করোনার প্রকোপ বৃদ্ধিতে লকডাউন

, জাতীয়

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 19:21:11

বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও আবার লকডাউন চলছে, যা ২০২১ সালের প্রথম লকডাউন। কিছুদিনের জন্য ভাইরাস একটু পিছু হটেও আবার ফিরে আসায় সাত দিনের লকডাউন জারি করা হয়েছে।

লকডাউন মানে আবার কোমর বাঁধতে হবে ক্রমবর্ধমান ভাইরাসের বিরুদ্ধে। বিশ্ব স্বীকৃত স্বাস্থ্যবিধি মানবে হবে পরিপূর্ণভাবে। লড়াই চালিয়ে যেতে হবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে। প্রকাশ্যে ও ঘরে, সমভাবে চলবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবজাতির লড়াই।

লড়াই অনেক তীব্র ও জরুরি এজন্য যে, উন্নত-অনুন্নত উভয়বিধ দেশেই স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষমতা ও দক্ষতার পরিধি বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিরুদ্ধে আশানুরূপ নয়। স্বাস্থ্যব্যবস্থা, চিকিৎসা  কতখানি অসহায়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে গত এক বছরের মহামারি, যাতে সারা দুনিয়ায় সাড়ে আটাশ লাখ মানুষ মারা গেছে আর আক্রান্ত হয়েছে তেরো কোটির বেশি মানুষ।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে উদ্ভূত  করোনাভাইরাস খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিশ্ববাসী আশার আলো দেখছিলেন। ততদিনে ভ্যাকসিনের প্রয়োগও শুরু হয়েছে বিশ্বের দেশে দেশে। কিন্তু আশা ও উচ্ছ্বাসের মুখে ছাই দিয়ে আবার প্রলয়ংকরী রূপ পরিগ্রহ করেছে করোনাভাইরাস। বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্তের উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটে চলছে।

প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে প্রথম থেকেই বিশ্ব জুড়ে কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, প্রশাসকরা প্রমুখ সামনের সারির ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। দিনরাত এক করে, দাঁতে দাঁত চেপে নির্ভীক লড়েছেন ওঁরা। কয়েকশো সতীর্থকে হারিয়েও লড়াইয়ের ময়দান থেকে এক ইঞ্চিও সরে আসেননি। বিশ্বময় কোভিড ছড়ালেও পরিস্থিতি সামাল দিতে  ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের জীবনপণ লড়াইয়ের কৃতিত্ব প্রশংসার দাবিদার।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ করেছেন। রোগীর সংস্পর্শে আসা সব মানুষের ঠিকানা জেনে তাঁদের খুঁজে নিভৃতবাসের ব্যবস্থা করেছেন। উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করেছেন। রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। সুস্থ হয়ে ফেরার পর নিয়মিত রোগীর খোঁজ নিয়েছেন। কোনো কোনো দেশের সুস্থ হওয়া রোগীরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতর থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়া হয়েছে, জানতে চাওয়া হয়েছে সুবিধা-অসুবিধা।

সব দেশের স্বাস্থ্য কাঠামোর শক্তি, দক্ষতা, ক্ষমতা ও মান একই রকম নয়। দেশে দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার পার্থক্য থাকাই স্বাভাবিক। বিশেষত, স্রোতের মতো মহামারি ছড়ালে এবং অকাতরে রোগি আক্রান্ত ও মৃত্যুমুখে পতিত হলে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার পক্ষে কতটুকু সামাল দেওয়া সম্ভব, সেটাও একটি বড় প্রশ্ন বটে।

কারণ, তীব্র করোনার প্রকোপকালে ইউরোপ, আমেরিকা, এমনকি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার অসহায়ত্ব ও হাহাকার দেখা গেছে। মৃত্যুর প্রলম্বিত মিছিল দেখা গেছে। এমন কঠিন পরিস্থিতির নগ্ন পদধ্বনি আবার ধ্বনিত হওয়ায় লকডাউনের মতো কঠিন সিদ্ধান্তের পথে যেতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে।

হয়তো বড় বিপদ ও ক্ষতির কবল থেকে রক্ষা পেতে সাময়িক কষ্টকর লকডাউন মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেয়। বাধ্য হয়ে লকডাউনে  আবার কোমর বাঁধতে হবে ক্রমবর্ধমান ভাইরাসের বিরুদ্ধে। বিশ্ব স্বীকৃত স্বাস্থ্যবিধি মানবে হবে পরিপূর্ণভাবে। লড়াই চালিয়ে যেতে হবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে। প্রকাশ্যে ও ঘরে, সমভাবে  ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবজাতির লড়াই পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা হলে বিপদ বাড়বে।

স্বাস্থ্যবিধি পালনের মতো লকডাউনের সময়ও যদি শিথিলতা দেখানো হয়, ড্যামকেয়ার ভঙ্গিতে চলাফেরা করা হয় এবং নিয়মকানুন লঙ্ঘন করা হয়, তবে কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। আসতে পারে ভয়াবহ বিপদ।

লকডাউনের প্রথম দিনের শুরুতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তা মোটেও কাম্য নয়। মনে হচ্ছে, বৈশ্বিক মহামারি বা লকডাউন বলে কিছু নেই, সবই স্বাভাবিক। লোকজনও অপ্রয়োজনে চলাফেরা করছে। এসব মোটেও কাম্য নয় এবং কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে দমন করা উচিত।

লেখক: কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম

এ সম্পর্কিত আরও খবর