আবুল বারকাতের গবেষণার ওপর পঞ্চম আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-09 03:46:46

গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত অধ্যাপক আবুল বারকাতের সদ্য প্রকাশিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ গবেষণাগ্রন্থটির বিষয়বস্তু ঘিরে ১৩ সিরিজের আলোচনা সভার পঞ্চম পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকায় অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে ভার্চ্যুয়ালি এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক গৌর গোবিন্দ গোস্বামীর সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী আমির হোসেন খান, কম খরচে ভূ-গর্ভস্থ আর্সেনিকযুক্ত পানি পরিশোধনের পদ্ধতি আবিষ্কারক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন ও জৈব রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবুল হুসসাম, সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাখাওয়াৎ আনসারী। 

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি এখন সবার কাছে প্রশংসনীয়। এই উন্নতি এসেছে ঠিকই, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমাদের পরিবেশ হয়েছে দূষিত। কারণ উন্নতি হচ্ছে ও হয়েছে অপরিকল্পিত ও নীতিমালা বহির্ভূত। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আর এই সময়ে আমরা পেয়েছি অধ্যাপক আবুল বারকাতের একটি গ্রন্থ ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’। এই বইয়ে তিনি যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছেন, আমার মতে উনি একজন দার্শনিক। তিনি প্রস্তাব করেছেন প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে চলার কথা। কারণ আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ভুল করেছি। সেজন্য আমরা কোভিড-১৯ এর মতো মহামারীতে আক্রান্ত হচ্ছি। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে উৎপাদন আমাদের বাড়াতেই হবে, তবে প্রকৃতিকে আক্রান্ত না করে।’

অধ্যাপক সাখাওয়াৎ আনসারী বলেন, ‘অধ্যাপক আবুল বারকাত এ বইটি লিখেছেন মানুষের উদ্দেশ্যে, কিন্তু তার বিষয়বস্তু গোটা প্রকৃতি। তিনি জানাচ্ছেন প্রকৃতি অসীম, কিন্তু মানুষ সসীম। তিনি শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলেছেন। তার মতে, শিক্ষাকে ব্যয় মনে করলে তা অপচয় বলে মনে হয়, শিক্ষা হলো বিনিয়োগ। শিক্ষা খাত নয়, বরং ব্যবস্থা।’

অধ্যাপক আবুল হুসসাম বলেন, ‘পৃথিবীতে নতুন জিওলজিক্যাল যুগের শুরু হয়েছে। নতুন মহামারী এসেছে। এসময়ে অর্থনীতি সমিতির এই সেমিনার খুব প্রাসঙ্গিক। কোভিড-১৯ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে আমরা কোথায় আছি। এই সময়ে যে দেশগুলো শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছে তারা তুলনামূলক ভালো আছে। একসময় বাংলাদেশেই পঞ্চাশের দশকে আইসিডিডিআরবিতে টিকা আবিষ্কার হতো, কিন্তু অবহেলায় অপরিচর্যায় সেসব বন্ধ হয়ে গেছে, বিজ্ঞানীরা দলে দলে দেশ ছেড়ে বিদেশে গেছেন।...এখন বিজ্ঞানও যদি চর্চার বদলে মুখস্থ করা হয় তাহলে ধর্ম ও বিজ্ঞানের পার্থক্য থাকে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।’

অধ্যাপক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী আমির হোসেন খান পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘যারা রাষ্ট্রপরিচালনার সঙ্গে যুক্ত তাদের উচিত অধ্যাপক আবুল বারকাতের এ বইটা পড়া।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের ২০ বছরের গবেষণার ফসল ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা। ৭১৬ পৃষ্ঠার এ বইটি সম্পর্কে অভিনন্দনবাণী দিয়েছেন ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও সমাজ সমালোচক অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি। কৃতজ্ঞতাপত্র, মুখবন্ধ ও মোট ১২টি অধ্যায় ছাড়াও বইটিতে আছে ২৭টি সারণি, ৩৯টি লেখচিত্র, তথ্যপঞ্জি ও নির্ঘণ্ট।

সমিতির পরবর্তী ষষ্ঠ সভাটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ এপ্রিল শনিবার দুপুর আড়াইটায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর