সব মহলে করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 03:26:14

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়সহ সবমহলে উদ্বেগ শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, তাতে এক নম্বরেই বলা হয়েছে ‘সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ যেকোনো উপলক্ষে জনসমাগম সীমিত রাখতে হবে’।

প্রয়োজনে উচ্চ সংক্রমণ এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকবে। আর ১৫ নম্বর নির্দেশনায় রয়েছে, ‘সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজন করতে হবে’।

ওইদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারি নির্দেশনার পরদিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশে দলের সব কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে ঘরোয়াভাবে কর্মসূচি করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘এখন থেকে আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের কোনো কার্যক্রম বাইরে করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে ঘরোয়াভাবে কার্যক্রম পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি।'

এদিকে সরকারের এই নির্দেশনার বাস্তবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না মনে করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের যে উদ্যোগ, সেটা কখনোই লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি স্থগিত করেছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত দলের সভা করে জানানো হবে’।

আজ বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস মহামারির টেকনিক্যাল কমিটি সকল ধরণের জন সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানুষ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে যখন প্রথম “অজানা” একটি ভাইরাস সংক্রমণের খবর জানতে পারে, তখন মানুষ ভুলেও চিন্তা করতে পারেনি যে সেই ভাইরাসটি পরে পুরো পৃথিবীকে এভাবে ওলট পালট করে দেবে।

শুরুর দিকে যখন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশিত হওয়া শুরু করে তখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশের কর্তৃপক্ষই সংক্রমণটিকে ততটা গুরুত্বের সাথে নেয়নি। কিন্তু যখন অধিকাংশ দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে, তখন সব দেশেই বিভিন্ন রকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর লকডাউনের বিধি নিষেধ জারি হলে পুরো বিশ্বের মত বাংলাদেশেও জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও অনেকটা ঘরবন্দি দশায় পড়ে।

রাজনীতি হয়ে পড়ে পুরোপুরি ভিডিওবার্তা, ভিডিও কনফারেন্স, ইমেইল, ফোন, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার-নির্ভর।

প্রথাগত কোন কর্মসূচি না চললেও আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা সারা দেশে ত্রাণ বিতরণ ও বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। ফলে তাদের অনেকে সংক্রমিত হয়েছেন আবার কারও কারও মৃত্যুও হয়েছে।

ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে সরকার লকডাউনের বিধি নিষেধ শিথিল করে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়সমুহ খুলতে শুরু করে। নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও দলীয় কার্যালয়ে যাতায়াত শুরু করেন। ভার্চুয়াল রাজনীতি থেকে পুরোপুরি বের হতে না পারলেও বিভিন্ন দিবস ও ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো সীমিত ও নরম কর্মসূচি পালন করে আসছে কয়েক মাস ধরে।

এছাড়া সর্বশেষ আওয়ামী লীগ মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যথাযথ স্বাস্থবিধি মেনে পালন করলেও বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের ঘোষণা দিয়েও পরে তা স্থগিত করে।

করোনার মধ্যেই কয়েকটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন ও পৌরসভার নির্বাচনও হয়েছে। করোনার প্রকোপ আবারও বাড়তে থাকায় স্থগিত ঘোষণা করা হয় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। আগামী ১১ এপ্রিল থেকে দেশে প্রথম ধাপে ৩২৩টি ইউপিতে ভোট শুরু হওয়ার কথা।

সর্বশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি সংগঠন রাস্তায় বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশ করে। সংঘর্ষে হতাহতের প্রতিবাদে দেশব্যাপী রবিবার হরতালও করে হেফাজত। এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের একাধিকার সংঘাত বাঁধে। তবে করোনার নতুন প্রকোপে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রাজপথের কর্মসূচি সীমিত করতে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর