লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে গত বছর আমন ও এবারের আউশের বাম্পার ফলনে কৃষকদের ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এ জন্য এবার আমন ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গতবারের চেয়ে এবার কয়েক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে।
এ মৌসুমে লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলায় আমন ধান আবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭২ হাজার ৫৯৭ হেক্টর জমি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ২৯৩ হেক্টর বেশি জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার চরাঞ্চলে এসব ধানের আবাদ হয়। এর মধ্যে রামগতি ও কমলনগরের কৃষকরা আমন চাষ বেশি করেছে।
জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই কৃষকরা আমন আবাদের প্রস্তুতি নেন। জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে জমিতে বীজ বোনা হয়েছে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এখন চলছে পরিচর্যা। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কেটে গোলায় উঠাবে কৃষকরা।
উপকূলীয় এ জেলায় মাটি ও আবহাওয়া কৃষিক্ষেত্রে বেশ উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এখানে প্রচুর ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। যার কারণে গত কয়েক বছর এখানকার কৃষকরা স্থানীয় জাতের পাশাপাশি হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধান আবদ করছে।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে আউশের ভালো ফলন হয়েছে। জেলায় ২৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি উপশী জাতের ৪ থেকে ৫টন, স্থানীয় জাতের ২ থেকে ২.৩৫ টন ধান উৎপাদন হয়েছে বলে জানান তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে জেলার ৫ উপজেলায় ৭২ হাজার ৫৯৭ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এদিকে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় উফশী জাতের ১৯ হাজার ২৩০, স্থানীয় জাতের ২ হাজার ১০০, হাইব্রিড ৫০ হেক্টর, রায়পুরে হাইব্রিড ১ হাজার, উফশী ৯ হাজার, স্থানীয় ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এছাড়া রামগঞ্জে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে উফশী ধানের আবাদ করে কৃষকরা। কমলনগরে উফশী ২২ হাজার, স্থানীয় জাতের ১ হাজার ৫০০ ও রামগতিতে ১৮ হাজার ২৬০ হেক্টরে উফশী এবং ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার চররুহিতা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, যথা সময়ে তিনি জমিতে চারা রোপণ করতে পেরেছেন। প্রতিবছরই তিনি আমন ধান চাষ করে থাকেন। এর মধ্যে গত দুই বছর কাঙ্ক্ষিত ফলন হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় এবারও ধান চাষ করেছেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান জানান, এবার আউশ মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। যার কারণে চলতি মৌসুমে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে। কৃষকরাও লাভবান হবে এবং ধান চাষে আরও উদ্বুদ্ধ হবে। প্রত্যাশিত ফলন পেতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাসহ কৃষি বিভাগের লোকজন কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন।