বইমেলায় ভাঙনের সুর

, জাতীয়

নাজমুল হাসান সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 18:29:36

খোলা প্রান্তরে চৈত্রের দুপুরে খাঁখাঁ রোদের হাহাকার আর শূন্যতা বিরাজ করছে বইমেলায়। ভাঙনের আগে বইমেলা যেন রূপ নিয়েছে ধুধু বালুচরের মরীচিকার মতো। দূর থেকে দেখলে মনে হয় আছে কিন্তু কাছে গেলে নাই। বেলা বারোটায় ফটক খুললেও দুপুর দুইটা পর্যন্ত পাঠক সমাগম দেখা যায়নি। প্রবেশ ফটকগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। ছিলো না কোন তল্লাশির ব্যতিব্যস্ততা। দুই, চারজন আসলেও তারা প্রকাশনা ও স্টল সংক্রান্ত লোকজন হওয়ায় তাদের আর নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে না। রোদ বাঁচিয়ে মেলা প্রান্তরে চক্কর দিতে দেখা গেছে কিছু গণমাধ্যম কর্মীদের। পর্দা নামার এক দিন আগেই যেন বাজতে শুরু করেছে ভাঙনের সুর।

নানাভাবে সমালোচিত এবারের বইমেলায় রোববার (১১ এপ্রিল) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেকটি স্টলে অলস দুপুর পার করছেন স্টল সংশ্লিষ্ট লোকজন ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা। অনেক স্টলেই করোনা ভীতি ভুলে গোল হয়ে বসে খোশ গল্প করতে দেখা গেছে বিক্রয় প্রতিনিধিদের। কেউ কেউ শুনশান দুপুরে নিরবতায় আপন মনে বই পড়ছিলেন স্টলে বসেই।

প্রাণহীন বইমেলা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বর্ধিত অংশে সুলেখা প্রকাশনীর স্টলে গিয়ে দেখা যায় স্টল মালিক কামরুল হাসান আপন মনে বই পড়ছেন। এবারের মেলা নিয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এবার নিয়ম রক্ষা ও গুটিকয়েক প্রকাশকের ব্যবসা রক্ষার বইমেলা হলো। এবারে মেলাটা না হলেই ভালো হতো বোধ করি। করোনা সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হওয়া ছাড়া এই মেলার কোন অবদান দেখছি না।

বেহুলা বাংলা প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি নায়না আফসিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আগামীকাল মেলা শেষ হবে অথচ আজকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো এখনো কোন পাঠক আসেনি স্টলে। এ থেকেই বোঝা যায় মেলা কেমন হচ্ছে। আমি টানা সাত বছর বইমেলার স্টলে বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করে আসছি। বিগত বছরগুলোতে মেলার শেষ সপ্তাহের যে ব্যস্ততা থাকে তার প্রায় সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র এবার মেলা শেষ হওয়ার আগের দিন এসেও।

স্টলগুলোতে নেই কোন পাঠক

বাংলা প্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি নাঈমুল হাসান বলেন, এতটা প্রাণহীন বইমেলা আগে কখনো দেখিনি। সারা মেলা খুঁজলে আপনি পাঠক সংখ্যা হিসেব করে বলে দিতে পারবেন। নানা কারণে সমালোচিত এই মেলা এবার সত্যিই উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।

যে কয়জন পাঠক মেলায় এসেছেন তারা তীব্র রোদে কাহিল হয়ে বেশির ভাগই ছায়া খুঁজে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। মেলার লেখক বলছি মঞ্চে গিয়ে দেখা যায় রোদে ক্লান্ত পাঠকরা বিশ্রাম নিচ্ছেন। সেখানে কথা হয় তানজিল ও মুনের সাথে। তারা জানান, শেষ সময়ে মেলায় এসেছেন নিজেদের পছন্দের বই কিনতে এবং লকডাউনের আগে শেষ ঘোরাফেরা করতে। কিন্তু কিছুক্ষণ হাঁটার পরেই তীব্র রোদে ক্লান্ত হয়ে ছায়া খুঁজতে এখানে অবস্থান।

অলস সময় কাটাচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা

কি বই কিনেছেন জানতে চাইলে মুন বলেন, ড্যাডি সমগ্র ও আসতাগফিরুল্লাহ নামে দুটি বই কিনেছি। আর ছোট বোনের জন্য কিছু কমিকস বুক কিনব।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় চলা বইমেলা এবার নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই আগামীকাল সোমবার (১২ এপ্রিল) শেষ হচ্ছে। তবে বেলা ১২টায় খুলে বইমেলা চলছে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর