হয়। “খুব ছোটবেলা থেকেই আমাদের আকাঙ্ক্ষা এবং চাহিদার কথা বলতে হবে। এভাবেই মেয়েরা তাদের কাঙ্ক্ষিত পেশার জন্য সমর্থন পেতে সক্ষম হবেন ”, জারা মাহবুব বলেন। নওরিন জাহান যোগ করেন, “আমাদের শেকড় যাই হোক না কেন আমাদের নিজেদের উপর আস্থা হারানো যাবেনা”। মহিলারা কিভাবে তাদের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে এমন প্রশ্ন করা হলে লায়লা নাজনীন উত্তর দেন, “ধৈর্য ধরুন এবং চেষ্টা চালিয়ে যান। আপনার পথে আসা যেকোন কিছুকে কাটিয়ে উঠতেই আপনি সফল হবেন। ” আমরা যদি আমাদের কাজ এবং স্বপ্নের প্রতি আমাদের আন্তরিকতা এবং আত্মোৎসর্গতা প্রমাণ করতে পারি, তবে আমাদের সাফল্যের পথটি মসৃণ হবে। “চ্যালেঞ্জ করুন। আমরা যদি আমাদের পথের প্রতিবন্ধকতা গুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখি তবে তাদের জয় করা আরও সহজ হয়ে যায় ”, জোসিন্তা জিনিয়া বলেন। অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে জারা মাহবুব এর অনুপ্রেরণামূলক কথায়, “ সর্বপ্রথম আমাদের বাড়িতে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই আমরা মহিলাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানো থেকে সীমাবদ্ধ করা সকল বাধা ছিন্ন করতে পারবো।