করোনায় এবার দিনমজুরদের পাশে দাঁড়াবে কে?

, জাতীয়

মো. আরমান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 08:39:53

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় চলছে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে বিপদে পড়েছে অনেক দিনমজুর। দেশজুড়ে এমন অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতদরিদ্র ও দিনমজুদের জীবনযাত্রা।

হটাৎ কর্মহীন হয়ে পড়ায় করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমজীবী হাজার-হাজার মানুষ চোখে সর্ষে ফুল দেখার মত অবস্থা তৈরি হয়েছে। যতই লকডাউনের দিন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ততই বাড়ছে এসব মানুষগুলোর অভাব ও শঙ্কা।

রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় কয়েকটি বস্তিতে এমন কয়েকজন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে বার্তা২৪.কমের প্রতিবেদকের কথা হয়।নসিমা নামের ভ্রাম্যমাণ ভাত বিক্রেতা জানান, আগে তিনি কাওরান বাজার এলাকায় দুপুরে ভাত বিক্রি করে সংসার চালাতেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ৭ দিনের লকডাউন করে দেওয়ায় পুলিশ তার ভাতের দোকান থেমে থেমে বন্ধ করে দেয়। ফলে, তার এখন আর ক্রেতা নেই। দোকান বন্ধ রাখায় তার সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ক্রেতা নেই, বিক্রিও নেই

ফ্লাক্সে করে চা-বিস্কুট বিক্রেতা ৬০ বৃদ্ধ হেদায়েত উল্লাহ জানান, আগে তিনি হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন। কিন্তু লকডাউন দেওয়ায় তিনি এখন আর ব্যবসা করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, আগে হাতিরঝিলে অনেক মানুষ ঘুরতে আসতো। কিন্তু এখন খালি থাকে। আমার বউ ও ২টা মেয়ে আছে। ছেলেরা বিয়ে করে নিজের সংসার চালাইতে হিমশিম খায়। আমরা অনেক কষ্টে আছি। আমাদের জন্য কিছু করেন। আমরা আর পারতেছি নাহ। সামনে রমজান কি করব বুঝতেছি না।

মামুন নামে এক রাজমিস্ত্রি জানান, লকডাউনের আগে থেকেই কাজ কম ছিল। কোন মতে খেয়ে জীবন চালাচ্ছিলাম। এখন এমন সময় কাজ বন্ধ থাকায় গ্রামে মা-বাবার জন্য কিছুই পাঠাতে পারি না। জীবন-জীবিকার ওপর বিরক্ত এই অসহায় রাজমিস্ত্রির কাছে লকডাউনের সামনের দিনগুলি কেমন কাটবে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাজ নেই, তাই আয়ও নেই। আয় নেই, তাই ঠিকমতো খাবারও জোটে না। এরমধ্যে সামনের দিনগুলি নিয়ে তো বিরাট চিন্তায় আছি।

যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছেন রিকশা চালক

সালমা নামের ফুটপাতে মাস্ক বিক্রেতা এক নারী জানান, আগে অনেক মাস্ক বিক্রি করতাম। কিন্তু লকডাউনের কারণে মাস্ক বিক্রিও বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষজন রাস্তায় নাই তেমন। তাই আমার মাস্ক কেনার লোকও খুঁজে পাই না। বাচ্চার খাবার কেনা অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ঘুরে দেখা যায়, চা দোকানি, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, হকার, রডমিস্ত্রি, সুপারভাইজার, টেকনিশিয়ান, হেলপার কিংবা শাটার মিস্ত্রিরা অধিকাংশই অস্থায়ী ও দিনের চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করেন বলে তাদের অনেকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ হারিয়ে বেহাল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তারা বলছেন এখন আর কেউ কোনো সহায়তাও করছে না। আগের মত কেউ কোন ত্রাণও দিচ্ছে না। এজন্য তারা চান আবার যেন স্বাভাবিক হয়ে যায় সব কিছু।

এ সম্পর্কিত আরও খবর