বাংলাদেশের আলেমসমাজের দীর্ঘদিনের দাবি কওমি সনদের স্বীকৃতি। কিন্তু কোনো সরকারই তাদের দাবি বাস্তবায়ন করেনি। অবশেষে নানা বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে কওমি সনদের স্বীকৃতির বিল সম্প্রতি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পাস হয়েছে।
কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দারুণ কৃতজ্ঞ আলেমসমাজ। শুধু কৃতজ্ঞতা নয়; এবার প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দিতে চান তারা। কওমি মাদরাসা শিক্ষার সর্বশেষ স্তর দাওরায়ে হাদিসের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশের উদ্যোগে এ গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে এ মাসেই ঢাকায় বড় ধরনের অনুষ্ঠান করে গণসংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন হেফাজত ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যানও।
সোমবার (০১ অক্টোবর) চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সংস্থাটির অন্তর্ভুক্ত ৬ বোর্ডের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আনোয়ার শাহ, আল্লামা মাহমুদুল হাসান, আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মুফতি মাহফুজুল হক, মুফতি নুরুল আমিন, মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মাওলানা আরশাদ মাদানী, মুফতি মুহাম্মদ আলী, মাওলানা আবদুল বাছির, মুফতি এনামুল হক ও মাওলানা শামসুল আলম প্রমুখ।
বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উলামায়ে কেরাম।
এছাড়া বৈঠকে আগামী দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষার তারিখ, পরীক্ষার পদ্ধতির মানোন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়। এ বছর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা ২ শাবান অনুষ্ঠিত হবে। চলবে ১২ শাবান পর্যন্ত। শুক্রবার পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা আয়োজনের জন্য ১৪ সদস্যের একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে। কমিটিতে আছেন- মাওলানা আশরাফ আলী, মুফতি রুহুল আমীন, মুফতি ওয়াক্কাস, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু, মুফতি নুরুল আমিন, আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী, মাওলানা আরশাদ রাহমানী, মুফতি মুহাম্মদ আলী, মাওলানা আবদুল বছির, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস ও মুফতি মাহফুজুল হক।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু বার্তা২৪কে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসার সনদকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ জন্য তিনিসহ তার মন্ত্রিসভার যারা কাজ করেছেন তাদেরকে গণসংবর্ধনা দিতে চায় বাংলাদেশের আলেমরা। আজকের বৈঠকে সে সিদ্ধান্তই সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়েছ।’
উল্লেখ্য, ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে কওমি মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’ পাস হয়।
আইন পাস হওয়ার পর কওমি মাদরাসার বোর্ডগুলো শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে ও মিছিল করে আনন্দ প্রকাশ করেছে।