সড়কে মৃত্যু কমাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিগ-আরএস) যৌথভাবে কাজ করবে।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি কার্যক্রমের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সড়ক সংঘর্ষ ও মৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০২৫ সাল পর্যন্ত একটি সহযোগিতা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে।
এই কার্যক্রমের মধ্যে সড়ক সংঘর্ষের অন্যতম প্রধান কারণ গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে এ কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস-এর পার্টনারশিপ ফর হেলদি সিটিজ’র আওতাভুক্ত সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রমের সহযোগী হিসেবেও ডিএনসিসি কাজ অব্যাহত রাখবে।
এই আনুষ্ঠানিক ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস’র প্রতিনিধি কেলি লার্সন এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান।
ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এআরআই)-এর প্রতিনিধিরাও সভায় অংশগ্রহণ করেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও বিগ-আরএস কার্যক্রমের কারিগরি প্রধান ড. তারিক বিন ইউসুফ ঢাকা উত্তর সিটির সার্বিক সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।
সভা থেকে জানানো হয়- সারা বিশ্বে সড়কে ৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর ৮ম প্রধান কারণ হচ্ছে সড়কে সংঘর্ষ। বাংলাদেশে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ৪র্থ প্রধান কারণ এটি এবং সংঘর্ষের শিকার মানুষের ৬৭ ভাগের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে।
নিরাপদ সড়ক চাই-এর তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৫০০ বেশি সংঘর্ষে ৫ হাজারেও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৭ হাজার মানুষ আহত হয়েছে।
বিগ-আরএস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে গঠিত একটি নেটওয়ার্কে অংশ নিয়েছে, যেখানে বৈশ্বিক পর্যায়ের সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ, নিরাপদ সড়ক এবং নিরাপদ চলাচল, পুলিশের আইনপ্রয়োগ এবং গণমাধ্যম ও যোগাযোগে সহায়তা প্রদান করা হবে।
সড়কে প্রাণ সুরক্ষায় তথ্য-উপাত্ত নির্ভর ও পরীক্ষিত সমাধান বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলো ডিএনসিসি-কে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করবে। সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ভাইটাল স্ট্যাটেজিস, গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি), ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউট (ডব্লিউআরআই), জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ এবং দেশীয় পর্যায়ের সংস্থা (জিএইচএআই/বিশ্ব ব্যাংক/ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস-এর প্রতিনিধি কেলি লার্সন বলেন, “সড়ক সংঘর্ষ ও হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি শীর্ষক আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে ঢাকা মহানগরীকে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। সারা বিশ্বে প্রতিবছর সাড়ে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ সড়কে নিহত হয়। পরীক্ষিত ও উপাত্ত-নির্ভর কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই মৃত্যু সংখ্যার প্রায় পুরোটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সূচনা বক্তব্যে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন যে, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই এয়ারপোর্ট রোডের কুর্মিটোলায় একটি বেপরোয়া গতির বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় ফুঁসে ওঠা শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীরা সারা দেশের সড়কগুলো দখলে নিয়ে সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে টানা নয় দিন আন্দোলন চালিয়েছিলো।
মেয়র বলেন, এ কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো ট্রাফিক আইনপ্রয়োগ জোরদার করা, সড়কের নকশা উন্নত করা, অবকাঠামো নির্মাণ, সড়কে হতাহতের ঘটনার নজরদারি ব্যবস্থা, এবং জনসচেতনতা বাড়াতে ও আচরণ পরিবর্তনে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো। বৃহত্তর সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে সড়ক সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য তিনি ডিটিসিএ, ডিএমপি, বিআরটিএ, বুয়েট-এর এআরআই-এর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমি আশা করি আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী সড়ক নিরাপত্তা কৌশল ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা আরো বাসযোগ্য, নিরাপদ ও সহিষ্ণু ঢাকা গড়ে তুলতে পারবো।
বিগ-আরএস কার্যক্রমের তৃতীয় ধাপে (২০২০-২০২২) যেসব দেশের নগর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ইথিওপিয়া, ভারত, উগান্ডা ও ভিয়েতনাম। বর্তমান নগরগুলোর মধ্যে আক্রা ও কুমাসি (ঘানা), আদ্দিস আবাবা (ইথিওপিয়া), বোগোতা (কলম্বিয়া), ঢাকা (বাংলাদেশ), গুয়াদালাজারা (মেক্সিকো), হ্যানয় ও হো চি মিন সিটি (ভিয়েতনাম), কাম্পালা (উগান্ডা), মুম্বাই, বেঙ্গালুরু ও নয়া দিল্লী (ভারত) এবং সাও পাওলো, সালভাদর ও রেসিফ (ব্রাজিল)।
২০০৭ সাল থেকে সড়ক নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস-এর বিনিয়োগের ফলে প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার জীবন রক্ষা পেয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছে। বিগত ১২ বছরের সফলতার ভিত্তিতে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সুইডেনের স্টকহোমে আয়োজিত ৩য় গ্লোবাল মিনিস্ট্রিয়াল রোড সেফটি সম্মেলনে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস তাদের সহায়তা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী ২০২০-২০২৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে আরো ৬ লাখ জীবন বাঁচানো ২ কোটি ২০ লক্ষ আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে আরো ২৪০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ নিশ্চিত করে।
ব্লুমবার্গ ফাউন্ডেশন সারা বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশের ৪৮০টি নগরীতে যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক মানুষের জন্য উন্নত ও দীর্ঘজীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে।