দুই দুটি মেশিন আছে। করোনার পরীক্ষাও হচ্ছে। কিন্তু সুযোগ সবার জন্য নয়। শুধু নিজেদের রোগী আর চিকিৎসকদের করোনার পরীক্ষা করছে রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মেশিন দুটি কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত যক্ষ্মা শনাক্ত করার যন্ত্র ‘জিন-এক্সপার্ট’ দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষা করা সম্ভব। এখানে দুটি জিন এক্সপার্ট মেশিন আছে। একটি মেশিন ৪ মডিউলের, অন্যটি ১৬ মডিউলের। এগুলো প্রতি ঘণ্টায় ২০টি করে নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম। দিনে পাঁচবারে মোট ১০০টি পরীক্ষা করতে সক্ষম এগুলো।
পিসিআর ল্যাবের বিকল্প এই পদ্ধতি রিয়েল টাইম পিসিআর হিসেবে দেশ-বিদেশে বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যেখানে পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করতে আট ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে জিন-এক্সপার্ট মেশিনে নমুনা প্রক্রিয়াকরণ করতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে এবং ৪৫ মিনিটেই ফল পাওয়া যায়। এই মেশিনে পজিটিভ রোগীর ফলাফল ৩০ মিনিটে পাওয়া সম্ভব।
পদ্ধতিতে ভিটিএম টিউব থেকে নমুনা সরাসরি কার্টিজে দেওয়া হয়। এক ধাপে নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয় এবং সরাসরি কম্পিউটার থেকে ফলাফল পাওয়া যায়। এ পরীক্ষা ক্লিনিক্যাল মূল্যায়নে করোনাভাইরাস পজিটিভ ও নেগেটিভ রোগীর ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ সাফল্য পেয়েছে। অথচ এখানে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের রোগী, চিকিৎসক ও কর্মচারী ছাড়া কারও করোনার পরীক্ষার সুযোগ নেই। সারাদিন অলস পড়ে থাকে মেশিন দুটি।
অপরদিকে রাজশাহীতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। বেড়ে গেছে করোনা পরীক্ষার চাপও। কিন্তু এখন শুধুমাত্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) একটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। সেখানে প্রচুর চাপ। বাড়তি চাপের কারণে এখন আর দিনের রিপোর্ট দিনে পাওয়া যায় না। অপেক্ষা করতে হয় অন্তত পরের দিনের জন্য। এ অবস্থায় আলোচনায় এসেছে রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জিন-এক্সপার্ট মেশিনটি। এটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হলে প্রতিদিন প্রায় ১০০ জনের করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব। অটোমেটিক এই মেশিনে এক ঘন্টার মধ্যেই করোনার রিপোর্ট পাওয়া যায়। তুলনামূলক কম খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক পরীক্ষার জন্য জিন-এক্সপার্ট মেশিনটি খুবই কার্যকর। তবে দুটি মেশিনই এই করোনাকালে তেমন কাজে আসছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বক্ষব্যাধি হাসপাতালের এই মেশিনে জানুয়ারি মাস থেকে নির্ধারিত কিছু মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে এখানে। এগুলোর প্রায় ২৫ শতাংশ করোনা পজিটিভ এসেছে। মূলত এখানকার রোগী, চিকিৎসক এবং তাদের স্বজনদের করোনা পরীক্ষায় এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে তেমন লোকজনের আনাগোনা নেই। গেটের মুখে একটি ছোট কাগজে লেখা আছে, এখানে করোনা পরীক্ষা করা হয়। একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো জিন-এক্সপার্ট ল্যাব। ল্যাবের পাশেই বানানো হয়েছে একটি নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র। তবে সেটি ফাঁকা। কোন লোকজন নেই। ল্যাবটি তালাবন্ধ।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ মেশিন থেকেও কোন কাজ নেই এখানকার লোকজনের। ল্যাবটিও বেশিরভাগ সময় থাকে তালবদ্ধ। কারণ এটা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়।
নাম না প্রকাশ করে ল্যাবের এক কর্মচারী জানান, এখানে দিনে মোট ১০ থেকে ১৫টা টেস্ট করানো হয়। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। জরুরী কিছু রোগী ও তাদের নিজস্ব চিকিৎসক, নার্স ও তাদের পরিবারে সদস্যদের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এখানে তেমন কিটও নেই। বর্তমানে মাত্র ১০০টির মত কিট আছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, এখন রাজশাহীর মধ্যে শুধুমাত্র মেডিকেল কলেজেই করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের এখানে প্রতিদিন দুই শিফটের জায়গায় চার শিফট কাজ করেও প্রতিদিনের নমুনা প্রতিদিন পরীক্ষা করে শেষ করতে পারছি না। প্রতিদিন এখানে সর্বোচ্চ ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। অথচ জমা হচ্ছে ৪০০টিরও বেশি নমুনা।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে রোগ নির্ণয় করাটাই জরুরি। কারণ রোগ নির্ণয় না হলে তো চিকিৎসা করানো যাবে না। যত বেশি পরীক্ষা হবে, ততই ভালো। এ অবস্থায় যে যে সুযোগ আছে কাজে লাগানো উচিৎ।
এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, জিন-এক্সপার্ট মেশিন দিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হয়। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় হচ্ছে। এটি বেশি সংখ্যক হয় না। কিন্তু রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল আমাদের আয়ত্বে না। সেখানকার মেশিন শুধু সেখানকার রোগী ও চিকিৎসকদের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটা সবার জন্য করা যায় কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হবে।
রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সুপার ডা. সুলতানা আক্তার বলেন, আমাদের এখানে করোনা পরীক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। এখানে টিবি রোগীদের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া আমাদের স্টাফদেরও পরীক্ষা করানো হয় এখানে। কোন কোন দিন ৪ বা ৫টা টেস্ট হয়, আবার কোনদিন ১৪ থেকে ১৫টি করোনা পরীক্ষা হয়। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করার সুযোগ নেই, কারণ এখানে আমাদের রোগী ভর্তি থাকে অনেক। তাদের অবস্থাও অনেক জটিল থাকে।